প্রিয় নিরুপমা,
আজকাল কেমন আছো তুমি?
যদি কিছু মনে না করো,
শেষবারের মতো তোমায় নিলাম চুমি।
আজ এতোগুলো বছর পর জীবন সায়াহ্নে এসে,
কতো স্মৃতি যে ভাবছি বসে বসে!
তোমার মনে আছে?
একদিন রানীঘাটের জারুল তলায়,
মন ভাসিয়ে ভেলায়;
হাতে হাত রেখে শপথ নিয়েছিলাম,
পরস্পরকে না হারানোর কথা দিয়েছিলাম।
বয়স তখন আমাদের কতো ছিলো জানি?
আমার ছিলো বাইশ, তোমার কুড়ি খানি।
এই যে সেদিন,
গিয়েছিলাম সেদিনের সেই জারুল তলায়,
তোমাকে পাশে ভেবে,
কিছুটা সময় কাটিয়ে এসেছি নিরালায়।
আশ্চর্য কি জানো?
দু'যুগ পরেও একই রকম আছে সব,
শহরে হই-হল্লা বেড়ে গিয়েছে,
সেখানটা তবু নীরব।
এই শহরে তোমার আসা-যাওয়া নেই অনেক বছর,
শহরটা অনেক রূপবতী হয়েছে,
তবে কমে গিয়েছে কদর।
আজকাল অবশ্য তোমার শহরের খোঁজ-খবরও রাখি,
এখন মাঝেমধ্যে তোমাকে স্বপ্নেও দেখি।
আমাদের ছাড়াছাড়ির পর
আবার বিয়ে করতে দেরি করোনি শুনেছিলাম,
তারপর দুই যুগ তোমাকে ভুলেই থেকেছিলাম।
ঠিক ভুলে থাকা নয়,
আড়াল করে রেখেছিলাম মনে হয়।
ভাগ্যিস, তোমাদের কলেজের লাইব্রেরি'র চাকরিটা ছিলো,
তা না হলে জীবনটাও হয়তো অসংখ্য মোড় নিতো।
শেষ একটা মোড়েই আমার জীবন পার,
সেই যে তুমি আর আমি হয়ে গেলাম যে যার যার।
তোমার খাতায় হয়তো জমে আছে আমার অসংখ্য ভুল,
জানি, তুমি ক্ষমা করোনি একচুল।
আচ্ছা, তোমার বন্ধু বিপিনের কথা মনে আছে তোমার?
সে আজ ক্যানসারের মস্ত বড় ডাক্তার।
অসুখটা যেদিন প্রথম ধরা পড়লো আমার,
সেদিনই জানতে পারলাম তার সবিস্তার।
বছর দুই ধরে তার চিকিৎসাতেই আছি,
সে বলেছে, তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নিতে,
আর সময় যে নেই বাকী!
তুমি তো জানোই কে, কী আছে আমার,
কেউ নেই,
তেমন কিছু নেই কাউকে দেবার।
ঘুঘুতলার বাড়িটা আর বাঁচিয়ে রাখা অল্পকিছু সঞ্চয়,
তুমি উত্তরাধিকারী নও,
তবুও যদি গ্রহণ করো, আমার প্রায়শ্চিত্ত হয় নিশ্চয়।
একটা অনুরোধ আছে,
রাখতে হবে,
আমার লিখাগুলো কোনো প্রকাশনীকে দান করে দেবে।
আমি যাবো নীল আকাশের বাড়ী,
তখন সবার সাথে হয়ে যাবে আড়ি।
ইচ্ছে মতো আঁকবো সুখবাড়ির আঙিনা,
এই তো আমার শতজনমের সাধনা।
আমার জন্য আহ্লাদী কেউ হবে না জানি,
তবু আকাশ থেকে প্রার্থিত হবো তোমাদের সুখ খানি।
ইতি, তোমার শুভার্থী,
এক মৃত্যু পথযাত্রি।