যাবার আগে তবু যে আচড় তুমি কেটে গেছ মনে!
যে মুহুর্ত করে গেছ রচনা!
তা ভুলতে আমার হয়তো কেটে যাবে এ জন্ম!
সেই আঙুলে আঙুল ভরে স্রোতস্বিনীর বুকে ভেসে থাকার মুহুর্তগুলো!
সেই বাবলার বন! খোয়া ঢালা লাল মাটি মেঠো পথ ধুলো!
ক্লান্তিহীন দুটি প্রাণ ক্রোশ ক্রোশ হেটে চলা।
রাশিরাশি অবারিত কথা মালা।
সেই কেওড়ার ডালে দুটি শালিক নোনা জলে আর বৃষ্টির জলে একাকার!
তোমার ছেলেমানুষী লুটোপুটি; সেই বিস্তীর্ণ নদীর চর!
তারপর সেই বিরাণ চরে নরম কাঁদা গায়ে মেখে তোমার বুকের পারে শুয়ে থাকা!
ওই আলিঙ্গনের ডুব সাঁতারে কত মিছে স্বপ্ন আঁকা।
একটি শ্বেত মহলের আঙিনায় রক্তজবার প্রেম;
সজিনার শুক্ল ফুল মোলায়েম।
রাস্তার ধারে মরা ডালে ঝুলে থাকা তেলাকচুর ফল,
ওই মরা নদী! যার শুকিয়েছে জল!
ওই একাকী শ্মশান মহাকালের!
সেও সাক্ষী সেসব দিনের।
বটের ছায়ায়; বিস্তৃত নিলীমায়!
তুমি জড়ালে আমায় অপার্থিব মায়ায়!
শোনালে কোকিলের কুহু গান! স্রোতস্বিনীর কলতান;
জানলাম প্রেমেরও আছে আঘ্রাণ।
বাতাসে ভেসে আসে তা!
শেখালে কত পাগলামি আমারে!!
ভাসতে ভাসতে নদীর জল গায়ে মাখা আজলা ভরে!
পাড়ার ছেলে-ছোকড়ার মতো টাকা দিয়ে চায়ের টঙে গুটি খেলা!
খরপাতার ছাউনির তলে পুঁটি মাছের ঝোলেও কত স্বাদ অবেলা!
শহরের অলিতে-গলিতে, ল্যামপোস্টের তলে দাড়িয়ে!
ঝগড়াঝাঁটিতে কত সময় গেছে পেরিয়ে।
তবু হঠাৎ চমকে দিয়ে পাশের শূন্য বেঞ্চিতে তোমার উপস্থিতি!
যেন ভেঙে দেয় সব বাঁধা! সব নিয়মকানুন!
রঙিন করে তোলে আমাদের সেই মুহুর্তটুকুন।
ঠিক যেন চলতি পথে শীতের রাতে এক কাপ ধোয়া ওঠা উষ্ণতা!
তুমিই শিখিয়েছ আমায়;
হাটতে হাটতে পায়ে একটু কাদা লাগিয়ে নেওয়া ইচ্ছে হলে,
আবার এই তুমিই একদিন আমার পায়ে কাদা লাগতে দেবে না বলে হঠাৎ কোলে তুলে নিলে!
আমায় তুমি রোজ ভেঙেছ আবার রোজ গড়েছ।
আমায় তুমি নিঃশেষ করেছ।
ভীষণ জোছনায় তোমাকে পাবার করুণ আকুতি
আর নিকষ আধারে তোমার শূন্যতা! দুই গ্রাস করেছে আমার সকল দিবস-নিশুতি।