আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি সুভাষ
আমার শহর পুড়েছে গ্রাম পুড়েছে
দীঘির জল এখনো টকটকে লাল
ডিঙি নৌকোয় করে নদী জল পেরিয়ে পালাতে পালাতে
গভীর অথৈ সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছি
কেউ বলেছে এটা আমার দেশ নয়
কেউ বলেছে ওটা নয়, ওইটা আমার দেশ
আমার ধানের গোলায় আগুন
আমার বলদ বাছুর কারো কসাই খানায়
আমি আমার দেশ খুঁজে বেড়াচ্ছি
দেশের কথা নিরুদ্দেশের কথা
পাঠ্যবইতে এসব কিছুই নেই কোনোকালে
কারা ইতিহাস পাল্টাতে চেয়েছিলো জানি
শুনেছি কিছু উন্মাদ বলে, আর কিছু কানাকানি
তুমিও দেশ থাকতে নিজের দেশ বলতে পারোনি
মা বলে ডাকতে পারোনি মা কে
নিরুপায় সন্ন্যাস নিয়ে পালিয়েছো গ্রামে
গ্রাম থেকে শহর, দেশ থেকে বিদেশ, অনাহার অনাদরে
তালিকায় তোমার নাম কেটে দিলে
আমার কী দোষ সুভাষ !
তোমায় কেউ খোঁজেনি সত্যিকারের
কেউ বলে দিল তুমি দাউ দাউ অগ্নি গোলকে পুড়ে
শেষ হয়ে গেছো
কেউ বলল আসবে না, আর আসবে না ফিরে
বিষেই মেরেছে তুষারের বুকে বিদেশের জেলে পুরে
আর তেমনি কিছু লোক দেশটাকে টুকরো করে গেঁথে দিলে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো
বললে, চলো ভাগো ইঁহাসে, য়ে তুমহারা দেশ নহিঁ !
সেদিন কেউ ছিলো না আমার, আজও কেউ নেই
আমারও নাম নেই কোনো তালিকায়
কিন্তু এমন কথা তো ছিলো না সুভাষ !
মৈরাংয়ের সূর্য অস্তমিত হবে এমন তো ভাবিনি কোনোদিন
আটক শত্রুর ট্যাংক, বন্দুক আর গ্রেনেডগুলোকে
একটু যত্ন করে রাখতে হতো
খাকি উর্দি, জং পড়া তরোয়াল, বেয়োনেট
ফৌজের বিবর্ণ হতে থাকা সাদা কালো ছবিগুলোকে
মুছে রাখার লোক দরকার ছিল কিছু
সেসব কিছুই হয়নি যা যা করেছিলে ওই কটা দিনে
যেমন যেমন চেয়েছিলে তুমি
ভেবেছিলাম একটাই সীমান্ত থাকবে
একটাই ত্রিবর্ণ পতাকা
এখনো আমি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি গ্রাম
গ্রাম থেকে শহর এক দেশ থেকে অন্য দেশ
পাহাড় জঙ্গল খাল নদী পেরিয়ে মাঝ সমুদ্রে
কোথাও যদি একটা দ্বীপ পাওয়া যায় ...
আমি এখনো কেন মরে যাচ্ছি না সুভাষ !
ছাব্বিশ হাজার শহীদ সেনার কী আর দোষ বলো ?
তোমার এক কথায় ওরা স্বাধীনতা চেয়েছিল
যারা ফিরেছিল তাদের বেশির ভাগেরই
কোথাও কারো নাম লেখা নেই
কারো বা অন্ন জোটেনি, কারো বাস
সকলেই একটা দেশ চেয়েছিল
সংগ্রামে যুদ্ধে একটা নিজের স্বাধীন সোনার দেশ
চুয়াত্তরটা বছর পেরিয়ে গেছে
এখনো আমার শহর পুড়ছে আমার গ্রাম পুড়ছে
তুমি এভাবে শেষ হতে পারো না সুভাষ,
এভাবে নিরুদ্দেশ !
কপিরাইট @সোমদেব চট্টোপাধ্যায়