একবার ভাবলাম কাটব না আর দাড়ি
ছাটাব না আর মাথার চুল,
অন্তর বেদনা ঝেরে ছেড়ে যাব বাড়ি
গৃহত্যাগি হয়ে যাব আদর্শ বাউল।

দুঃখ-জ্বালা-মায়ামোহ, ভিড় করি আছে গৃহ
এরচে’ বনবাসে শান্তি আছে বড়।
তাই আর নয় গৃহবাস, ছিঁড়তে এ রুদ্ধশ্বাস
বাউল হয়ে পাড়ি দেব সংসার সাগর।

যেমনি ভাবা, তেমনি ভাবের করি আয়োজন,
বাউলের উৎকৃষ্ট সাজ-সজ্জা লাগি।
সংসার মাঝে আর ক্ষণিক না টিকে মন
বাউলের ভাব প্রাণে উঠিছে যে জাগি।

আলুথালু দাড়ি-গোঁফ, যেন সে বিশ্রী রূপ
রূপ দেখি কেহ চোখ ফেরাতে না চায়।
গেরুয়া বসন পড়ি, কাষ্ঠমালা গলে ধরি
এ না হলে চরাচরে বাউল সাজা দায়।

এমনি বাউল বেসে একদিন রাতারাতি
গৃহছাড়ি নামি এসে পথে।
গৃহ বন্ধন টুটি, সুদূরের ডাকে মাতি—
ছুটে চলি অনন্ত-অজানাতে।

মায়ামোহ নয় আর, এড়াতে এ কঠিন ভার
অন্তর জুড়ে আছে ক্ষুধার আবেশ।
মুখে ধরি ইষ্টনাম, জুড়াতে এ মনষ্কাম
নিরুদ্দেশে গিয়ে তাই গড়ি উদ্দেশ।

ঘুরে ফিরি বনতল, মাঠে ও মঠে
বাউল বেশে; অন্তর্জ্বালা করিবারে নাশ।
কিন্তু একি দুর্ভোগ হায় বাউল ললাটে,
প্রকৃতির রূদ্ররূপ তারে করে পরিহাস!

রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বহে, কেমনে তা প্রাণে সহে
আরো আছে বিষাক্ত মশার দংশন;
শীতে করে অত্যাচার, অনাহারে হাড্ডিসার
এর চেয়ে ঢের ভালো সংসার ভুবন।

কেঁদে উঠে বাউল প্রাণ পুনঃ সংসার মায়ায়
তাই জাপটে এসে ধরি ফের সংসারের কোল।
সংসার ধর্মোপরি ধর্ম কি আর হয়?
বাউল সাজতে গিয়ে ভাঙল মনের ভুল।