তুমি বলেছিলে, এভাবে গণ অভ্যুত্থান চাই না !
অন্ধকার ভেদ করে ছুটে আসছিল মিশকালো বুলেট
রাতের নদী পেরিয়ে কাঁকরভিটা পালাতে পালাতে
একবার কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে ফিরে তাকিয়েছিলাম
অসমঞ্জদা, কেউ আমায় বিদ্রুপ করেনি তো !
তুমি বিশ্বাস করো
আমার বাজেয়াপ্ত কবিতাগুলোয়
কেবল নিহত আদিবাসী রমণী, শিশুর কথা ছিল না
কেবল সেই সব কৃষক নেতাদের কথাই ছিল না
আমি হারিয়ে যাওয়া এক ঝাঁক উজ্জ্বল মেধাবী ছাত্রের কথা লিখেছিলাম
যাদের কেউ কেউ নিরাপরাধ, দৃঢ়চেতা রাজনীতিবিদ
হতে চেয়েছিল
আমি,
সেই উর্দি পরা পুলিশটির কথাও লিখেছিলাম
যার কাছে একটিও কার্তুজ পাওয়া যায়নি
বরং একশত গ্রাম পেয়াঁজ পকেটে নিয়ে
তার রক্তাক্ত লাশখানি হ্যারিসন রোডে পড়ে ছিল
কবিতায় আমি তার কথাও বলেছিলাম অসমঞ্জদা !
আমিও তোমার মতো বন্দুকের নলেই সমস্ত শক্তি দেখিনি
তবুও সেই রাতে
আমি এক দাগী আসামীর মত ছুটে পালিয়েছিলাম
তুমি আমায় অন্ধ হতে শেখাওনি কেন ?
রাজনৈতিক বুলি কানে দিয়ে
কেন আমার পকেটে সিসে ভরে বলোনি,
খতম কর শালাদের !
কেন বারংবার বলেছো কবিতা লেখ কবিতা লেখ
আর আমি উন্মাদের মত লিখেছি
রক্ত মাংস হাড় মজ্জা একাকার করে লিখেছি
অনাহারে অনিদ্রায় পালিয়ে যেতে যেতেও
তমসাচ্ছন্ন দিনের কথা লিখেছি
যাতে তোমার মতোই সূর্যোদয় হয় কোথাও, কোনো সময়
তুমি বলেছো বলেই অসমঞ্জদা,
আজও প্রতিটি দুঃসময়ে কবিতা লিখতে ইচ্ছে হয়
এখনো স্থির বিশ্বাস রাখি
ভেঙে চুরমার হয়ে পড়ে যেতে যেতেও
মানুষ একবার উঠে দাঁড়াবেই
আর ঠিক তখনই
একজন কবিকে দেশদ্রোহী বলতে শাসকের ঠোঁট কেঁপে উঠবে
এবং হয়তো তারাই একদিন সসংকোচে বলবে
এই রুগ্ন একগুঁয়ে ছেলেটি আসলে এক দুর্দান্ত প্রেমিক হতে চেয়েছিল মাত্র
সামঞ্জস্যহীন, এক জন দেশপ্রেমিক
ফিরিয়ে দাও এর বাজেয়াপ্ত কবিতাগুলি !