তারানেভানো সে কুয়াশার ক্লান্ত শহর থেকে
যে বেদানাফুলের রঙ ধরেছিল জ্বলন্ত মেঘে
এখনও শ্যামাঘাসের বনে তার হলুদ স্বপ্ন রয়ে গেছে।
দুর্গাটুনটুনিটি একা শিশিরে শাপলার পথ বেছে
হেঁটে যায়; তার পায়ের চাপে তোলপাড় হয় স্মৃতির ঝাঁক
যারা রক্তসন্ধ্যার মতো যদিও বহুদূর আজ, তবু থাক
তাও বৃদ্ধ অশোকের সাথে মিলেমিশে বেঁচে একাকার!
রুপোর নদী চলতে চেয়ে বাসা বাঁধে ঘরে তার
স্রোতের গায়ে নলখাগড়ার গন্ধ, পুরোনো বন্ধু হয়ে এসে
গল্প শোনায়, ছলছল আঁধারের শেষে!
দুর্বা চুপ করে থাকে, মধুকুপী নিঝুম
সাদা মুক্তো জ্যোৎস্না গড়িয়ে বুনো মায়াবী ঘুম
উঁকি দেয় চাঁদ হয়ে; মন্দিরের চাতালে স্থির
ক্লান্ত হিমঝুরির পাপড়ি বিছিয়ে বহুদূরে শান্ত ঘণ্টার কন্ঠস্বর,
পারুল-জারুল, কাঞ্চন খুঁজে ওরা সব শেষরাতে
বনে ফেরে;সেই মৌটুসির সাধ হয়নি কি পূরণ তাতে!
জানি তবে আধো-আবছায়া নিশুতিও এইখানে ভ্রমরের মত শিউলিতে মিশে
প্রথম শরত হয় ভোরের ধুসর আকাশে!
সেই শিউলি নিয়ে যাবে ওরা, দিনের মালা গাঁথার ছলে!
তারা যত আঁধারি... কেউ শোনে নি তারা নির্জনে আঁধারির কথা বলে!
শুধু বিলে-ঝিলে ডুব দিয়ে নীরবে লাজুক লজ্জাবতীর পাশে
পানকৌড়ি দেখেছিল বসে একলা শরপাতার ভিড়ে; ফুটন্ত কাশে,
মাঠেঘাটে সেই মৃত মুহূর্তের দীর্ঘশ্বাস! কেমন ইতিকথা হতে হতে
ভুলে গিয়ে পৃথিবীর ভালোবাসা, মুছে যায় ওরা বিশ্রুতির সাথে।
পদ্মডানার রোদে ম্লান হয়ে আসে কালপুরুষের রেখা,
কেবল দিনের গভীরে ছায়া হয়ে রয়ে যায় ঝরা অন্ধকার একা!