মারা যাওয়ার আগে আমার ঠাম্মা বলেছিল –
“আত্মাটা কাঁটাতারের ওপারে ৪৭ ফেলায়া আইছিলাম
এহন দেহটা এই হানে ফেলায়া দিলাম”।
সপ্তপর্ণা – অর্থটা না বুঝেই খুব কেঁদেছিলাম !
ঠাকুমা চলে গেছে আজ বছর খানেক হল –
ভুলেও গেছি ঠাকুমার না থাকাটা –
তবে, কই ঠাকুমা তো কখনও ভুলতে পারেনি
তার দ্যাষের বাড়ির কথা !
বাবা, বড় কাতল মাছ আনলে ঠাকুমা বলত –
মাছ ছাইরা আঁশ কিনছস পয়সা দিয়া !
খাওনের কপাল মারা তো গেছে ঐ ৪৭
ওহন এই খাইয়াই বাঁচতে লাগব !
ঠাম্মার কথায় খুব রাগ হত।
অর্থ না বুঝেই রাগ গত।
যেভাবে রাগ হত –
বাড়ির পেছনের জবা গাছের ঝোপটা দেখে –
ওটা নাকি ঠাম্মা দেশের বাড়ির ছাড়ার সময় বুকে করে নিয়ে এসেছিল।
রাগ হত –
সব ভালোর সাথে যখন তার দেশের বাড়ির তুলনা টানতেন।
তবে জানো সপ্তপর্ণা এখন আর রাগ হয় না ।
কারন ঠাম্মা মারা যাওয়ার পর ছোটদাদু কাঁদতে কাঁদতে
যখন বলছিল –
গিঁট বাইন্ধা ৪৭ যে যে ভালোবাসা- স্মৃতি নিয়া আইছিলা বৌদি
তা নিয়া তো তুমি গ্যালা গা –
অহন আমি শুধু রইলাম দ্যাহোটা পাহারা দিতে।
আসলে ৪৭ দুটো দেশ ভাগ হয়নি –
কাটাতার বসে ছিল ছিন্নমূল মানুষগুলোর বুকে।
যেভাবে সারাজীবন ক্ষত বয়ে নিয়ে বেড়িয়ে ছিল
আমার ঠাম্মা এবং ছোটোদাদু।