প্রিয় পা’খি
বৃষ্টির অপেক্ষায় উত্তরের জানলা খুলতেই পাহাড়ের সানুদেশ থেকে ভেসে এলো রাত্রিকালীন মালকোষ আর শ্বেতশুভ্র মেঘের নহবত। সাদা। এত আমার প্রিয় রং নয়, নয় প্রিয় রাগের অন্যতম। বৃষ্টিস্নাত শরীরে মেঘমল্লার বরাবরি আমার চেনা সুর। সে কথা তোমার গোপন নয়।
মৃত শিউলির শরীর থেকে রামধনু প্রজাপতিদের ঘোষণায় জানতে পারলাম এখন শরৎকাল, এখন প্রিয়তমার ছেড়ে যাওয়ার মরসুম। তাই কালিঝোরার আড়ালে হাজার হাজার কাশফুল সাদা থান পরে শোকজ্ঞাপন করছে সেই সব মৃত গাছেদের জন্য যারা ভরা বর্ষার ভালোবাসার পেয়ে ভেসে গেছে তিস্তার জলে। আর পরকীয়া বাতাস এসে, দোলা দিয়ে জানান দিয়ে যাচ্ছে তার গোপন উপস্থিতি।
আমার হৃদয় গোপন স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেখে ছুটে গেলাম সামসিং এর বাঁকে বাঁকে। আমার স্বপ্ন ক্রমশ ধুসর হয়ে উঠছে পাখি, শব্দান্ধতা ক্রমশ গ্রাস করছে তিলতিল করে।
প্রিয় পাখি এখানে যে সেই ফেলে যাওয়া সোঁদা মাটির গন্ধ নেই, নেই কদমফুলের পরিপূর্ণতা, বৃষ্টি ভালোবাসা কালো জমাত মেঘ, বিদ্যুৎ এর স্পর্ধা, নাহ! তাও নেই। পরে আছে শুধু অতলান্তিক রুখ তৃণভুমি আর সারিবদ্ধ এপিটাফ আর জমাট অন্ধকার।
আমি যে অন্ধকার বড় ভয় পাই। যেভাবে ভয় পাই আমার শব্দ, অক্ষর, কবিতাহীন স্বাভাবিক জীবন। ক্রমশ ভয় গ্রাস করছে পাখি। আমি শব্দহীন হয়ে পরছি। অতলান্তিক নীল আকাশ যেভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে এখন বর্ষা নয়, কালো মেঘ নয়।
যেভাবে শোকের মত ধারালো কাশ জানিয়ে যাচ্ছে এখন তুমি সাময়িক, আমি কবি নয়। যেভাবে অন্ধকার জানান দিয়ে যাছে তুমি হীন আমি। সেভাবেই কি আমার স্বপ্ন আমার মেঘমল্লার, আমার ঝড় এমনকি তুমিও হারিয়ে যাচ্ছ ? তবে আমিও হয়ত এভাবে ফুরিয়ে আসছি শেষ লেখা কবিতার শব্দ ঝংকার। আমার দূরত্ব গ্রাস করুক কালো অন্ধকার, আমার অক্ষরহীন জীবন গ্রাস করুণ তোমার প্রতিটা স্পর্শ।
ইতি
ফুরিয়ে আসা অনামি কবি।
বিঃদ্রঃ - কবিতার আসরে এই প্রথম মুক্ত কবিতা বা পত্র লেখা কবিতা প্রকাশ করলাম।