আমার সেই ঝরা বকুলের মতো ,
ঝরে পড়েছিল সে ।
স্বপ্ন ছিল , আসা ছিল , প্রেম ছিল –
একদিন তার সবই ছিল ।
তবুও সে সহ্য করেছিল নরকীটের অসহ্য দংশন ।
সেদিন আমি আমার ঘরে বসে একা ,
বর্ষণমুখর পল্লীপ্রকৃতির মেঘমেদুরতায় আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন –
চারিদিকে সুরকন্যার খেলা চলছে ।
হঠাৎ -
হঠাৎ শোনা যায় ,
অসুর কন্যার অভ্রভেদী অট্টহাসি ।
স্নায়ুকোষ উত্তেজিত করে হঠাৎ নেত্রপল্লব খুলল ।
বাইরে তখন স্নিগ্ধ শ্যামল গন্ধ নিয়ে বইছে অনিল ,
গুনগুন সুরে ভেসে আসছে –
কোন মায়ের চাপা করুণ বুকফাটা কান্না ।
এ কান্না কোন নবজাগ্রত কাতরতার আর্তনাদ নয় ;
দশ বছরের জমে থাকা মায়ের বেদনা –
বয়ে চলেছে ফল্গুধারায় স্রোতের ন্যায় নেত্রগুহা হতে ।
শোন................. ,
এক কিশোরের কাহিনী শোনাই –
এ কাহিনী কোন রূপকথার নয় , বাইস্কোপের নায়কের নয় ,
নয় কোন শিল্পীর হাতে গড়া সাহিত্যিক চরিত্র ।
পল্লীমায়ের বুকে মেদুর বাতাসে বেড়ে ওঠা এ এক কিশোরের কাহিনী ।
দৃঢ় উজ্জ্বল চোখে স্বপ্ন ছিল তার –
যেদিন সে গিয়েছিল প্রথম পাঠশালায় ,
ঈশ্বরের ঈশ্বরভাষ্য প্রথম ফুটেছিল তার আলতো গলায় ।
সেদিন থেকেই দেখেছিল সে এক স্বপ্ন ।
এ স্বপ্ন তার ভিখারিনী মায়ের ভিক্ষানিবৃত্তি ঘোঁচাবে ,
এ স্বপ্ন তার অসুস্থ বাবার নেপথ্য জোগান দেবে ,
এ স্বপ্ন তার রঙিন প্রকৃতির বুকে পিকরাজের সুর তুলবে......... ,
– এমনিই ছিল তার আশা ।
কিন্তু হায় –
বিধাতার নিদারুন কৃপনার্থায়
এ সাধ মিঠিল না ।
স্বপ্নপুরোনের আসায় এসে দাঁড়িয়ে ছিল শহরের বুকে ।
বাসস্ট্যান্ডে প্রথম দেখা হয়েছিল নিলাঞ্জনার সাথে ।
সেদিন থেকে বকুলের মনে প্রেম জেগেছিল , –
আশা জেগেছিল , ভালবাসাও জেগেছিল ।
প্রতি বিকেলেই তারা দেখা করেছিল ভিক্টোরিয়ার মাঠে ।
চোখে চোখ রেখে , হাতে হাত রেখে ,
নিলাঞ্জনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল –
জন্মজন্মান্তরে আমি যেন তোমাকেই পাই ।
সেদিন সন্ধ্যায় –
চৈতালির ঝড়ে ঝরা পাতার মতো ঝরে পড়েছিল বকুল ।
লাল বাজার থেকে ছুটে এসেছিল কিছু খাকি ঊর্ধি পরা লোক ।
খটখটে সিলিং ফ্যানের উপর থেকে তাকে পাঠিয়েছিল লাশকাটা ঘরে ।
টেবিলের’পরে পাওয়া যায় একখানি চিঠি ,
যাতে লেখা আছে –
“আমি তোমার সবই দিলাম
কিন্তু তুমি কি দিলে আমায় ?
হে প্রিয়ে , বিদায় ।”
প্রভাতের রবির কিরণ মাথায় নিয়ে ,
এসেছিল শহরে এক স্বপ্ন নিয়ে ।
এ স্বপ্ন আজও সে দেখে –
আজও দেখে নিভৃত ঘুমের দেশ হতে ।
ছোট্টো কুঠির দ্বারে বসে মায়ের চোখ থেকে অশ্রু এখনো ঝরে পরে ।