১
তুমি কেউ নও,ব্যথা দিলাম তোমার নাম
কেমনে কিনিব তোমার যে অনেক দাম!
সকালের সূর্যের মতই জীবনের প্রথম প্রেম
তুমি হতে পারনি রাধে আমি হয়েছিনু শ্যাম।
জীবনের কিছু উপাখ্যান তুমি হীনা কেউ জানেনা
সারা দুনিয়ার সম্মান দিয়েও তার পূর্ণতা পায়না।
আমি চিরকাল এমনি এক আকুল প্রাণ
কখনো চাইবো না ভালবাসার প্রতিদান।
দূরন্ত সময়ের কাছে এক চৌকস জান্তার পরাজয়
প্রেমের ইতিহাসে একদিন লেখা হবে অমর অক্ষয়।
ভূ মধ্যসাগরের নীল জলরাশির মত
সত্য সুন্দর তুমি অথচ অপেয় সতত।
মায়া ভরা এই পৃথিবীর অপরূপ দেখে তৃষিত দু’চোখ
গোধূলীর পূবাকাশে দেখি চেয়ে তোমার চাঁদপানা মুখ।
দিনের আলোয় যারে পাইনিকো খোঁজে খোঁজে
দিনশেষে খুঁজি তারে লাখো কোটি নক্ষত্রের মাঝে।
শতজনমে তারেই চেয়েছি,করেছি অনুসন্ধান
তারি লাগিয়া দিবস রজনী কাঁদে ব্যথির প্রাণ।
শুন্যে ডানা মেলে নীলাকাশে উড়ে বেড়ায় গাঙচিল
তার কর্নিয়ায় দেখেছি তোমার কপোল কালো তিল।
জেলিফিশের মত তোমার নরম শরীরের মোহ
আমায় ইশারায় ডেকেছে কত তবু চাইনি দেহ।
আলোর ভেলা ভোজাই হিরে মানিক্য যত
কোন সে ভুলের তরে ভেলা হলো লুন্ঠিত?
আমিতো তারে উজাড় করে দিয়েছি মন প্রাণ
শুনিয়েছি তিয়াসা পাড়ে জীবনের যত গান।
তারা ভরা মাধবী রাত,ছিল পূর্ণিমার চাঁদ
স্বর্ণলতার মত অধরে জড়িয়ে ছিল হাত।
দু'টো অবুঝ হিয়ার কথামালা নদীর মত কল কল
জীবন নদীর মিলন মোহনায় গতিফের আঁখিজল!
সেই থেকে আজ কতকাল দেখিনি তোমায়
বড় ইচ্ছে করে একবার ছুঁয়ে দেখি তোমায়।
তোমার মনের বাতায়ন পাশে বেঁধেছি ইচ্ছে খেলাঘর
শোন,কেউ না জানুক আমায় তুমি করেছ কতটা পর।
প্রেমহীনের বন্ধু তুমি,পরম প্রিয়া ও সখী
নয়নের জলে তোমারে অমল করে রাখি।
কতজনারে কতকী কয়ে নিতাম তোমার সর্ব খোঁজ
তব মৌবনে গুন-গুন করত কত রসিক ভ্রমর রোজ।
তুমি নাকি এখন মাথায় হিজাব,চোঁখে মোটা চশমা পর
কোমল কচিকাঁচা শিশুদের ভবিষ্যৎ মানুষ হিসাবে গড়।
তবে কী তুমি খোলনা আর দক্ষিণা দ্বার
খোঁপার ভাঁজে গাঁথনা আর পাতাবাহার?
আলতা পায়ে নুপুর,মেহেদী রাঙা হাতে কাঁচের চুড়ি
লাল টিপ কপালে,হলুদ বরণ গায়ে জামদানী শাড়ি?
রিমঝিম বৃষ্টি এলে শ্রেণির পাঠাদান ফেলে
লজ্জার মাথা খেয়ে ভিজ কি স্ফটিক জলে?
বই কিংবা খাতার ভাজে খোঁজ নাকি প্রেমিকের চিঠি
চিঠি পড়ে পিছে কেউ না দেখে ছিড়ে করতে কুটিকুটি।
২
তোমার আমার প্রথম দেখা, প্রথম অবাক চাওয়া
মনে কী পড়ে কোথা সেথা বেণু বীনে গান গাওয়া?
পোস্ট অফিসের পিছনে একটি কদম গাছ
স্বাক্ষী আছে কদমের ফুল ছিল শ্রাবণমাস।
দুহাত দিয়ে বই খাতা বুকে জড়ানো কদম গাছের ছায়
এমনি করি অনুক্ষণ বুকে জড়াইয়া রাখিতে যদি আমায়!
তোমার তৃষিত দুচোঁখে ছিল চকিত চাহনি
মলয় হাওয়ায় দোলেছিল গো বেণুন বেণুনি।
নাকে ছিল শিশির বিন্দু,রূপার নূপুর পায়
চেয়েছিলে পথপানে সে কি আমারি আশায়?
তোমাদের বাড়ির পূর্বদিকের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে
শানবাঁধানো ঘাটে এখনো ভোরের সূর্য খেলা করে।
মাঘের শীতে রোদ পোহাতে তখন ভাবিতাম
সলিল হলে স্নানে সোনার অঙ্গে জড়াইতাম।
মিঠা পুকুরের পর বাজারের পথ,তারপর উঠে রবি
এই পথ ধরে হাটিতে চলিতে হয়েছি পথিক কবি।
আমার ভালবাসার টিয়ে পাখি এখন কাক
আমাতে তোমা ভালবাসার পাখি বেঁচে থাক।
তুমি থাক মহা সুখে শাহবাজ খানের ঐতিহাসিক শহরে
আমি শুধু মিছে খুঁজি তোমায় হাজার লোকের ভীড়ে।
তুমি আমি হাসি খেলি স্বপ্নের জগতে
বিষন্ন মন নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে প্রতি প্রাতে।
তোমা হতে বিদায় যেন বিষাদে ভরা তীর ভাঙ্গা ঢেউ
বুঝিবে সে কিসে মাঝ দরিয়ায় তরী না ডুবিলে কেউ।
কথায় বলে,নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফুটেনা
তবে কেন ভেবে দেখিনি তোমার যোগ্য কিনা!
তোমায় আপন করে না পাওয়া এ আমার চরম দীনতা
সুখ পাখিটার প্রস্থানে আজ অহর্নিশি হিয়ার কাতরতা।
চঞ্চলা ঝর্ণার ছুটে চলা,পাথরের নিরব কান্না
তুমি ছাড়া নেইকো যাযাবর জীবনে তামান্না।
অন্ত চাওয়াগুলো পেলে নাকি এক এক করে মরে যায়
তাই আমার পরম চাওয়া গুপ্ত রেখেছিলেম নাযেন হারায়।
অথচ তুমি কি যেন বলতে চাইতে আমায়
ভাবতাম “ভালবাস” তা কী মুখে বলা যায়!
তোমার পরশ পাথরসম ভালবাসা না পাওয়া এই আমি
কত যে তোমাকে ভালবেসেছি তা জানে শুধু অন্তর্যামী।
চারটি বর্ণে মোড়ানো একটি শব্দ ভালবাসা
সফেন সাগরেও নাবিক মনে জাগায় আশা।
যে কথাটি শুনিতে প্রিয়জনের মুখে চমকে উঠে হাসি
বলছি তোমায় ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।
৩
ছুটির দিনে আসবে নাকি তিতাস নদীর তীরে
হেঁটে যাবো দূর অজানায় তোমার হাতটি ধরে।
তোমার আপারগতার কাছে আমি হার মেনেছি
রানী করে সাজাতে পারিনি বলে হৃদয়ে রেখেছি।
ভোরের বাড়তি ঘুমে আমি তোমার লেপ-কাঁথা
জৈষ্ঠ্যের কাঠফাটা রোদে বিবর্ণ নীলরঙা ছাতা।
প্রভাতকিরণ মাখা রবি হেসে উঠেছে রোদ্দুর
তোমার আমার শহর সখী নয়তো বেশি দূর।
তোমার ভালবাসারে ভালোবাসিবে সাধ্য আছে কার?
তোমার আমার মাঝে কেউ নেই সখি মরন ছাড়া আর!
এ অপূর্ণতাই আমাকে দিয়েছে পাখীর স্বভাব
কোনো কিছুতেই পূর্ণ হবার নয় তোমার অভাব।
➤রচনাকাল:
৪ জানুয়ারী ২০২০ ইং
বঙ্গোপসাগর জলে ভাসমান।