ঘাটে আমার সাদা ফেনা জল-
চক্-চকে সকাল,
ছোট ছোট কুড়ির দল
পায়ে খেলা করে;
জল ছেটায় আমার চোখে বুকে।
সবুজ পাথর সিঁড়ি বেয়ে নানান যুবতির হাঁক-
“ওলো! বেলা যে বয়ে যায়, জলকে চল”-
খুশিতে বিহ্বল-
কত রাত পাহারা তারা-
আমার ভেজা বুকে আয়না করে।
জাতিষ্মরের মত-
সবার গল্প বলি, চুপি চুপি-
আড়ালে আবডালে রাখা কত দুঃসহ স্মৃতি-
রাত্রির নিশিডাকের একঘেয়েমি।
ঘাটে আমার জোয়ার জোয়ার জল-
আনন্দে উতল-
আমার একঝাঁক জলপরি।
কত কল্ কল্, ছল্ ছল্, টলমল-
আমার জলপরি।
কুসুম নামে ডাকে ওকে-
আদর করা আলো-
ঝলমল চোখে আছে কাঁচা স্বপ্ন-
আর অবাক করা একমুঠো দিগন্ত।
আনন্দ!
সে তো ছিল শুধু ঘৃতকুমারীর-
নৌকা নৌকা খেলায়;
ছিল আমার শক্ত বুকে-
রিনিঝিনি নরম তালে।
কিম্বা ছিল পুতুল খেলায়-ভাঙ্গায়-
মিছি-মিছি বা সত্যি সত্যি!
ঘাটে আমার কাঁচভাঙা জল-
শান্ত শীতল-
ধীমু হাওয়ার স্রোতে পুষ্প পল্লবিত-
তরু অমূল্য মুক্তাঞ্চল।
আমারই কোলে ও আসে...আবার আসে-
দীর্ঘ কটা দিন ছেড়ে-
ছেড়ে তার শ্বশুরবাড়ি মলিন সাদা কাপড়ে-
মুড়ে তার চুপ করা কান্নার জল গড়িয়ে-
পড়ে আমার গায়;
গড়িয়ে পড়ে আমার বুকের ফাটলরেখায়।
ঘাটে আমার সাদা কালো জল-
নির্জন-
এই হলুদ-কমলা-বেগুনি আকাশগুলোয়-
জমে কিছু ধূসর ধোয়া;
আবার মিলিয়ে যায় কালো সন্ধায়।
ইচ্ছায় অনিচ্ছায়-
ওর কথা বলি, যত মুদ্রাদোষের মত;
আঁকড়ে ধরি, আমার যক্ষের ধন।
কুসুম আর ফেরে না; তার ভিড়ে বড্ড ভয়-
সে আপন মনে যায়;
ফেলে যাওয়া তার একরাশ হাসি,
অবাক করা কয়েকটা আকাশ-
তার তারারন্ধ্রে।