বাবা, পাঁচটি বছর।
সময়টা কি কম, বাবা?
কষ্ট কি তুমিও পাচ্ছো না
যেমনটি আমি পাচ্ছি?
বাবা, পৃথিবীর বৃহত্তম নিরীহ মানুষ তুমি,
সকল অনিয়মেই খোঁজো নিয়ম তুমি,
স্ট্রিক্ট প্রিন্সিপালেও ছিলে অটল তুমি।
কিন্তু আমি?
আমি না হয় ভিন্ন ছিলাম,
পাখা মেলে আকাশে উড়তে চাইতাম,
তোমার নিয়মগুলো ভেঙে দিতাম,
আর চিৎকার করে বলতে চাইতাম-
আমি মুক্ত, আরো উন্মুক্ত হতে চাই।
বাবা, অপরাধ করেছি?
যদি বল অপরাধ
তাহলে অপরাধই সহি।
বাবা, পাঁচটি বছর।
সময়টা কি কম, বাবা?
ততদিন ধরে নির্লিপ্ত হয়ে
তাকিয়ে দেখিনা তোমার চোখে রেখে চোখ,
ততদিন ডাকো না আমায়
জানো কি ফেটে যে যায় বুক।
বাবা, তোমার অমতে একটি কাজ
করে ফেলেছি না হয় বড়,
ভুলই না হয় হয়েছে বাবা
এবারতো তবে ক্ষমা করো।
পাঁচটি বছর জ্বলছি বাবা
আর যে জ্বলা দায়,
আমি বুঝি না, ভেবেও পাই না
ক্ষমা করতে এতো কী নিরুপায়?
বাবা, পাঁচটি বছর।
সময়টা কি কম, বাবা?
স্বপ্নে কতো শতবার দেখেছি,
কাঁদতে কাঁদতে ঘুম থেকে জেগেছি,
তুমিও দেখেছো কি বাবা আমার মতো করে একটি?
একই স্বপ্ন দেখেছি বাবা
এই পাঁচটি বছরে বারবার,
স্বপ্নে তুমি যতবারই এসেছো
পিটিয়েছো ততবার।
হয়েছে বাবা, আর কত?
ছেলে এখন হয়েছি বড়
আর পারো না ধরে পিটাতে,
পাঁচটি বছর পিটিয়েছো তাই
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে।
বাবা, তোমার কি মনে আছে?
ষোল রেকেটের ইলেকট্রিক ওয়্যার রাখতে তুমি
রান্না ঘরের প্রাচীরের খোঁপে,
এটা দিয়েই নানা উছিলায়
হর-হামেশা পিটাতে।
একটা আঘাত খুব মনে পড়ে বাবা,
ওয়্যার এর আঘাতে ফুটে গিয়েছিল মাথা।
অনেকদিন লেগেছিল সে ব্যথা সারতে,
বাবা, সে ব্যথা আমি পারিনি এখনও ভুলতে।
বাবা, তোমার এখন বয়স হয়েছে
কষ্ট চেপে রেখো না বুকে,
মারো তুমি আমাকে এখনও মারো
তবু তুমি যদি থাকো সুখে।
চাপা কষ্ট সইতে না পেরে
বাবা যদি কিছু হয় তোমার,
তুমি ছাড়া আর কে আছে
অতো আপন এই জগতে আমার।
লিখতে যে আর পারছি না বাবা
জলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে,
তুমি কি জানো বাবা
আমি যে তোমায় বাসি ভালো পৃথিবীতে সবচেয়ে।