মারবেন? মারেন
আমরা ছাত্র,
বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য রাস্তায় নেমেছি
স্বাধীন দেশে, স্বাধীন ভাবে, নিজের অধিকার চাইতে এসেছি
মারতে চান? বুক পেতেছি মারেন, গুলি মারেন
ঘাতকের বন্দুক তাক করা ছিল
ট্রিগার চেপে প্রথমে রাবার পরে চায়না বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেল আমার ভাই
কিভাবে বন্দুকের গুলি তোয়াক্কা না করে মরতে হয়,
কিভাবে রক্ত দিয়ে অধিকার আদায় করে নিতে হয়, শিখিয়ে গেল আমার ভাই।
আমার আবু সাইদ ভাই।

পানি লাগবে ভাই, পানি
পানি লাগবে ভাই, পানি
নেননা ভাই পরে কাজে লাগবে
হঠাৎ বন্দুকের গুলি ছোড়ার আওয়াজ
বুলেট কপালে লাগায় পাশে থাকা কন্ঠ টা আর কানে আসছে না, আগের মত আর বলছে না
পানি লাগবে ভাই, পানি
পানির বোতল পরে আছে, আমার ভাইয়ের নিথর দেহটাও পরে আছে।
হায়েনার গুলি প্রাণটা নিয়েছে কিন্তু কোটি বাঙালির ন্যায়বিচার পাবার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে গিয়েছে
একজন সফল ও উদীয়মান ফ্রিল্যান্সার, একজন ছাত্র, একজন মানুষ, একজন মুগ্ধ হারিয়ে গিয়ে
জনতাকে রাস্তায় নেমে অধিতার আদায় করতে শিখিয়ে গেল ।

বিকেলে টিউশনি করে চট্টগ্রামের শহরের দিকে আসছিলেন হৃদয় চন্দ্র তাড়ুয়া।
পথে সংঘর্ষ চলছিল।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে তিনি দৌড়ানোর চেষ্টা করেন।
তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান।
চট্টগ্রাম থেকে বক্ষব্যাধি তারপর ঢাকা মেডিকেল অবশেষে চিতা।
লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে দরিদ্র বাবার সংসারের হাল ধরবে—কত স্বপ্ন ছিল।
একটি গুলিতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’

বড় হয়ে এমন কিছু করব , যার জন্যে তোমরা আমাকে নিয়ে গর্ব করবে।
রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলে জর্জরিত হয়ে বাসায় আসল
মা খালাদের প্রচুর চাপ
আর যাওয়া যাবে না আন্দোলনে
তোমাদের মত মা খালা থাকলে বাংলাদেশ কখনোই স্বাধীন হত না
আমি সাইদ ভাই-মুগ্ধ ভাইয়ের মত সাহসী হব
আমার কিছু হলে তোমরা গর্ব করে বলতে পারবে
আমরা আহনাফের মা খালা।
আগস্টের ৪ তারিখ,এক দফার দাবীতে উত্তাল মিরপুর
বাধা নিষেধ না মেনে সেদিনও এসেছিল আহনাফ
জীবিত আর ফেরা হয়নি বাড়িতে
গুলিতে শহীদ হয় আমার একাদশ শ্রেণীতে পড়া ভাই
পরিক্ষায় সবাই সশরীরে উপস্থিত, শুধু ফুল হয়ে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করল আমার ভাই, আমার আহনাফ ভাই।
একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোতে কলেজ ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ ইংরেজিতে এ কথা লিখেছিলেন।
অনেক বড় হবার স্বপ্নো ছিল, ছিল বিদেশ যাবার চিন্তাও
শুধু ছিলনা চাকরি করার আশা
তবুও ভায়ের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছিল ও
কোচিং এর শিক্ষকের অফার
যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে ফ্রিতে পড়াবেন
যুদ্ধের ময়দান থেকে কোচিং এর শিক্ষকের পোস্টে লিখেছিলেন
ভাই আগস্টে আসছি ফ্রি পড়াতে হবে কিন্তু।
গুলির সামনে বুক চিতিয়ে এগিয়ে চলে
মরতে এসেছি, মারবেন না?
কোটা না মেধা? মেধা মে……
গুলি করে মুখ বন্ধ করে দেয়া হল চিরদিনের জন্য।
আগস্ট এসেছে কিন্তু আমার ভাই আর নেই
চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে আছে, আর পড়ালেখা করা লাগবে না।
টেবিলে সাজানো ব‌ইগুলো আর পড়বে না
ধানমন্ডি থেকে কষ্ট করে যেতে হবে না আর বেইলি রোডের কোচিং এ।

ভাই বোন দুপুরে খাবার পর মোবাইল নিয়ে খেলছিল
হঠাৎ ভাই বাইরে বেরিয়ে যায়
রাস্তার মাথায় এক মহিলা ঝামেলার মধ্যে তাকে যেতে বারন করেন
নিষেধ না মেনে দৌড়িয়ে ঘটনা দেখতে যায় তাহমিদ
ও আন্দোলনকারীদের সাথে মিশে যায়
পুলিশের রাবার বুলেটে বিদ্ধ হয় তাহমিদ,
হাসপাতাল এ নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে ও নেই
ওর লাশ স্ট্রেচারে করে শহীদ মিনারে শুরু হয় আবারো আন্দোলন
আবারো গুলি চলে, আবার এসে গুলি লাগে মৃত তাহমিদ এর শরীরে
লাশের শরীরেও গুলি লাগে, কতটা নিচে নামলে
লাশের শরীরেও গুলি করা যায়?

জানালার পাশেই পড়ার টেবিল,
পড়ার ব‌ই, প্লাস্টিকের খেলনা, মেঝেতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ
১৯ জুলাই ২০২৪
পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকছিল সামিরের ঘরে।
জানালা বন্ধ করার সময় বুলেট এসে চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে গেল
ঘটনাস্থলেই একটি মহাকাব্যের পরিসমাপ্তি হলো
কি দোষ ছিল সাফকাত সামির?
ও তো তোমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাস্তায় নামেনি
তবে ১১ বছরেই কেন ওকে তোমরা হত্যা করলে?
নষ্ট করলে ওর ভবিষ্যত, বাবা মায়ের আশা আকাঙ্খা ?

দুপুরে খাওয়ার পর চার তলা বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়েছিল মেয়েটি।
খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে।
বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে।
মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়।
মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।
পাঁচদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর
ও চলে যায়, চলে যায় না ফেরার দেশে
কেন খুন করলে?
ও তো তোমাদের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেনি
ও তো তোমাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে রাস্তায় নামেনি
তবুও ওকে কেন খুন করলে?
সাড়ে ছয় বছর বয়সী মেয়েটির নাম রিয়া গোপ।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।

ইতিহাসে এই প্রথম
জুলাই মাস শেষ হল তবে নিয়মমাফিক ৩১ দিনে নয়
৩৬ জুলাই ২০২৪,
দেশ স্বাধীন হল, বিজয় মিছিলে উত্তাল ঢাকা, উত্তাল পুরো বাংলাদেশ
শুধু স্বাধীনতার স্বাদ পেল না, যাত্রাবাড়ি, আশুলিয়া সহ কয়েকটি এলাকার মানুষ
আজও তাদের মরতে হল হায়েনার গুলিতে
শুধু মেরেই ক্ষান্ত হয়নি স্বৈরাচারের দোসরেরা
পুলিশ ভ্যান সহ জ্বালিয়ে দিল আমার ভাইদের
পুরে ভস্ম হয়ে গেল মুহুর্তেই
চেনা অচেনা কত ভাই-বোন হারিয়ে গেল
পরিবার চেয়ে আছে রাস্তায়
এই বুঝি ফিরে এলো বিরের বেশে
সে আসেনা,হয়ত আসবেও না কোনদিন
তবুও আশা থেকে যায় মনে
সে আসবে, সে আসবে।

মারুফ, শান্ত, দীপ্ত, ওয়াসিম, ইরফান,শাকিল, জাফর , রুদ্র
সাথে নাম না জানা হাজারো লাশের গন্ধ
এখনও নাকে আসে, মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
তোমাদের নাকেও তো লাগার কথা, নাকি চোখ নাক বন্ধ করে দিয়েছ?
ভুলে যেওনা তোমরা যে দেশকে স্বাধীন বলে বুলি আওড়াচ্ছো,
তা হাজার হাজার আহত ও পথ চেয়ে থাকা মা-বাবার নিখোজ সন্তান, ও হাজারো শহীদের দান,
দুর্নীতি,কুকর্ম ,স্বজনপ্রীতি, দেশদ্রোহী কাজ করার আগে অন্তত একবার ভেবে দেখো
এ শহীদেরা রক্ত দিয়েছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য
এ শহীদেরা যুদ্ধ করেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
এ শহীদেরা মৃত্যু বরন করেছে, স্বাধীনতার জন্যে
এ শহীদেরা রক্ত খেকো হায়েনার থেকে ছিনিয়ে এনেছে দেশকে
ভুলে যেওনা, শহীদেরা বারবার আবরার ফাহাদ হয়ে ফিরে আসে
ফিরে আসে নুর হোসেন বা আবু সাইদ এম মত
এ শহীদেরা মরেনি, শহীদেরা মরে না।