বিদায় পৃথিবী
সোমা বিশ্বাস
আমি এক অন্তঃসত্ত্বা মাদি হাতি।
আমার দোষ ছিল কী , কেউ বলবে?
আমি এক পশু, জঙ্গল আমার বাসস্থান।
তোমাদের মত হাত- পা আমার নেই।
তোমাদের মত শ্রেষ্ঠ জীব আমি না।
তোমাদের মত সুরক্ষিত দালানে বাস করি না।
আমার শরীর বিশালকায়, যে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পারি না।
খাবারের খোঁজে পথ ভুলে চলে গেছিলাম একটি গ্রামে।
মানুষের লোকালয়ে, কী যেন নাম?
কেরালায় অবস্থিত মালাপুরপ্পম।
আমাকে খেতে দেওয়া হলো একটি আনারস।
বিশ্বাস করুন, মানুষ এত নির্দয়, জানতাম না।
আনারসে বোম ভরে আমাকে দেওয়া হয়েছিল।
আমি খেতে যেতেই ফেটে গিয়ে আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হলো।
আমার কষ্ট নিজের জন্য হচ্ছিল না, বিশ্বাস করুন।
আমার গর্ভের সন্তানের কথা ভেবে আমি মরে যাচ্ছিলাম।
তার কী হলো? সে সুস্থ আছে তো?
হঠাৎ থেমে গেল কেন তার নড়াচড়া?
মাত্র আর কিছুদিন পরই তো সে পৃথিবীর মুখ দেখতো।
ওঃ! আমি আর ভাবতে পারছি না!
আমার সব শেষ হয়ে গেল!
আমি আর বাঁচতে চাই না!
যাই আগে আমার সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করি।
না জানি, ওর সারা শরীরে ও আমার মত জ্বালা পোড়া করছে।
বাছা! তোর কিচ্ছু হবে না তোর মা বেঁচে থাকতে!
বাছা আমার নড়ছে না কেন?
হাত পা ছুঁড়ে লাথি মারছে না কেন?
নাঃ! আমার সব শেষ! কী হবে বেঁচে থেকে!
আমি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবোই।
শুনে রাখো মানুষ, জগতের শ্রেষ্ঠ সুন্দর অমানবিক জীব!
তোমরা আমার সন্তান আর আমাকে মেরেছো।
আমাদের মৃত্যুর জন্য তোমরা দায়ী।
আমার বাছা তো কোন দোষ করেনি,
যে আজও পৃথিবীর মুখটাও দেখলো না!
নাঃ! তোমাদের অমানবিক মুখ ওদের দেখাবো ও না!
আমি যা কষ্ট পেয়েছি, ওকেও পেতে দেবো না।
তাই আজ পৃথিবীকে বিদায় জানালাম।
তোমাদের পাপের বিচার ঈশ্বর করুন।
প্রকৃতি প্রতিশোধ নিক বিচারকর্তা হয়ে।
বিদায় পৃথিবী।
রচনা - ৩ জুন ২০২০, শ্রীরামপুর হুগলি