ভৃগু দৈত্য নামে এক দৈত্য ছিল বটে,
শিব সাধনায় হলেন রত তারপর কী ঘটে।
ভয় দেখালো দেবতাগন নাহি হলো ফল,
এক পদে ছিলেন দৈত্য হইয়া অটল।
কত দিলো ঝড় ঝাঁপটা কতই করলো ছল,
দৈত্য ছিল শিব ধ্যানে মনো যোগের বল।

অবশেষে দিলো দেখা ভোলা মহেশ্বর,
ভৃগু বলে প্রণাম লহ হে প্রানেশ্বর।
শিব বলে বলো ভৃগু কী বাঞ্ছা কর?
কিসের তরে বাছা তুমি আমার নামে মর।
ভৃগু বলে হে প্রভু তুমি মৃত্যুঞ্জয়,
এমন বর দেহ যেন মৃত্যু নাহি হয়।
অমর হতে চাহি প্রভু বাসনা আমার,
কৃপা করে প্রার্থনা মোর করহ স্বীকার।

ভোলানাথ বলে বাছা জন্মে যারা ভবে,
আজ বা দুদিন পড়ে মৃত্য তার হবে।
অমর কেহ নাহি বাছা এই ধরাধামে,
জন্ম মৃত্যু তারি হাতে নাহি আমার নামে।
অন্য কিছু চাহ ভৃগু দেব উজাড় করে,
অনেক কিছু পেতে পারো আমার দেওয়া বরে।

ভৃগু বলে হে ভোলানাথ দেহ আশীর্বাদ,
ভশ্বিভূত হবে সে, যার মাথায় দেব হাত।
তথাস্ত বলিয়া ভোলা বর দান করিলো,
শিব নমস্কারে ভৃগু অট্টহাসি দিলো।
ভৃগু বলে হে আশুতোষ তুমি অন্তর্যামী,
পরীক্ষিতে চাহি বর তোমার সম্মুখে আমি।
মনে মোর জাগে আশা তোমার মাথায় হাত দেব,
বর তোমার ফলে কিনা নয়নে হেরিবো।

হায় হায় করে ভোলা একি শুনতে পাই,
নিজের বর হইলো বিপদ বাঁচার কায়দা নাই।
প্রাণ ভয়ে ছোটে শিব  বৈকুণ্ঠ ধামে,
মনে মনে জপ করিলো নারায়ণের নামে।
স্বয়ং হরি দিলো দেখা শিবের সম্মুখে,
খুলে বলো নীলকণ্ঠ ছোট কিসের দুঃখে।
প্রণামীয়া মহাদেব করিলো বর্ণন,
দুঃখ এসেছে প্রভু আমারই কারণ।
না বুঝিয়া ভৃগুরে আমি করিলাম আশীর্বাদ,
যম হইয়া ভৃগু আমার মাথায় দেয় যে হাত।
বর দিয়েছি আমি ভৃগু হাত দিলে কারো মাথে,
ভস্বীভূত হয়ে যাবে হাত দেওয়ার সাথে সাথে।

নারায়ণে ভেবে বলে নাহি তোমার ভয়,
না বুঝিয়া কর্ম করিলে এমন দশাই হয়।
চুপটি করে আড়াল হয়ে থাকো তুমি বসে,
আমি এবার যাবো ওই ভৃগু দৈত্যের পাশে।
এই বলিয়া স্বয়ং হরি বিশ্বমোহিনী রূপ ধরে,
আলতো ভাবে হেটে চলে ভৃগুকে আকর্ষণ করে।

শিবের পিছে ছুটতে ভৃগু ক্লান্ত হইয়া যায়,
অদূরে ওই মোহিনী রূপ হঠাৎ দেখিতে পায়।
দেখিবা মাত্র ভৃগু সব ভুলিয়া গেলো,
কী কারণে শিবের পিছে ছুটিতে সে ছিল।
এমন সুন্দর রূপ ভৃগু না দেখে কক্ষনে,
দেখিয়া প্রেমের ভাব জাগিলো তার মনে।
মনে ভাবে এই সুন্দরী থাকে যদি পাশে,
মৃত্য কে করিব বরণ সেহ যদি আসে।
এমতো ভাবনায় ভৃগু সুন্দরীর কাছে গেলো,
মনের সকল প্ৰেম কথা খুলিয়া বলিলো।

মোহিনী রূপে স্বয়ং হরি বলে ভৃগুর কাছে,
জীবন সঙ্গী করিতে আমার শর্ত একটা আছে।
আমারো সমান নিত্য যে নাচিতে পারে,
বর মালা পড়াইয়া আমি বরণ করিব তারে।
শুনিবা মাত্র ভৃগু দৈত্য রাজি হইয়া যায়,
নাচিতে লাগিল তারা নির্জনে দুজনায়।
যেমন ভাবে নাচে হরি তেমন ভৃগু নাচে,
নাচিতে নাচিতে ভৃগু শ্বাস ছাড়িয়া বাঁচে।
অঙ্গভঙ্গি করতে করতে ভৃগুর মাথায় পড়লো হাত,
মহাদেবের বরে ভৃগু হইলো ধূলিসাদ।।
      
           *************
Date-
১৮/১১/২০২৪
-----&&&----