কত অভিমান, কত পরিমান চোখের জল জমিয়ে নিয়ে মালতী আবারো গেল তার কাছে!
শুধু একবার টোকা দিলেই ঝরঝর করে ঝরে পড়ত সব।অথচ সে সবটা না জানার ভান করে রইল।
মালতীর প্রতি তার এই নির্মম উদাসীনতা, ভয়ানক নির্লিপ্ততা;
বারবার কি রুদ্র প্রতাপে ভেঙে চূর্ণ করেছে মালতীকে।
কত প্রহর মালতীর অপেক্ষায় কেটেছে শুধু সে একবার শুধোবে বলে....
"তোমার চোখ লাল কেনো মালতী? ঘুমোওনি?"
ভাবতে ভাবতে কেবল চোখের নিচে কালিই বেড়েছে!
মালতীর প্রতি তার ভাবনা নয়।
তারপরেও মালতী অপেক্ষায় থাকে একটি ডাকপিওনের।
হয়তো সে যেকোনো দিন আসবে নীল খামে মোড়ানো কোনো ক্ষুদেবার্তা নিয়ে!
অপেক্ষায় থাকে শত বিনিদ্র দিবস আর রজনী।
কি কঠিন আর অন্তহীন সে অপেক্ষা!
শুধোলে তার নির্বিকার উত্তর!!
আজকাল নাকি চিঠি লেখার ফুসরত মেলে না খুব একটা!
লিখতে বসলেও নাকি কালি থাকে না! নয়তো খাতার পৃষ্ঠা। এতো হুটোপাটি থাকে যে কখনো আবার দোয়াত শুদ্ধই ঢেলে পরে খাতায়! সমস্ত লেখা চাপা পরে থাকে দোয়াতের কালির নিচে।
ইদানিং আবার বিদ্যুতেও গোলযোগ খুব!
তাছাড়া অফিসেও কাজের চাপ বেড়েছে। আর ভ্যাকেশনে তো শিমলা, পুরি, কাশ্মীর ট্রিপটাও সামলাতে হবে!
এদিকে ছোট পিসিও এবার খুব করে ধরেছে, অনেক দিন যাওয়া হয় না ও বাড়িতে।
এবছর আবার সর্বভারতীয় পুজা কমিটির সভাপতি সে!
তার পোষা মিনি-টমিও আবার তার হাতে ছাড়া খেতে চায় না। বড্ড জ্বালাতন করে!
শিউলি গাছের ডালটা সেবার শুকিয়ে গেল!
মাধবীলতা গাছটার আরো যত্নের প্রয়োজন।
আরো কত ফিরিস্তি........!

মালতী বুঝতে পারে শুধু চিঠি লেখারই ফুসরত মেলে না তার। বাকী সব কাজ ঠিকঠাক হয়।
মালতী বুঝতে পারে কতটা উচ্ছিষ্ট সে আজ মোহনের জীবনে।
অজুহাতের বাইরে বেরিয়ে আসার ফুসরতই মেলে না মোটে তার!
খোলসা করে তবু কেনো সে বলে দেয় না.....
যার সমুখে একটা গোটা জগৎ সাজানো আছে, তার আর প্রয়োজন পরে না খাতা-কলম খুলে বসার!