সুরমা, তুমি কেমন আছ?
তোমার ঘরের গরাদ ডিঙিয়ে আসে কি বাতাস বয়ে?
পূব আকাশে সূর্য দেখে জাগে কি নব চেতন?
লাবণ্যময় ওই শ্যামা তন্বী আজও ভেজাও কি বৃষ্টির ছাটে?
আনত মুখে হাসির রেখা ওঠে কি আজও ফুটে?
এখনো কি তুমি ভিজে এলো চুলে দালান 'পরে বসো?
নিতম্ব ছোঁয়া কালো চুলে কি তুমি আজও বেণী বাঁধ?
ফেলে আসা জীবনাবর্ত ডাকে কি আজও তোমায়?
এখনো কি তোমার সিঁথির সিঁদুর জ্বলজ্বলিয়ে আছে?
তোমার হাতের শাঁখা নোয়া আজও কি তেমনি অক্ষয়?

জানো সুরমা, বড়ই জানতে ইচ্ছে করে!
উঠোন জুড়ে তোমার আঁকা আল্পনা কি আজও তেমনই আছে?
মাটির দেওয়ালে কল্কা কত এঁকেছিলে, মনে পরে?
পুকুর পাড়ে হাঁসেরা কি আজও বেড়ায় চরে চরে?
বাঁশের মাচায় লাউ, কুমড়ো আজও কি তেমনই ফলে?
তোমার হাতের সাজানো বাগানে আজও কি তেমনই ফুল ফোটে?
পতঙ্গ আর ভোমরারা কি আজও সেথায় গুনগুনিয়ে ওঠে?
বেল, চামেলি, জুঁই, গাঁদারা আজও কি তেমনই হাওয়ায় দোলে?
সন্ধ্যা হলে তুলসী মঞ্চে তুমি কি আজও তেমনই পিদিম জ্বালো?
চণ্ডী মণ্ডপে শঙ্খধ্বনি করো কি সুমন্দ্রে আজও?

পথপাশে তোমার ভাঙ্গা ভিটা আজও চোখে পরে।
জীর্ণ বাকল, তন্তু আর জংলা পাতায় মোড়া,
কুকুর, শেয়াল, সাপ, ইঁদুরে হয়তো বেঁধেছে বাসা!
কি সুখেতেই ছিল বাঁধা তোমার সেই সে ঘর,
স্বামী, শাশুড়ি সঙ্গে তুমি সাজালে আপন হাতে।
কোন মন্থরার কুমন্ত্রণায় লাগলো ঘরে আগুণ!
সন্দেহেরই যাঁতাকলে পড়লে ধরা তুমি!
পুড়ে, ভেঙ্গে ছাই হয়ে গেল সেই সে সোনার ঘর!
আজও আমার চোখের চশমা ঝাপসা হয় তা ভেবে!
আমার চোখে সুরমা তুমি আজও আছ বেঁচে! *******************************