সূর্য ওঠা দেখেছো বন্ধু!
মস্ত এক আকাশের বুক চিরে ;
তার আগমন।
শঙ্খ নিনাদে আর পাখির গানে,
আমরা তার নাম দিয়েছি ভোর।

কি অদ্ভুত আগমন!

ঠিক তোমার মতো।

যখন তুমি আসো,
আমার মনের ভেতরে যে আকাশ আছে,
সেখানে তোমার মুখের আদলে,
হাসির রামধনু তৈরী হয়।
আমার বুকের ভেতরে যে বাতাস বয় ;
সেখানে দীর্ঘ নিশ্বাসের সাথে রবিঠাকুরের রক্ত করবীর,
সুভাস তৈরী হয়।
আমার বুকের ভেতরে যে হৃদপিণ্ড আছে ;
সেখানে চৌরাস্তার কামারের হাপর চালানোর শব্দ হয়।
শিরা উপশিরা জেগে ওঠে,
এক লড়াকু যোদ্ধার পেশির মত।
প্রতিটি লোমকুপের গভীরতা বেড়ে যায় ;
অসীম শূন্যতা তৈরী হয়,
আমার বৈরাগ্যময় জীবনে ;
গভীরতার তল খুঁজে খুঁজে ;
চিবুকের ভাজ হয়
মারিয়ানা খাতের মত।
বন্ধু,
আমার এই অনুভূতি,
প্রশান্ত সাগরের ঢেউয়ে আছাড়ে পড়া,
এক খণ্ড পাথরের মত ;
ক্ষয়ে ক্ষয়ে আমি মুক্তোর মত চকচকে হয়ে যাই।
ঝিনুকের মত ভেঙে চুরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রই,
বেলা ভূমির বালুকায় মিশে যায়,
আমার শরীর - আমার মন ।
তুমি সেই রক্ত রাঙা ভোরে আসো,
আলোর মত আমায় স্পর্শ করো,
নরম হাতে যৌবনের আকুতিময়,
পরশ লাগে আমার শরীরে ,
ভেঙে যাই আমি।
আবারও টুকরো হয়ে পড়ে যাই,
আবার ঢেউ আসে,
আমি ভাটায় টানি,
আমি হারিয়ে যাই অতলে।

তবু তোমার ডাক আসে,
হয়তো বা!
সাগরের ভীষণ গর্জনে,
বধির আমি।
উন্মুক্ত বাতাসের শনশন শব্দে,
তোমার রুনুক-ঝুনুক চলার ছন্দে,
অনুভূতির তরঙ্গে মিশে,
তোমার আহ্বান আসে আমার কানে;
আবারো ফিরে আসি আমি ;
তোমার আঁচল তলে।

যাওয়া আর আসার সে উন্মত্ততায়,
একদিন আমি নিশ্চিত শেষ হয়ে যাব,
তা জানি।
এও জানি,
ভেঙে যাওয়া ঝিনুকের কথা,
কতক্ষণই তোমার মনে থাকবে।

আরেক উন্মত্ত ঢেউ-এ,
আরেকটা ঝিনুক আসবে ;
আবারও সকাল হবে,
নুপুর পায়ে, আলতা মেখে,
আবারও তুমি ঝিনুকের সন্ধানে নেমে যাবে সৈকতে।
আমি বালুকার বালি হয়ে,
তোমার পায়ে মেখে,
আবারও হারাব চোরা স্রোতে।।

তবু মনে রেখো,
শুধু তোমার-ই জন্য আমি ফিরে ফিরে আসি,
শুধু তোমার-ই জন্য আমি,
অশান্ত সুনামি সইতে রাজি।
তোমার চোখের নেশায় ডুববো বলে,
ঠিকানা ছাড়তে রাজি।  
শুধু তোমার-ই জন্য,
আমি রাত্রি অবধি,
লড়তে পারি।
শুধু তোমার-ই জন্য,
একরকম বেচে থাকি।।