ছড়া
ছড়া হচ্ছে সাহিত্যের একটি প্রচীন শাখা , মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্যই হল ছড়া । এটি সাহিত্যের একটি প্রচীন শাখা । যিনি ছড়া লেখেন তাকে ছড়াকার বলা হয় । ‘ছেলেভুলানো ছড়া’, ‘ঘুম পাড়ানি ছড়া’ ইত্যাদি ছড়া দীর্ঘকাল যাবৎ প্রচলিত । প্রাচীনকাল থেকে ইংরেজি ভাষায় ননসেন্স রাইম প্রচলিত রয়েছে কারণ ছড়ার প্রধান দাবি ধ্বনিময়তা ও সুরঝংকার, অর্থময়তা নয় ।
ছড়া শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হল রাইম ( Rhyme ) , শব্দটি এসেছে পুরাতন ফরাসি রাইম শব্দ থেকে, যা হতে পারে ওল্ড ফ্র্যাঙ্কিশ রাম থেকে, যা একটি জার্মান শব্দ যার অর্থ "সিরিজ, ক্রম" পুরাতন ইংরেজিতে সত্যায়িত (পুরাতন ইংরেজী রম যার অর্থ "গণনা, সিরিজ, সংখ্যা") এবং ওল্ড হাই জার্মান রাম , শেষ পর্যন্ত পুরাতন আইরিশ রাম, গ্রিক অ্যারিথমোস "সংখ্যা" এর সাথে পরিচিত। বিকল্পভাবে, পুরাতন ফরাসি শব্দ গ্রীক (রিদমস, রিদম) থেকে ল্যাটিন রিদমাস থেকে উদ্ভূত হতে পারে।
প্রাচীন যুগে ‘ছড়া’ সাহিত্যের মর্যাদা না পেলেও বর্তমানে সে তার প্রাপ্য সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । যদিও এখনও অনেকেই ছড়াসাহিত্যকে শিশুসাহিত্যেরই একটি শাখা মনে করেন কিংবা সাহিত্যের মূলধারায় ছড়াকে স্বীকৃতি দিতে চান না। কেউ কেউ ছড়াকে কবিতা বলার পাশাপাশি আধুনিক গদ্যকবিতার যুগে এসব মিলযুক্ত কবিতা (অন্ত্যমিল) বা পদ্যের অবস্থানকে হালকা করে দেখেন । তবে পদ্য (কবিতা) এবং ছড়ার মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে- পদ্যের বক্তব্য সহজবোধ্য ও স্পষ্ট কিন্তু ছড়ায় রহস্যময়তা থাকে।
আশুতোষ দেব সংকলিত দেব সাহিত্য কুটির প্রাঃ লিঃ কতৃক সংকলিত স্টুডেন্ডস ফেভারিট ডিকশনারী ইংরেজী টু বাংলা তে রাইম এর অর্থ করা হয়েছে শব্দের বা কবিতার চরণের ধ্বনির বা শব্দের মিল মিত্রাক্ষর কবিতা ।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এ এস হর্নবি সংকলিত অকসফোর্ড এডভান্স লার্নারস ডিকশনারি অব কারেন্ট ইংলিশ এ রাইম এর অর্থ করা হয়েছে ' স্বল্প পরিসরে ছোট্ট কবিতা পদ্য যার এক চরণের শেষের শব্দ বা শব্দাংশের ধ্বনির আরেক চরণের শেষের শব্দ বা শব্দাংশের ধ্বনির মিল অর্থাৎ অন্ত্যমিল হয় । ' উদাহরণ স্বরূপ নার্সারী রাইম বা শিশুতোষ ছড়া এর কথা বলা হয়েছে
রায় রাধিকা নাথ বোস এবং স্টার্লিং রচিত রেটরিক এন্ড প্রোসোডি বইতে ছড়ার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ' চরণের সমাপনী শব্দংশে সমজাতীয় ধ্বনির পুনরাবৃত্তিকেই ছড়া বলা হয় ।'
বাংলা ছড়ার কথা
বঙ্গীয় শব্দকোষ অনুসারে ছড়া হল লৌকিক বিষয় নিয়ে লেখা গ্রাম্য কবিতা , ছড়া গুলো মুখে মুখে আবৃত্তির জন্য রচনা করা হয় , অনেক সময় সুর করেও ছড়া আবৃত্তি করা হয় । ছড়া মূলত লেখা হয় শিশুদের জন্য। ইংরেজী ভাষায় ছড়াকে বলা হয় ননসেন্স রাইম , ননসেন্স বলার কারন ছন্দের প্রধান বিষয় ছিল ধ্বণিময়তা ও সুরঝংকার , অর্থময়তা নয় ; কিন্তু এই ধারনা বর্তমানে গ্রহনযোগ্য নয় কারন আধুনিক সাহিত্যে ছড়াকে কবিতা হিসাবে গন্য করা হয় , ছড়া এখন ধ্বণিময়তা ও সুরঝংকারের সাথে অর্থময়তাকে ও তুলে ধরে ,বর্তমানে শিশুতোষ ছড়ার পাশপাশি প্রেম বিরহ,জীবনবোধ,মানবতাবাদ ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও ছড়া কবিতা লেখা হচ্ছে । সাধারণত ছড়া হয় হাস্য রসাত্মক, শিক্ষামূলক, ব্যঙ্গার্থক।
সংস্কৃত ছটা থেকে প্রাকৃত ছড়া এবং প্রাকৃত ছড়া থেকে বাংলা ছড়ার উৎপত্তি। এর অর্থ পরম্পরা, গ্রাম্যকবিতা ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে ছড়া বলতে বোঝানো হত মুখে মুখে রচিত এক বিশিষ্ট প্রকরণকে যার সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে মানব জীবনের সাথে সংযোগ থাকত, আর যার রচনাশৈলীতে থাকত ছন্দ ও ধ্বনিময়তার সুরেলা বিস্তার।
ছট্ শব্দ থেকে ছড়া শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করা হয় । ছট্ শব্দের অর্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা । কিন্তু ছড়া মোটেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে না বরং তা ধানের ছড়ার মতই গুচ্ছ বন্ধনে বাঁধা থাকে। ছড়ার সংজ্ঞা নির্ণয় করা কঠিন।শিশুদের কাছে সুর করে ছন্দোবদ্ধ পদ বলাই ছড়া নয়।ছড়া হলো সমষ্টিগত লোকমনের সৃষ্টি,সাধারণ মানুষের আবেগ ,কল্পনা,সপ্ন,স্মৃতি,অভিজ্ঞতার কথা ভাষার ছন্দে,বন্ধনে ক্ষুদ্র অবয়বে যে বৈচিত্র্যময় রূপ লাভ করেছে তাই ছড়া ।
‘ছড়া শব্দটির বুৎপত্তি ও আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘ছড়া শব্দটির বুৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত পার্থক্য বিদ্যমান। কারো মতে শব্দটি সংস্কৃতমূল, কারো মতে দেশজ। হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় ‘ছড়া’ শব্দের বুৎপত্তি নির্ণয় করেছেন এভাবে- সং. ছটা> প্রা. ছড়া> প্রা. ম. ছিটা> ছড়া
রাজশেখর বসু, যোগেশচন্দ্র রায় প্রমুখ পন্ডিত এই মতের সমর্থক। অপরদিকে নগেন্দ্রনাথ বসুর মতে ‘ছড়া’ শব্দটি দেশজ। ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’-এ দেখা যায়, পাবনা অঞ্চলের উপ ভাষায় ছড়া শব্দটি বর্তমানেও প্রচলিত, যদিও এখানে ছড়া শব্দের অর্থ ‘শিকেলি’।
উনবিংশ শতাব্দীর আগে যে ছড়া শব্দটি বর্তমান অর্থ বহন করত না, তার সাক্ষ্য রয়েছে সুকুমার সেনের মন্তব্যেও। অনেক অভিধান প্রণেতাও ‘ছড়া’ অর্থ করেছেন গ্রাম্য কবির কবিতা, ছন্দোবদ্ধ উক্তি, শ্লোক পরস্পরা ইত্যাদি। স্পষ্টতই ছড়া শব্দটি ইতোপূবে যে সকল অথে ব্যবহৃত হতো, আমাদের বর্তমান ধারনার সঙ্গে তার পরিপূর্ণ সংগতি নেই। অন্য কথায় শব্দটির অর্থগত বিবর্তন ঘটেছে আধুনিক যুগে।
রবীন্দ্রনাথ বলেন --" আমি ছড়াকে মেঘের সহিত তুলনা করিয়াছি। উভয়েই পরিবর্তনশীল, বিবিধ বর্ণে রঞ্জিত, বায়ু স্রোতে যদৃচ্ছাভাসমান। দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক। ছড়াও কলাবিচার-শাস্ত্রের বাহির, মেঘ-বিজ্ঞানও শাস্ত্র নিয়মের মধ্যে ভালো করিয়া ধরা দেয় নাই। অথচ জড়জগতে এবং মানবজগতে এই দুই উচ্ছৃঙ্খল অদ্ভুত পদার্থ চিরকাল মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করিয়া আসিতেছে। মেঘ বারিধারায় নামিয়া আসিয়া শিশু-শস্যকে প্রাণদান করিতেছে এবং ছড়াগুলিও স্নেহরসে বিগলিত হইয়া কল্পনাবৃষ্টিতে শিশু-হৃদয়কে উর্বর করিয়া তুলিতেছে।’ (রর-৩য় খ.,৭৬৯পৃ.)
অন্নদাশঙ্কর রায় ছড়া সম্পর্কে বলছেন- ‘ছড়া যদি কৃত্রিম হয় তবে তা ছড়াই নয়, তা হালকা চালের পদ্য। তাতে বাহাদুরি থাকতে পারে, কারিগরি থাকতে পারে, কিন্তু তা আবহমানকাল প্রচলিত খাঁটি দেশজ ছড়ার সঙ্গে মিশ খায় না। মিশ খাওয়ানোটাই আমার লক্ষ্য। যদি লক্ষ্যভেদ করতে পারি তবেই আমার ছড়া মিশ খাবে, নয়তো নয়।’
বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘আধুনিক কবির হাতে ছড়া বেরতে পারে শুধু এই শর্তে যে, তিনি বক্তব্য কিছু দেবেন, অথচ সেটুকুর বেশী দেবেন না যেটুকু এই হালকা ছোট চটুল শরীরে ধরে যায়। একেবারে সারাংশ কিছু না-থাকলে তা নেহাতই ছন্দের টুংটাং হয়ে পড়ে, মাত্রা একটু বেশী হলেও আর ছড়া থাকে না।’
অতএব সার্বিকভাবে বলা যায় যে , " ছন্দ আর অন্ত্যমিলের প্রতি যত্নশীল হয়ে হালকা চালে সহজ শব্দের সমন্বয় সাধন করে কোনো বিষয়কে প্রকাশ করবার জন্যে যে পদ বা পদ সমষ্টির সৃষ্টি করা হয় তাকে ছড়া বলে।"
ছড়ার বিশিষ্টতা: লোকসাহিত্যের প্রথম সৃষ্টি ছড়া। ছড়ার মধ্যে সুর থাকলেও ছড়া কখনোই লাোকসংগীত নয়। ছড়ার সুরে লোকসংগীতের সুরের মতো বৈচিত্র্য থাকে না। পক্ষান্তরে, কোনো একটি বিশেষ ভাবকে অবলম্বন করে লোকসংগীত রচিত হয়। কিন্তু ছড়ায় এরকম কোনো বিশেষ ভাবের সন্ধান পাওয়া যায় না। গীতিকার মতো কাহিনি নয়, ছড়ায় যা থাকে তা হল কথার ছবি আঁকার চেষ্টা। আবার প্রবাদের মতো ব্যঙ্গপ্রাধান্যও ছড়ায় নেই। সমাজের নানা অসংগতিতে ব্যঙ্গের চাবুক কযানোই প্রবাদের লক্ষ্য। অন্যদিকে শিশুমনের সঙ্গে ছড়ার যোগ থাকায় তার মধ্যে স্নেহ এবং আবেগের প্রকাশ ঘটে। সমালোচনা কিংবা আক্রমণহীন প্রশান্তিই ছড়ার প্রাণ। আবার ছড়ার সঙ্গে যখন হাততালি দিয়ে শিশুকে দোলানো নাচানো হয়, তখন শিশুর মধ্যে যে শারীরিক অনুভবের সঞ্চার হয়, তার সামাজিক তাৎপর্য অসীম। এভাবেই লোকসাহিত্যে ছড়াগুলি বিষয়, ব্যঞ্জনা এবং প্রয়োগের দিক থেকে বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে। ছড়ার প্রধান বৈশিষ্ট হল -
১ সংক্ষিপ্ত রূপ
২ প্রথাগত লোকজ বিষয়
৩ গীতিময় গতিশীল ছন্দ
৪ ভাষার সরলতা
৫ অন্ত্যমিল বা অনুপ্রাস
অন্ত্যমিলনাত্মক ধ্বনি বা সিলেবলের সংখা অনুযায়ী ছড়া কবিতা তিন প্রকার, যথা
১, পুং অন্ত্যমিল বা একক অন্ত্যমিল ছড়া - চরণের শেষে একটি সিলেবল মুখ্ / সুখ্
২ স্ত্রী অন্ত্যমিল বা দ্বৈত অন্ত্যমিল ছড়া- চরণের শেষে দুইট সিলেবল মন দে / গন্ধে
৩ ত্রৈয়ী অন্ত্যমিল ছড়া- চরণের শেষে তিনটি সিলেবল কাশ বনে / ঘাস বনে
অন্ত্যমিলান্ত ধ্বনির গঠন অনুযায়ী ছড়া দুই প্রকার ,
১. স্বাভাবিক / পূর্ণ ছড়া কাশ বনে / ঘাস বনে
২. অস্বাভাবিক / অপূর্ণ ছড়া তুমি কার / সফিকের
আমরা জানি বাংলা কবিতায় তিন প্রকার ছন্দ ব্যবহৃত হয় , যথা
১.স্বরবৃত্ত ২.মাত্রাবৃত্ত ৩.অক্ষরবৃত্ত
বেশীর ভাগ ছড়া কবিতায় স্বরবৃত্ত ছন্দ ব্যবহার করা হয় , বিশেষ করে শিশুতোষ ও রঙ্গ ব্যঙ্গাত্মক ছড়া কবিতায় স্বরবৃত্ত ছন্দ ব্যবহার করতে ছড়াকারগন স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন , তবে অন্য দুটি ছন্দে ও আজকাল প্রচুর ছড়া কবিতা লেখা হচ্ছে ।
বাংলা ছড়ার ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যে ছড়ার রয়েছে প্রায় দেড়হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। সাহিত্যের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে ছড়ার বিকাশ ও উৎকর্ষ আমাদের বারবার চোখে পড়ছে। আদিতে সাহিত্য রচিত হতো মুখে মুখে এবং ছড়াই ছিল সাহিত্যের প্রথম শাখা বা সৃষ্টি। সাহিত্য লেখ্যরূপে পাওয়ার পূর্বে ছড়ায় মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতো। লোকসমাজে ছড়াই ছিল ভাবপ্রকাশের প্রধান মাধ্যম। গদ্যসাহিত্যের আগে তাই কেউ কেউ ছড়াকে লৌকিক সাহিত্য বলে বিবেচিত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন—'ছড়া শিশুদের খেলামেলার কাব্য'। আধুনিক সাহিত্যিকগণ এসব অভিধান মানতে নারাজ। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন—গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও নাটকের মতো ছড়াও সাহিত্যের একটি প্রয়োজনীয় শাখা। এই শাখাটি অন্যান্য শাখার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং এর গ্রহণযোগ্যতা সহজেই ধরা পড়ে।
প্রকার
ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য তার 'লোক সাহিত্য' গ্রন্থে ছড়াকে লৌকিক ছড়া, সাহিত্যিক ছড়া ও আধুনিক ছড়া—এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। এছাড়াও ছড়াকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা হয়। যেমন- শিশুতোষ ছড়া, রাজনৈতিক ছড়া, ছড়ার ছন্দাশ্রিত কিশোর কবিতা প্রভৃতি। এর মধ্যে শিশুতোষ ছড়া তৈরি হয় কেবলমাত্র শিশু-মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে।
বাংলাসাহিত্যের আদিসৃষ্টি বা নিদর্শন চর্যাগীতির প্রথম পদটি ছড়ার মূলছন্দ স্বরবৃত্তে লেখা এবং এটি ছন্দ-মিলে রচিত। এই পদটি বাংলাসাহিত্যের আদিছড়া বললেও ভুল হবে না। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যোগীন্দ্রনাথ সরকার লৌকিক ছড়াকে প্রথম গ্রন্থভুক্ত করেন এবং গ্রন্থটির নাম দেন 'খুকুমণির ছড়া'। এই গ্রন্থটির ভূমিকায় সর্বপ্রথম রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী ছড়াকে সাহিত্যের একটি অন্যতম শাখা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থে সুকুমার রায়ের ছড়া সংকলিত করে ছড়ার গ্রহণযোগ্যতাকে মজবুত করেন। ছড়াপ্রসঙ্গে কবিগুরু বলেছেন, ‘সুদূর কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই কাব্য (ছড়া) যারা আউড়িয়েছে এবং যারা শুনেছে তারা অর্থেও অতীত রস পেয়েছে। ছন্দতে ছবিতে মিলে একটা মোহ এনেছে তাদের মধ্যে। সেইজন্য অনেক নামজাদা কবিতার চেয়ে এর (ছড়া) আয়ু বেড়ে চলেছে।’ একসময় ছড়াকে মনে করা হতো শুধুই শিশুসাহিত্য। তবে এখন আর তা মনে করা হয় না, বাংলাসাহিত্যে ছড়া তার নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে।
‘বাংলার ঐতিহ্যাশ্রয়ী ছড়াগুলি কালের বিচারে প্রাচীন। এ অবস্থায় সব ভাষা ছন্দই গানের সুর ও নাচের তালের সঙ্গে বিশেষ ভাবে যুক্ত, পরে ভাষার ক্রমবিকাশ ছন্দকে নানা রূপ দেয়, আর এ ক্রমবিকাশের সূত্রপাত ঘটে লেখন পদ্ধতি ও ছাপাখানার ক্রমবিকাশকে কেন্দ্র করে। কিন্তু মানুষ দীর্ঘদিন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছন্দকে ভুলতে পারেনি। একালে স্বজ্ঞানে সাহিত্যের অঙ্গরূপে অনেকেই ছড়া রচনা করে থাকেন। এগুলি সচেতন সাহিত্য সৃষ্টি, অতএব লোকসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং প্রাচীন ছড়ার সঙ্গে একই মাটির হাঁড়িতে রাখা সঙ্গত হবে না। শব্দচয়নের দিক দিয়েও একাল-সেকাল দুই কালের ছড়ার পার্থক্য লক্ষণীয়। বাংলার বিপুল ছড়ার ভাণ্ডার প্রথমত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে :
১। লোকসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত গ্রাম্য ছড়
২। পরিশীলিত সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত নাগরিক ছড়া’
[সংগৃহীত তথ্য : বাংলার ছড়া ছড়ার বাংলা, সম্পাদনা : সৌগত চট্টোপাধ্যায়]
ছড়া লৌকিকতার গণ্ডি ভেঙে লাবণ্যে পরিপূর্ণতা পেয়েছিল রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই। ১৩০১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ প্রবন্ধটি ‘সাধনা’ পত্রিকায় আশ্বিন-কার্ত্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: ‘বাংলা ভাষায় ছেলে ভুলাইবার জন্য যে সকল মেয়েলি ছড়া প্রচলিত আছে, কিছু কাল হইতে আমি তাহা সংগ্রহ করিতে প্রবৃত্ত ছিলাম। আমাদের ভাষা এবং সমাজের ইতিহাস-নির্ণয়ের পক্ষে সেই ছড়াগুলির বিশেষ মূল্য থাকিতে পারে, কিন্তু তাহাদের মধ্যে যে একটি সহজ স্বাভাবিক কাব্যরস আছে সেইটিই আমার নিকট অধিকতর আদরণীয় বোধ হইয়াছিল।’
রবীন্দ্রনাথ ছড়াকে আত্মস্থ করেছেন শিল্পবোধের জায়গা থেকে। তার প্রকাশ এই উদ্ধৃতির মধ্যে পাওয়া যায়: ‘ছড়ার মধ্যে একটা চিরত্ব আছে। কোনোটির কোনো কালে কোনো রচয়িতা ছিল বলিয়া পরিচয়মাত্র নাই এবং কোন্ তারিখে কোনটা রচিত হইয়াছিল এমন প্রশ্নও কাহারও মনে উদয় হয় না। এই স্বাভাবিক চিরত্বগুণে ইহারা আজ রচিত হইলেও পুরাতন এবং সহস্র বৎসর পূর্বে রচিত হইলেও নূতন।’
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে যোগীন্দ্রনাথ সরকার ‘খুকুমণির ছড়া’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ সংকলিত করেন। সেই গ্রন্থের ভূমিকায় ছড়াকে প্রথমবারের মতো সাহিত্যের বিষয় বলে উল্লেখ করেন আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। লৌকিক ছড়াপাঠকে রবীন্দ্রনাথ শৈশবের মেঘদূত হিসেবেই চিত্রিত করেছেন। আর এই বোধটাকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন শিশুদের মাঝে। মেয়েলি ছড়া এবং ছেলেভুলানো ছড়া নামে ছড়াকে দুই ভাগে চিহ্নিত করে রবীন্দ্রনাথ ছড়ার বিষয় হিসেবে তুলে এনেছেন জগত সংসারের নানান বিষয়। ১২৯২ বঙ্গাব্দে ‘বালক’ পত্রিকায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ ছড়াটি রবীন্দ্রনাথের হাতে আধুনিক চেহারা পেয়েছে। এই ছড়াটি রবীন্দ্রনাথ নিজে সংগ্রহ করেন এবং সে বিষয়ে অনবদ্য ভাষ্য রচনা করেন। ছড়াটি হলো-
‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান।
শিবঠাকুরের বিয়ে হ’ল তিন কন্যা দান ।।
এক কন্যে রাঁধেন বাড়েন, এক কন্যে খান ,
এক কন্যে না খেয়ে বাপের বাড়ি যান ।।
উল্লেখিত ছড়াটির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান। এই ছড়াটি বাল্যকালে আমার নিকট মোহমন্ত্রের মতো ছিল এবং সেই মোহ এখনো আমি ভুলিতে পারি নাই। আমি আমার সেই মনের মুগ্ধ অবস্থা স্মরণ করিয়া না দেখিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারিব না ছড়ার মাধুর্য এবং উপযোগিতা কী। বুঝিতে পারিব না, কেন এত মহাকাব্য এবং খণ্ডকাব্য, এত তত্ত্বকণা এবং নীতিপ্রচার মানবের এত প্রাণপণ প্রযত্ন, এত গলদধর্ম ব্যায়াম প্রতিদিন ব্যর্থ এবং বিস্মৃত হইতেছে, অথচ এই-সকল অসংগত অর্থহীন যদৃচ্ছাকৃত শ্লোকগুলি লোকস্মৃতিতে চিরকাল প্রবাহিত হইয়া আসিতেছে।’
১৯৪০ পর্যন্ত প্রচলিত ছড়ার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে শিশুদের নৈতিক শিক্ষাদানের বিষয়। আর এমনই সময় সুকুমার রায়ের আবির্ভাব ছড়ার আকাশে নতুন সূর্য হয়ে উদিত হয়। শব্দ চয়নে, ছন্দে, ব্যঞ্জনায় এবং বিষয় বৈচিত্র্যে সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যে ছড়ার মাধ্যমকে নতুন মাত্রায় অলংকৃত করেন। সুকুমার রায়ের ধারাবাহিকতায় ছড়ার মধ্য দিয়ে যুক্ত হতে থাকে সমকালীন বিষয়-আশয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, প্রতিবাদ, ক্ষোভ, দুর্ভিক্ষ- এসবের ছবি ছড়ার মধ্য দিয়ে লিখিত হতে থাকে। এক সময় যে ছড়া মুখে মুখে প্রচলিত ছিল সেই ছড়া নতুন আবরণে, নতুন বক্তব্যে, নতুন ছন্দ-তালে প্রচলিত দেয়াল ভেঙে লিখিত আকারে, মুদ্রিত আকারে প্রকাশ পেতে থাকল সাহিত্যের পাতায় পাতায়। ছড়ার এক নতুন বিনির্মাণ শুরু হলো। আর এই বিনির্মাণের পুরোধা হয়ে এলেন বাংলা ছড়ার আধুনিক রূপকার অন্নদাশঙ্কর রায়।
তেলের শিশি ভাঙলো বলে
খুকুর প’রে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙে ভাগ করো!
তার বেলা?
আধুনিক ছড়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়ার এই পঙ্ক্তিমালায়। লোকগবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকী আধুনিক ছড়ার আঙ্গিক প্রসঙ্গে লিখলেন- ‘ছড়া শুধু সমাজ সংসার নিয়ে বলে না, দেশ ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বলে। ... ছড়া কালের সাথে অনবরত তার রূপ বদলায়।
সেই থেকে ছড়া নিঃসন্দেহে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। বদলেছে উপস্থাপন রীতি। বদলেছে বিষয়-ভাবনা ছন্দ। বদলেছে চিত্রকল্প। বাংলা সাহিত্যে ছড়ার এই বদলে যাওয়া রূপের কারিগররা হলেন কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, ফররুখ আহমদ, বন্দে আলী মিয়া, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, আহসান হাবীব, হোসনে আরা, হাবিবুর রহমান, সরদার জয়েনউদ্দীন। সময়ের হাত ধরে বাস্তবতার নিরিখে ছড়া নতুন মাত্রায় বিকশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে গত চার দশকের ছড়ায় গুণগত বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। ষাটের দশকে ছড়ায় প্রকাশ পেয়েছে রবীন্দ্রভাবনার উত্তরাধিকার। যেখানে প্রভাব পড়েছে লোকজধারা। সত্তরের দশকে ছড়ায় দেখা গেছে অন্তঃমিলগত নতুন ছন্দ খোঁজার প্রবণতা এবং আশির দশকে সমসাময়িক ঘটনার আলোকে জীবনবোধের ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গি। নব্বইয়ে ছড়ার মাঝে পাওয়া গেছে রাজনৈতিক ধারার স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ নির্মাণ কৌশল। সেই সঙ্গে বিষয়বৈচিত্র্য।
দশকওয়ারি বিবেচনায় ছড়া-চর্চার ক্ষেত্রে সৌন্দর্য সচেতন রীতির প্রকাশ ঘটলেও মূলত সত্তরের দশকে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বাক্ষর স্পষ্ট হয়েছে ছড়াকারদের রচনায়। যার ধারাবাহিকতা আশির দশকেও বিদ্যমান। তবে এ সময়টাতে কখনো শব্দ নিয়ে, কখনো বা আঙ্গিক নিয়ে, কখনো বা বিষয়বৈচিত্র্য নিয়ে ছড়াকাররা উজ্জ্বলতম প্রকাশভঙ্গি দেখিয়েছেন। আর যে কারণে কেউ কেউ পাঠকদের কাছে চিহ্নিত হয়েছেন বুদ্ধিবৃত্তিক ছড়া রচনার গুণে।
শিশুসাহিত্যের অনন্যধারায় ছড়া অনেক বড় প্রাণশক্তি। যা শিশুদের আকর্ষণ করে, বড়দেরও করে। ‘আর ক’টা দিন সবুর কর রসুন বুনেছি’- এটা রাজনৈতিক ছড়া। কিংবা ‘আয়রে খোকন ঘরে আয়, দুধমাখা ভাত কাকে খায়’ অথবা ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর প’রে রাগ করো’- এর চেয়ে সমাজের প্রকৃত চিত্র আর কী হতে পারে। তখনকার সময়ের কবিরা যদি এটা রচনা করতে পারেন যা শিশুপাঠ্য হয়ে উঠল, এখন কেন সমভাবনার ছড়া রচিত হবে না? এ কথা সত্য বাংলা শিশুসাহিত্য যখন আক্ষরিক অর্থে অবস্থান তৈরি করল, সে সময়কার শিশু আর আজকের শিশু এক নয়। সে সময়কার পাঠক রুচি এবং আজকের পাঠক রুচিও এক নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে গত দুই-তিন দশকের মধ্যে তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের চাওয়া-পাওয়া পাল্টে গেছে। এখনকার দিনের শিশু-কিশোরদের কাছে বই একমাত্র অবসর যাপনের সঙ্গী নয়। টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সবকিছু হাতের নাগালে। তো এই চেনা জায়গাগুলো ছোটদের রচনায় প্রকাশ করা সময় উপযোগী। শুধু তাই নয়, রাজনীতির প্রসঙ্গ প্রতিকী উপমায় তুলে আনা দোষের কিছু নয়। সময়ের বাস্তবতায় প্রযুক্তি নির্ভর যে জীবনযাপন আজকের শিশু এবং বড়রা উপভোগ করছে তার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে শিশুসাহিত্য রচিত হোক, এটাই প্রত্যাশা।
একজন কবি যেমন ফিরে যান তার নিজস্ব শেকড়ে, মাটির বন্ধনে, যেখান থেকে তুলে নেন ঐতিহ্যের গল্প, ঠিক একজন ছড়াকারও তার সময়ের কাছে, সমাজের মানুষের কাছে, ঋণী হয়ে বারবার ফিরে যান তার নিজস্ব শেকড়ে, সেই মাটির বন্ধনে। এখন প্রশ্ন হলো ছড়া কার জন্য রচিত? কার কাছে নিবেদন করবো ছড়া? ছোটদের কাছে নাকি বড়োদের কাছে? শিশুসাহিত্য বলে ছড়াকে কবিতা থেকে পাশ কাটিয়ে দিতে চাইছেন। এমনকি ছড়ার মধ্যে সমাজ জাগরণের যে বক্তব্য থাকে, সে বক্তব্যকেও শিশুসাহিত্য হিসেবে আড়াল করে দিতে চাইছেন। এই পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে চাই। তিনি শিশুসাহিত্য বলতে ছেলেভুলানো লেখাকে মানতেন না। তাই তো রবীন্দ্রনাথ লেখেন: ‘এখনকার দিনে শিশুদের জন্য সাহিত্য রসে প্রভূত পরিমাণে জল মিশাইয়া যে সকল ছেলেভুলানো লেখা হয় তাহাতে শিশুদিগকে নিতান্তই শিশু বলিয়া মনে করা হয়। তাহাদিগকে মানুষ বলিয়া গণ্য করা হয় না। ছেলেরা যে বই পড়িবে তাহার কিছু বুঝিবে এবং কিছু বুঝিবে না, এইরূপ বিধান থাকা চাই। আমরা ছেলেবেলায় একধার হইতে বই পড়িয়া যাইতাম; যাহা বুঝিতাম এবং যাহা বুঝিতাম না দু-ই আমাদের মনের উপর কাজ করিয়া যাইত।
‘বালক’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ স্বীয় রচনার গৌরব কাহিনী যেমন লিখেছিলেন তেমনি লিখেছিলেন শিশু-কিশোরদের জন্য স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার আহ্বানপূর্ণ লেখা।
“বাঙ্গালা দেশের মাঝখানে দাঁড়াইয়া একবার কাঁদিয়া সকলকে ডাকিতে ইচ্ছা করে- বলিতে ইচ্ছা করে, ‘ভাই সকল, আপনার ভাষায় একবার সকলে মিলিয়া গান কর। বহু বৎসর নীরব থাকিয়া বঙ্গদেশের প্রাণ কাঁদিয়া উঠিয়াছে। তাহাকে আপনার ভাষায় একবার আপনার কথা বলিতে দাও। বাঙ্গলা ভাষায় একবার সকলে মিলিয়া মা বলিয়া ডাক। কেরানীগিরির ভাষা আপিসের। দরাজের মধ্যে বন্ধ রাখিয়া মাতৃস্তন ধারায় পুষ্ট মাতৃভাষায় জগতের বিচিত্র সঙ্গীতে যোগ দাও। বাঙ্গালী কণ্ঠের সহিত মিলিয়া বিশ্বসঙ্গীত মধুরতর হইয়া উঠিবে।”
শিশু চেতনাকে জাগিয়ে দিতে রবীন্দ্রনাথ আরো লিখলেন আহ্বান গীত । প্রকাশ পেল ‘বালক’ পত্রিকাতেই ।
সমাজের এই পালাবদলে সাহিত্যে ভাষা ও ভাবনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তিত রূপ শিশুসাহিত্যেও ঝলকে উঠুক নতুন ভাষায়, নতুন ভাবনায়, নতুন চিত্রকল্পে।
আর এদের ওপর ভর করে শিশুসাহিত্যের ভবিষ্যৎ পাঠককে নতুন পথ দেখানোর আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। আনতে হবে জাদুবাস্তবতার নতুন অ্যাডভেঞ্চার। এসবের মধ্যে থাকবে দেশপ্রেমের কথা। থাকবে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মেধাবিকাশের কল্পনাশক্তি, মানবিকতা আর সৃজনশীলতার অপূর্ব সমন্বয়ে শিষ্টাচারের রূপকল্প। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে অহংকারটি সত্য ও সাহসের প্রেরণা তার নাম মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাসের কথা শুধু ছড়ার ছন্দে নয়, শিশুসাহিত্যিকরা ছড়িয়ে দিক গল্পে-ছড়ায়, গদ্যে-পদ্যে। আমি মনে করি, প্রতিটি ছড়ায় জীবন-দর্শন থাকতে হবে। দেশ-মাটি-প্রকৃতি আর মানুষকে ভালোবাসার কথা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ছড়ায় নির্মল আনন্দ-বিনোদনেরও প্রয়োজন রয়েছে। সময় এবং সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এমন বিষয়ও ছড়ায় থাকা প্রয়োজন। তাহলেই ছড়া হয়ে উঠবে পাঠকপ্রিয়। শিশুসাহিত্য হয়ে উঠবে বর্ণাঢ্য।