মিথ্যার খাঁচা ভেঙে সত্যের আহ্বান
...... সৌমন্ত মুখার্জী
মিথ্যার মোহে ঢেকে গেছে সবার চোখ,
মুখে স্তুতির ঝড়, অন্তরে ভয় ভরপুর।
কারো বিবেক বিক্রি, কারো মানসিক দাসত্ব,
কারো জীবনে ছড়ায় নতজানুর অসত্য।
চোখে পড়ে না স্পষ্ট, তবে সবাই মিলে বলছে :
“সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও
সবাই হাততালি দিচ্ছে।
সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ!
কারও মনে সংস্কার, কারও ভয়;
কেউ-বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে;
কেউ-বা পরান্নভোজী, কেউ
কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক;
কেউ ভাবছে, রাজবস্ত্র সত্যিই অতীব সূক্ষ্ম , চোখে
পড়ছে না যদিও, তবু আছে,
অন্তত থাকাটা কিছু অসম্ভব নয়।"
গল্পটা পুরোনো, কিন্তু ফিরেও আসে বারবার,
বোকাদের ভিড়ে, ফাঁদে পড়ে মূঢ় কাণ্ডার।
তবে ছিল একটা শিশু, নির্ভীক, সত্যপ্রিয়—
বক্তৃতা নয়, তার ভাষা ছিল সৎ ও সোজা।
সত্য বলার স্পর্ধা ছিল তার হৃদয়েতে,
তাই কবি বলছেন : "গল্পটা সবাই জানে।
কিন্তু সেই গল্পের ভিতরে
শুধুই প্রশস্তিবাক্য-উচ্চারক কিছু
আপাদমস্তক ভিতু, ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ
স্তাবক ছিল না।
একটি শিশুও ছিল।
সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু। “
আজ আবার বাস্তবের পথে রাজা নেমেছে,
তবে শোভার ভিড়ে শিশুর প্রশ্নটি হারিয়ে গেছে।
মূর্খের দল হাততালিতে মাতোয়ারা,
সত্যের অভাব যেনো সূর্য-ও আলো হারা।
রাজপথের সেই সত্যর প্রতিক শিশুটি আজ কোথায়?
প্রশ্ন করছে সবাই, তাই কবি লিখেছেন :
“নেমেছে গল্পের রাজা বাস্তবের প্রকাশ্য রাস্তায়।
আবার হাততালি উঠছে মুহুর্মুহু;
জমে উঠছে
স্তাবকবৃন্দের ভিড়।
কিন্তু সেই শিশুটিকে আমি
ভিড়ের ভিতরে আজ কোথাও দেখছি না।”
কোথায় আজ সে সাহসী কণ্ঠের প্রতীক?
ভয়হীন শব্দে ভরা ছোট্ট সেই মুখ।
পাহাড়ের গুহায় লুকানো আছে কি তাকে?
নাকি সে হারিয়ে গেছে মাটির গভীরে?
নদীর ধারে কোনো ছায়ায়?
প্রশ্নটা সবার, তাই কবির বর্ণনায় বলছেন :
“শিশুটি কোথায় গেল? কেউ কি কোথাও তাকে কোনো
পাহাড়ের গোপন গুহায়
লুকিয়ে রেখেছে?
নাকি সে পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে
কোনো দূর
নির্জন নদীর ধারে, কিংবা কোনো প্রান্তরের গাছের ছায়ায়?”
তবু খুঁজে আনো তাকে, শিশুর সেই নিষ্পাপ কণ্ঠটা,
সত্যের আওয়াজ তুলে ভাঙুক এই মিথ্যের খাঁচা।
একবার সে রাজাকে প্রশ্ন করুক সত্যের চোখে—
সত্যের বুকে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচ হয়ে,
জিজ্ঞাসা করুক সবার সামনে,
তাই কবি বলছেন :
“যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?”