তহন আমার বয়স কত, সবেমাত্র ষোল হইল
ইস্কুলের এক স্যারের লগে বাজান আমার বিয়া দিল;
শ্বশুর আর দুই দেবর বাজারে এক দোকান চালাইত
শ্বাশুড়ির লগে ঘরের কামে সারাটা দিন ভালই যাইত।
হঠাৎ একদিন জামাই কইল, দেশে গোলমাল চলতাছে
পাকিস্তানীরা ঢাকায় নাকি সমানে মানুষ মারতাছে;
কয়দিন পর আমগো গ্রামেও মিলিটারি আইসা পড়ল
জামাই আর দুই দেবর সংগ্রামে যাইতে বাড়ি ছাড়ল।
মিলিটারিরা পুরাডা গ্রাম আগুনে পোড়াইয়া শেষ করল
তিন ছেলে যুদ্ধে গেছে, এই কারণে বুড়া বুড়ি মরল;
আমি ছিলাম জোয়ান মাইয়া, আমারে রাখল বাঁচাইয়া
ক্যাম্পে নিয়া ছয়টা মাস খাইল আমারে খাবলাইয়া।
যুদ্ধ শেষে ছাড়া পাইলাম মিলিটারিগো হাত থাইকা
গ্রামে তহন থাকার মতন আমার জন্য জায়গা নাইকা;
জামাই আর দুই দেবর কারোই কোন খবর নাই
ঐ সময়ে পোলা হইল, পোলার বাপ কে জানা নাই।
পোলা লইয়া চইলা আইলাম ট্রেন ধইরা ঢাকাতে
অনেক কষ্টে জায়গা পাইলাম ইস্টিশনের বস্তিতে;
পরথম দিকে পোলা নিয়া মানুষের বাসায় কাম করতাম
পোলা একটু বড় হইলে কুলির কামে লাগাইয়া দিলাম।
একেকটা দিন কত কষ্টে - কাটাইছি তার হিসাব নাই
অনেকে কইছে, ইশারা দিছে বিয়া করতে করি নাই;
পোলা আরেকটু বড় হইলে গাড়ির কামে লাগাইলাম
মায় পোলায় কোনমতে খাইয়া বাঁইচা রইলাম।
পোলা যখন বিয়া করল, বউ আমার লগে থাকত না
আস্তে আস্তে পোলা, পোলার বউ খোঁজ খবরও নিত না;
সব হারাইয়া একা হইলাম, কাজ কাম করার শক্তি নাই
কোন উপায় না দেইখা ভিক্ষা কইরাই পেট চালাই।
মাঝে মইধ্যে হিসাব করি, সংগ্রাম কইরা কী লাভ হইল?
সুন্দর সংসার, নিজের ইজ্জত সবইতো নষ্ট হইল;
যুদ্ধ শেষ হইছে পঞ্চাশ বছর, আমার যুদ্ধ শেষ হয় নাই
প্রতিদিনই চিন্তা করি, পরের দিন যেন দুইডা খাওন পাই