আজ সকালের একটি ভারি মজার অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। তবে মনে রাখতে হবে এটি নিছকই মজা, কারো প্রতি বিদ্বেষ বা তাচ্ছিল্য নয়।
     বাড়ি থেকে অপিসের জন্য বেরিয়ে বহু চেষ্টায় একটি ট্যাক্সি পেলাম, মনে হল বিহারী ড্রাইভার। বাঙ্গালীর চিরকালীন অভ্যেস দুনিয়ার সব অধিকাংশ যান-চালকদের
অবাঙ্গালী ধরে নিয়ে 'এই রোককে!' বলে চ্যাঁচানো।
     ছাতা, ব্যাগ, জলের বোতলের মোট সামলে গাড়িতে উঠে থিতু হয়ে আমার বাংলা-ঘেঁষা হিন্দিতে বললাম,'আজ লাগতা বারিষ হোগা।আসমান মে বাদল ছায়ে হুয়ে হ্যায়।'
     ভদ্রলোক আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে চোস্ত্ বাংলায় বললেন, 'এই মেঘ বর্ষার মেঘ নয়, এতে আরও গরম বাড়বে।'
    'অ্যাঁ! আপনি বাঙ্গালী?' আমার চোখ গুলি গুলি হয়ে গেল।ভদ্রলোক ফিক্ করে হেসে বললেন, 'শুধু আপনি কেন , যে-ই আমাকে দেখে ভাবে আমি বিহারী। আমি কাউকে বুঝিয়ে পারিনা যে আমি বিহারী নই কারণ আমাকে একদম বিহারীদের মত দেখতে।'
     তারপর আবার বললেন ,' আমার জীবনের চরম ট্র্যাজেডিটা কি জানেন? খোদ বিহারীরাও বিশ্বাস করেনা আমি ওদের জাতভাই নই। একবার পাটনায় গিয়ে ওদের পাল্লায় পড়ে আমাকে আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওরা আমায় বিহারী বানিয়ে ছেড়েছিল।'
       আমার চোখ আরও গোল গোল হয়ে গেল।এরকম উদ্ভট কাহিনী আমি কোনোজন্মে শুনিনি।
আমি বললাম ,'কিরকম?' উনি বললেন, যখন ছেলেমানুষ বয়সে একবার পাটনা যাই তখন দাদার এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতাম। তিনি বাঙ্গালী। কিন্তু পথেঘাটে বিহারীদের সঙ্গে দেখা হলেই তাদের একটিই প্রশ্ন ,'আপ কাঁহাকে রহনেওয়ালা হো?'
     'কলকাত্তা।'
'কলকাত্তা তো আপ কামসে গয়ে হো। য়াঁহাকা কাঁহা রহনেওয়ালে হো?'
   দাদার বন্ধুর বাড়ির নাম করলুম। ভাবলাম এযাত্রায় পরিত্রাণ পাব। কিন্তু তাও তারা ছাড়ে না , 'তব ত বিহার কে হি রহনেওয়ালা হো অর দিখনে মে ভী তো হম জ্যায়সা হি হো। আপ হরগিজ বংগালী হো হি নেহি সকতে।'
   'এ তো আচ্ছা জ্বালা হল! কিছুতেই বোঝেনা  যে আমি খাঁটি বাঙ্গালী!'
    বললাম,'হম বিহারী নেহি হুঁ ভাইয়া বংগালী হুঁ'
তখন ওরা গেল খেপে । বলল , 'আপ পটনা মে রহতে হো  হম জ্যায়সা দিখতে হো ফিরভি অপনে আপ কো বংগালী কহতে হো । আপ সরাসর ঝুটে হো।'
    আমি ভাবলাম এইবার তেড়ে এসে মারে বুঝি।
ভাবলাম, ধুত্তেরি! মর্ গে যা। আমাকে তোদের জাতভাই ভেবে যদি শান্তি পাস তাহলে আমাকে তোরা  বিহারিই সাজা।
      যাবার দিন ওদের বলে গেলাম, 'আপ জ্যায়সা
সোচতে হো, ওহি সচ হ্যায়।'
       আমি পেছনের সীটে বসে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছি। শেষকালে উনি অভিযোগের সুরে বললেন ,' দেখলেন ত দিদি, জলজ্যান্ত বাঙ্গালীটাকে ওরা কিরকম বিহারী বানিয়ে ছাড়ল?'
       স্বীকার করতেই হল, এই ট্যাক্সিওয়ালা ভদ্রলোকের মত রসিক  মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি।
  ট্যাক্সি থেকে নামবার আগে আমি বললাম,' দাদা, আপনার জীবনের এই ঘটনাটিকে বলে '  দশচক্রে ভগবান ভূত'।' বলে আর এক প্রস্থ হেসে ট্যাক্সি থেকে নেমে গেলাম।