পর্ব ২
শ্যামের গলায় বৈজন্তি ফুলের মালা  হাতে রয়েছে মোহনবাঁশি, আর পরণে পীতবাস;
কার্তিক পূর্ণিমার অলৌকিক মায়াচাঁদ চারিদিকে সুঘ্রান, মল্লিকার সুবাস
সাঁঝবেলায় পাখিরা ফিরেছে ঘরে নিস্তব্ধ নিথর,  মায়াময় চারিপাশ ;
যমুনা নদীর কদম তলে  পূর্ণচন্দ্র আসিবে তাহার,
  পূর্ণ আশ্বাস ;
কখন হইবে আঁধার রাতি  কৃষ্ণযুগল করিতে মুরতি, ব্রজবালাগনে বসি ভাবিছে তখন ;
দেরি আর সহে না প্রাণে  বারে বারে কালা পড়িছে মনে, ক্ষনে ক্ষনে অধীর অপেক্ষা করিছে গ্রহণ।
ব্যস্ত হয়ে দ্রুত যেন সমরে সারে দুইহাতে দশহাতের কাজ সারে, যেন কালারে পাইতে জয় করিবে ভুবন।
হাতে তুলে নিলেন মোহনবাঁশি মুখে তাহার মধুর হাসি, বাজাইলো প্রেমের অনঙ্গবর্ধনম।
বংশী ধ্বনির মধুর সুরে  ছড়াইয়া পড়িলো যমুনা নদীর তীর জুড়ে, বাতাস বহিল আনন্দসঘন।
অলৌকিক দিব্যজোৎস্নাবলিলয় স্নাত সমস্ত অরন্যানি প্লাবিত, যায়না তাহা সহজে বর্ণন।
বাঁশির সুর শুনলো তাঁরা  কৃষ্ণ ভাবনায় বিভোর যারা, বৃন্দাবনের তরুণী সকল গোপীগন।
গোপীগন নিজে কাজে ব্যস্ত ছিলো তখুনি কানে শুনিল, সুরের ভুবনে ডুবিলো উন্মনী মন।
পতিসেবা সান্ধ্য আহার  অঙ্গরাগের প্রসাধন পোশাক বাহার,
ত্যাগীয়া সকলি চলিল পাইতে কৃষ্ণ সন্দরশন।
বাঁশিরসুর যখনই কানে গেলো কেহকেহ দুদ্ধ দোয়াতে ছিলো, না ছাড়িয়া চলিল তাঁরা দূরে দাঁড়ায়ে গাভীনন্দন
সকাশে প্রকাশ কেমনে করি  এ সামন্তিকাগণ নহে করো ঘরের নারী, কৃষ্ণপ্রেমে অনুরনন।
যতিকর্ম সকল ত্যাগ করিয়া চলিল সখীগণ একেক করিয়া, ভুলিয়া লহমায় পরিবার পরিজন।
বাঁশির সুরের কেমন আকর্ষণ ধাবিত হইলো ফেলিয়া রন্ধন, না করিয়া সাজসজ্জা প্রসাধন।
নিশীথ রাত্রি বড়ো মায়াময়  দুর্গমপথ  জনমানবহীন ঢাকা নির্জনতায়, এসকলই ভাবনা করিল বর্জন।
আর রহেনা ঘরেতে মন  রক্তিম চাঁদ গৈরিক বর্ণ করিল গ্রহণ,তেমনই বর্ধিত সুরের বন্ধন।
দুদ্ধপানরত কোলের শিশুরে ছাড়ি ব্রজঙ্গানা অভিসারে দিতেছে পারি, কেমন পিরিতি করিয়ো অনুধাবন।
পড়শি পরিজনেরা  পাষাণী মা  সেকথা গোপীগনের কানে প্রবেশিলো না,
কান্ত সর্ব কারণের কারণ।