তাকে ডুকানো হলো বীভৎস টর্চার সেলে,
তাঁর চতুরপাশে শিকারির মতো ঘিরে আছে কতকগুলো দানব,
এরা মূলত অবৈধ চাপাচাপির অশুচি ফসল।
.
প্রথম চড়ে-ই থ্যাবড়ে গেলো মুখ,
কম্পিত ঠোঁটে ও....মাগো..বলে চেঁচিয়ে উঠলো ছেলেটা,
এবার তার হাত-পা লম্বালম্বি করা হলো,
একজন বলল "এভাবে কাজ হবেনা- শালা মাদারচ্যুত'',
স্ট্যাম্প হাতে এগুলো অন্যজন-
তাঁর হাত-হাটু-পা-পায়ের তলা শরীরের জোড়া অঙ্গে হানলো একের পর এক জীবনবিনাশী আঘাত,
মনে হলো যেন-অতিকায় কোনো বন্যপশুকে পিটানো হচ্ছে ,
জীবন্ত শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলো,একদম তরতাজা গাঢ় লাল রক্ত,
আঘাতপ্রাপ্ত ফলের মতো থ্যাতলে গেলো পুরো শরীর,
ছেলেটা রাজ্যের অসহায় নিয়ে কাতর চোখে তাকিয়ে রইলো হায়েনাগুলোর দিকে,
নরপিশাচগুলো তখন পৈশাচিক উল্লাসে
মেতে ওঠে______"কাপুরুষের দল",
সিগারেটের বিদঘুটে ধোঁয়া ছেড়ে দিতে দিতে একজন বললো -তথ্য দে শালা,
বল!কেন দেশের স্বার্থে কথা বলিস?
কেন সতেরো কোটি মানুষের ভবিষ্যতে নিয়ে ভাবিস?
কেন অনিয়ম-অশৃংখল আর
অন্ধকার জগতের বিরুদ্ধে লেখিস,
কেন এদেশের নদী-ঝর্ণা-পাহাড়-পানী-সমুদ্র-বন্দর-গ্রাম-শহর-গাছপালা-পাখপাখালি-খাদ্যশস্য,দিগন্তরেখা আর সুনীল আকাশ রক্ষার চিন্তা করিস?
কেন হাড্ডিসার অসহায় শ্রমিক-দিনমজুর-কুলি-গরীব রিকশাওয়ালা,গ্রাম্য কৃষক,বিধবা নারী আর গুলিবিদ্ধ লিমনের পক্ষ নিস?
কেন ধর্ষিতা বোন,এতিম সন্তান,নির্যাতিত মা,বাস্তুভিটা হারা বাবা,ধার্মিক যুবক,পঙ্গু ভাই,বস্ত্রহীন শিশু,কাটাতারে ঝুলে থাকা লাশ আর ক্ষুধার্ত অপুষ্ট বালকদের সঙ্গ দিস?
কেন লাল সবুজের মশাল হাতে মিছিলে যাস?
কেন ছাত্র অধিকার,শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, বাক স্বাধীনতা আর জনগণের অধিকার নিয়ে আওয়াজ তুলোছ?
কেন সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ,টেন্ডারবাজ,কালোবাজারি, মদখোর, জুয়াড়ি,গোপন টর্চার সেল,পরিকল্পিত গুম,পরিকল্পিত এক্সিডেন্ট,অবৈধ গ্রেফতার,অবৈধ ক্রসফায়ার, অবৈধ সরকার এসব নিয়ে লেখালেখি করোছ?
বল!তোর সাথে আর কে কে আছে?
উত্তর না পাওয়ায় কয়েকজন চড়-থাপ্পর, লাথি, ঘুষি মেরে নিথর দেহকে আরো নিস্তেজ করে দিলো,মুখের লালা আর রক্তে ভেসে গেলো তাঁর মুখ-বুক-গলা,
ছেলেটা করজোড়ে বললো সে নির্দোষ,
সে শুধু মানুষের ভালো চেয়েছে আর কিছুই না...আর কিচ্ছুটি না,
নেতৃত্ব,রাজনীতি,ক্ষমতার লোভ এসব কোনো কিছুর জন্যই সে লালায়িত নয়,
কথাগুলো শুনে তেড়ে আসলো এক মদ্যপ-
হকিস্টিক হাতে নির্যাতনের সকল রেকর্ড ভাঙতে উদ্যোত হলো সে-
একটা মৃতপ্রায় নিস্তেজ দেহে হামলে পড়লো হায়েনার মতো-
ক্রমাগত এলোপাতাড়ি আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো ছেলেটার দেহ,রক্তে লাল হলো শার্ট-প্যান্ট,
পেশিগুলো ক্রমশ দুর্বল হতে লাগলো-
পাকস্থলী,কটিদেশ,বুক,গোপনাঙ্গ,বাহু,পিট,মুখ,কান,চোখ,বিশটি আঙুল,দাঁত কোনো কিছুই রেহাই পেলনা পাশবিক টর্চার থেকে,
তার চোখে ঝাপসা আধার নেমে এলো,
মস্তিষ্ক সিগনাল দিতে ব্যর্থ হলো,
শরীরের কল-কব্জা ধীরেধীরে অকেজো হতে আরম্ভ হলো,
বার দুয়েক বমিও করলো সে,
এই বমিতে ভেসে গেলো লাল সবুজের স্বাধীন মানচিত্র,কলংকিত হলো ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত,
যে ছেলেটা স্বপ্ন বুকে তাঁর স্কুল-কলেজ পাড়ী দিয়ে ভার্সিটি পর্যন্ত এসেছে,
গতকালও যে তাঁর মায়ের আঁচলে মুছেছিলো মুখ,বাবার মুঠোফোনে বলেছিলো ফিরে আসার কথা,ভাইয়ের আবদার পূরণের করেছিলো প্রতিশ্রুতি,
সে এখন আর নেই.....
খুব স্বযত্নে একিবারে কাছ থেকে সে মৃত্যুকে আলিঙ্গ করেছে,
যন্ত্রণার পাশবিক কর্ষণে হ্রদপিণ্ডের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছিলো তখন,
সতেরো কোটি জনতার ক্লেদাক্ত মানচিত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে গেলে সে,
যেতে যেতে সবক দিয়ে গেলো-
কিভাবে সত্যের জন্য জীবন দিতে হয়,
কিভাবে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে সতেজ রাখতে হয়,
কিভাবে মাথা উঁচু করে বাঘের মতো বাঁচতে হয়,
এখন সে বেঁচে থাকবে কোটি মানুষের হ্রদয়ে, ইতিহাসেরর পাতায়,রাজপথে, মিছিলে, মিটিংয়ে,
এদেশের প্রকৃতির পরতে পরতে।
এই সুনীল আকাশ,এই স্রোতস্বিনী, এই সাগর-পাহাড়,কৃষক-শ্রমিক,ছাত্র-শিক্ষক,অসহায়, মাজলুম সবাই তার কাছে ঋণী,
সতেরো কোটির শ্বাস-প্রশ্বাসে ধ্বনিত হচ্ছে বারবার,
মৃত্যুঞ্জয়ী একটি নাম "শহীদ আবরার"।