অনীশ জানে না রক্তাক্ত পথের শেষ কোথায়? কবিতার জন্য কতবার প্রতিবাদের কলমটা ধরতে হবে। অনর্থক রক্তপাতের বিরুদ্ধে কবিতা কী উত্তর দিতে পারবে? আঁতুড়ঘরেই চিতাকাঠ। মডিউল। ধর্মের নামে শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের সোশ্যাল মিডিয়া বিব্রত করে। কেন এদের কবিতার ভাষা শেখাতে পারে না। তাহলে তো পীড়া আসত না সভ্যতার উপরে। আর কত কবিতার শব্দমালা, পংক্তি, পৃষ্ঠা লিখলে বর্বরোচিত পরম্পরা, এই অবিশ্রাম রুধিরধারা থামবে? কবিতার আত্মার কাছে কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই। কবিতা তাই বর্ষিত হোক বারি সুধা নিয়ে। অগত্যা নিজেকেই শান্তনা দ্যায় কবিতা। কবিতা সব দ্যাখে -- নিউইয়র্ক, মুম্বই, লন্ডন, প্যারিস, ক্যালিফোর্নিয়া, ব্রাসেলস, ফ্লোরিডা, ইস্তানবুল -- বার বার রক্তাক্ত হয় বিশ্ব মানবতা। চূড়ান্ত কাপুরুষতার আড়ালে সন্ত্রাসবাদীরা মারণ আঘাত আনে। আনবেও। তবে অনীশের কবিতা রুখে দাঁড়াবে। পশুবৃত্তির অধম এই নিষ্ঠুর উল্লাসে নষ্ট শ’য়ে শ’য়ে প্রাণ। তাই কবিতারা গর্জে উঠবেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ আমার কবিতা নয়, ছিন্নভিন্ন শরীর, ঘরের দেওয়ালে রক্তের ছিটে কবিতা হতে পারে না। শান্তির ফুলের বুকে দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে এর সমাধান নেই। কবিতা পারছে না মুছে দিতে রক্তের দাগ। কবিতার খাতায় বার বার লাল হচ্ছে দেওয়াল, দরজা, উঠোন, পড়শির আঙিনা, রাস্তাঘাট, মাঠ-ময়দান। আর কতদিন? কবিতার মতো অনীশ কাঁদছে। কোথাও কি শেষ নেই এই মুষল পর্বের? সভ্যতার বিকাশ মানবজাতির চোখে নতুন আলো দিল, রোজ নতুন নতুন আলোয় মহাবিশ্বকে চিনতে শেখাল, সমৃদ্ধি দিল, জীবনকে অপার সম্ভাবনা দিল, সেই সভ্যতার সন্তানরা এ কোন ভয়ঙ্কর ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে মত্ত! কবিতা কী এমন হয়। এঁরা সকলে সভ্যতার সন্তান তো?
কবিতার রাজনীতি জানে ইরাকে, সিরিয়ায়, লিবিয়ায়, মিশরে, গোটা মধ্য এশিয়ায় এই সঙ্কট এখন সবচেয়ে ঘনীভূত। রক্তস্রোত নিয়মিত। তার গা ঘেঁষে থাকা তুরস্ককেও গত এক বছর ধরে বার বার রক্তাক্ত হচ্ছে। আশ্চর্য হই সন্ত্রাসের এই ভৌগোলিক স্থিতি দেখেই! কবিতা কেন এর উত্তর দিতে অক্ষম! কবিতা এটাই ভাবে। অনীশ তাই শান্তি খোঁজে। সভ্যতার সূর্যের প্রথম কিরণ পৃথিবীর এই অংশেই তো পড়েছিল। মেসোপটেমিয়া আর মিশরের হাত ধরে মানবজাতি জীবনের নতুন দিশা পেয়েছিল। সভ্যতার সেই আঁতুড়ঘরেই এখন সভ্যতার চিতাকাঠ সাজানো হচ্ছে! কবিদের আজ নিরাশ হওয়ার সময় নয়। নরসংহারকের সামনে আত্মসমর্পণের সময়ও নয়। বরং সর্বশক্তি দিয়ে বিপথগামীকে সভ্যতার মহাসড়কে ফেরানোর সময় আজ। তাই কবিতার কলম আরও দৃঢ় হতে হবে। আশার আলোও কিন্তু জ্বলছে কোথাও। কবিতাই পারে সেই কবিতার খোঁজ দিতে। সভ্যতার আর এক আদি গুম্ফা থেকে সেই আলোর ক্ষীণ রেখা দেখা গিয়েছে। সিন্ধু সভ্যতার ভূমি থেকে হিনা রব্বানি খার নামে এক নেত্রী বলছেন, যুদ্ধে সমাধান হয় না। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তান কাশ্মীর জয় করতে পারবে না। আলোচনাই সমাধানের এক মাত্র পথ। আর তার জন্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করাই প্রাথমিক কর্তব্য। কবিতার আশা ক্ষীণ হলেও, সভ্যতার কোনও আদি ভূমি থেকে সঙ্কটমুক্তির বাণী যে আজও উৎসারিত হচ্ছে, তা অস্বীকার করতে পারি না। কবিতায় আমাদের আশান্বিত হতেই হবে। সভ্যতার আঁতুড়ে সভ্যতার সমাধিক্ষেত্র তৈরি হবে না, এ বিশ্বাস রাখতেই হবে। কবিতাই আমাদের আসল মুগ্ধতার পথ দ্যাখাবে। মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্দিষ্ট। সেখানে ধর্ম বড় নয়, যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে তাদের মৃত্যু ঘটবেই। তাই আসুন কবিতার পথ ধরেই এই হিংসা, লোভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি সকলে। কবিতার উপত্যকার খোঁজ অনীশ পাবেই। আর সেই পথেই আসবেই মানবতার স্বাধীনতা। -- (সূত্র আজকের বাংলা সংবাদের কিছু সম্পাদকীয়)