দূর ষ্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেনের শঙ্খধ্বনি,
একটা, তারপর আর একটা,
এরপর ক্রমাগত।
কর্মযাত্রীদের বাড়ী ফেরার ধুম।
কেউ হাসতে হাসতে নামছে,
সি ইউ - টাটা - বাই বাই -
ইত্যাদি কত কি ইংগিতে,
জানাচ্ছে বিদায় সহযাত্রীদের।
বগির মধ্যে তাসের প্যাঁটরা -
রাম্মি, ফিস, ব্রিজ - কত কি,
কোণ হতে ভেসে আসা বাদ্যযন্ত্রের সুর,
পেটের তাগিদে গান ধরেছে,
হাওড়া - বর্ধমান কিশোরকণ্ঠী যাত্রীটি।
ট্রেন ছুটে চলে, পাড় হয়ে যায় কত ষ্টেশন।
যাত্রী ভীরের ঠেলাঠেলি,
কত ভীন্ন ভাষক, ভীন্ন ধর্মী,
জোর কদমে পদদলিত করছে সরকারি অব্যবস্থা।
মাইনের টেনশন, ছেলের পড়া, মেয়ের গান,
বাবার হার্টের প্রবলেম, মায়ের বাতের ব্যামো,
কতই না আলোচনা -
মুশকিল আসান হাকিম বদ্যি, এ ওর মুখে ঘোরে।
দাওয়াই খাও, সুস্থ হও,
আহা তা কেন - ভালো ডাক্তার দেখাও -
ভেলোর যাও।
ছুটে চলে ট্রেন,
সেই আদ্যিকালের লোহার জালে ঘেরা,
হলুদ আলোরর বাল্ব -
কত যুগ সাক্ষ্য বহন করে আজও জ্বলছে,
বন্ধ পাখাগুলো কালিময়, ঝুলে মিশে ঝুলছে।
গ্রীষ্মকালে কত খোঁচা খায় ওরা,
কখনো পেনের, কখনো চিরুণীর,
শীতকালে তাকায় না কেউ ফিরে।
নিষ্প্রয়োজন পাখাগুলো তাই,
বগির ঐতিহ্য বর্ধনকারী শুধু।
বিজ্ঞাপনের পসরা টিনের দেওয়ালগুলিতে -
বাবা বাঙালীর চূর্ণ থেকে গুপ্তরোগ বিশারদ,
মীনু শাড়ী থেকে অন্তরবাস,
সকল ঠিকানাই সহজে পাওয়া যায়।
মন ভাঙা আশিকের প্রেমিকা কিম্বা ১৮+ চিত্রগুলি ,
সহজেই জায়গা করে নেয় সেই নির্বাক বগির দেওয়ালগুলিতে।
খালি হতে থাকে ট্রেন, একের পর এক ষ্টেশন বদলে,
পৌঁছে যাবে সে তার গন্তব্যে।
হ্যাণ্ডেলগুলি এখন সুর তুলে ,
হেলেদুলে এ ওর গায়ে পড়ছে ঢলে,
কাঁচের জানালাগুলি কোনোটা খোলা,কোনোটা বন্ধ।
হু হু ঠাণ্ডা হাওয়া এসে আছড়ে পড়ে সীটগুলিতে।
শৈত্যপ্রবাহে জড়সড় যাত্রীদল,
শীতের র্যাপার এঁটে ঢুলুঢুলু,
কাঁচুমাচু মুখে গন্তব্যের প্রতীক্ষায় ।
ট্রেন ছুটে চলে, শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে ষ্টেশনে ষ্টেশনে,
সেও প্রতীক্ষিত তার ষ্টেশন আসার।
******************************