প্রিয় জয় বাবু,
দেখতে তোমায় খেপাটে পাগলা লাগে জানোতো,
সেই অনেক বছর আগের কথা,
যখন আমাদের ঘরে পিদিমের আলো জ্বলত,
পাটকাঠির বেড়ার উপর টালির চাল ছিল,
আর রাস্তাটা ছিল কাচা,
চৈত্র মাসে ধুলোতে আটকে যেত ভাঙ্গা সাইকেলের চাকা।
সেই তখন,
দিন মনে নেই,
সাল মনে নেই।
কত ছোট ছিলাম তাও মনে নেই।।
নবীন ডাক্তারের দোকানে পেপার পড়তে যেতাম,
শুধু রবিবাসরীয় পড়ার লোভে,
একদিন সেখানেই তোমায় দেখেছিলাম,
সাদাকালো ছবিতে।
প্রিয় কবি,
বিশ্বাস করো,
দেখে একটুও ভালো লাগেনি সেদিন।
কি না কি মনে করে
পড়ে ফেলেছিলাম,
আস্ত একটা কবিতা।
গো গ্রাসে গিলে ফেলেছিলাম,
তোমার তোমার রূপকথার মতো কবিতা।
তখন আমার কবিতা বোঝার বয়স না।
তার পর আবার প্রেমের কবিতা!
ঐ একটা কবিতা পড়েই,
তোমাকে জানতে খুব ইচ্ছে হয়েছিল আমার।
তখন তো ইন্টারনেট ছিলো না,
ফেসবুক ছিলনা।
রেডিও শুনতাম,
সারাক্ষণ ।
মেঘবালিকা আর,
মালতিবালা বালিকা বিদ্যালয়।
শুনতে শুনতে মুখস্থ।
কিন্তু তখনও জানতাম না,
এ গান তোমার রচিত কবিতা।
সেই রেডিওতেই একদিন শোনা ,
খেপাটে - পাগলাটে
রোগা-পটকা তোমার কথা ।
ভালো লেগেছিল অনেক,
এটা জেনে যে,
তোমার শহর রানাঘাটেই আমার ঠিকানা।
তখন তোমার অনেক কবিতা খুঁজতাম,
কিন্তু পেতামনা কিছুই।
বই মেলায় গিয়ে খুঁজতাম,
রেল স্টেশনের বুক স্টলে খুঁজতাম।
কেন যে পেতাম না,
কি জানি!
তারপর অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেছে,
আমি এখন অনেক বড়ো।
ফেসবুকের বায়োতে লিখে রেখেছি,
"এক পৃথিবী লিখবো বলে,
একটি খাতাও শেষ করিনি। "
মাঝে মাঝে দুই একটা আনতাবড়ি কবিতা লিখি,
তোমার ছাপ দেওয়া কবিতা।
তোমার মেঘবালিকার নামে,
নাম রেখেছিলাম স্বপ্নের প্রেমিকার,
সে মেঘবালিকা আমার হয়নি।
তোমার "পাগলি তোমার সঙ্গে" কবিতা পড়ে,
প্রেমিকার নাম বদলে পাগলি রেখে দিয়েছিলাম।
সে প্রেমিকা আমায় ছেড়ে গেছে,
কোন যুগ আগে।
তোমার বেণিমাধব হতে গিয়ে দেখেছি,
সেই বয়সটা পার করে ফেলেছি ।
এই সেদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে,
হঠাৎ তোমার সেই শুকনো মুখটা দেখলাম।
"করোনা আক্রান্ত কবি জয় গোস্বামী"।
খুব ভয় লাগছিলো জানো,
করোনা যে কত জনকে কেড়ে নিল!
ক'দিন পর তুমি সুস্থ হলে,
শান্তি পেয়েছিলাম অনেক।
ঈশ্বর তোমাকে,
কবিতার জন্য পাঠিয়েছেন,
তোমার কবিতার খাতা শেষ না হলে,
তুমি ফুরাবে না কবি।
অনেক পুরাতন একটা স্বপ্ন আছে,
জানি এই কবিতা তোমার কাছে পৌছাবে না কোনোদিন,
তবুও।
যদি কোনো দিন দেখা হয়,
প্রিয় কবি,
সেদিন সার্থক হবো আমি।