আমি কল্পনা করেও বুঝে উঠতে পারছি না, শিউলী আমাকে ভালোবাসে! প্রথম দিন কলেজে এসেই শিউলীর সাথে দেখা। দুইজন একই বিভাগে পড়ি। কথা বলতে চাইলেও কথা বলেনি। একটু তেড়ে চলে গেল, বন্ধুরা বলল-কিরে, তোরে টাইম দিল ন যে। বাস্তবেই তো দেখলাম টাইম দিল না। কি আর বলি ওদের, একটু কষ্ট লাগলেও তেমনটি মনে করিনি। একসাথে বাংলা বিভাগে ক্লাস করি আর ভাবি, কেমনে ওকে মনের কথা বলা যাবে। ভাবতে ভাবতে একটা পথ খুজে পেলাম। কোন কিছু উপহার দিয়ে ওকে ভালোবাসার কথাটি জানাবো।
অনেক কষ্ট করে দুরের একটা লাইব্রেরী থেকে একটি বই সংগ্রহ করি। আমার বিশ্বাস এই বইটি উপহার দিলে একটু হলেও ওর মন গলবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বইটিতে একটি গিফ্ট পেপার দিয়ে বেধে উপহার কার্ড লাগিয়ে ওকে উপহার দিতে চাইলে প্রথমে নিতে একটু নামত করলেও পড়ে কি যেন ভেবে উপহারটি নিয়ে নিল। আমিও অনেক শান্তি পেলাম। ভাবলাম এবার হয়তো কাজে লাগবে। পরের দিন কলেজে আসলে শিউলী আমাকে দেখে কোন কিছু বলল না, এমনকি একটা ধন্যবাদও দিলনা। মনটা আমার খাড়াপ হলো। এতো সুন্দর একটা বই উপহার দিলাম, অথচ ওর মন ভরলো না। সেদিনের পর থেকে মনের সব প্রেম ভালোবাসা দুর করে পাথর হৃদয় নিয়ে কলেজে ক্লাস শুরু করি। আগে শিউলী কে দেখে একটু ভালো লাগতো, এখন সেই শিউলীকে ঘৃনা লাগে।
একদিন সকালে আমার ফোনে রিং বাঝছে। ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বারটা অপরিচিত দেখে রিসিভ করলাম। মিষ্টি সুরে বলল- কেমন আছ? - আমি চিনতে না পেরে বললাম, কে বলছেন?- আমাকে চিনবেন না। আমি বললাম, পি¬জ আপনি কে বলছেন, আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না?- আমি তোমার শিউলী। আজ সকাল সকাল কলেজে এসো, কথা আছে, এই বলে ফোনটা কেটে দিল। শিউলী নামটা শুনে মনটা চমকে উঠল। কিন্তু সত্যি শিউলী কিনা, নাকি অন্য কেউ মাসকারি করছে। নানান কিছু ভাবতে ভাবতে সেদিন কলেজে যাওয়া হলো না। পরের দিন কলেজে গেলে শিউলী আমাকে বলে- কাল কলেজে আসোনি কেন?- না মানে,- না মানে, কি বলতে চাও- আমাকে গায়ে লাগেনি?- তুমি নিজেকে কি ভাবো? তখনও আমি বুঝতে পারিনি শিউলী আমার সাথে কথা বলছে। তারপর কলেজ ব্যাগ থেকে একটি চিঠি ও ফুল বের করে হাতে দিয়ে বলল, এই নাও ফুল। আজ থেকে আমার আর তোমার প্রেমের সুচনা হল। আমি ফুল আর চিঠিটি নিয়ে ক্লাসে ঠুকলাম। সেদিন ক্লাসের কোন কিছুই মাথায় ঠুকছে না। বাড়িতে এসে চিঠিটা খুলে অবাক, সে কি সত্যি সে আমাকে ভালোবাসে, তাহলে এতদিন বলেনি কেন? নানান কিছু ভাবতে ভাবতে ওর ফোনে রিং দেই। রিসিভ করে বলে- এতোক্ষণ পরে রিং দিলা, তার মানে আমাকে ভালোবাসা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়।- ওসব পরে শুনবো, আমার কথা আগে শোনো।- কি কথা?- আমার সাথে হঠাৎ করে এমন অভিনয় শুরু করার কারণ কি?- কিসের অভিনয়? তুমি তো উপহার দিয়ে মন চুরি করেছো।-উপহার! দু’মাস আগের উপহার দু’মাস পরে এসে মন চুড়ি করে, এটা কি করে সম্ভব।- এটাতো উপহার না, যেন হৃদয় লেনা-দেনার মাধ্যম। তুমি যে আমাকে ভালোবাস সেটা অনুভব করতে পেরেছি তোমার ব্যবহারে। তাছাড়া মঝার কথা, তুমি আমাকে এমন একটি পুস্তক উপহার দিয়েছো, যা পেয়ে আমি তোমার প্রতি আসক্ত। তোমার উপহার এতোদিন খুলিনি অবহেলা করে ঘরে ফেলে রেখেছিলাম। সেদিন ছোট বোন আমাকে না বলে গিফ্ট পেপার খুলে বইটি পড়তে চাইলে অনেক কঠিন ভাষা তাই আমার কাছে এসে বলে - আপু এতো কঠিন ভাষা, এই বইটি যে তোমাকে উপহার দিয়েছে সে মনে হয় আরও কঠিন ভাষায় কথা বলে। ওর কথা না বুঝতে পেরে বইটা হাতে নিয়ে নাম দেখে চমকে উঠি, সেকি চর্যাপদ?- তাহলে এই বইটিকে আমি ওবহেলা করে ঘরে ফেলে রেখেছিলাম। নিজের ভূল বুঝতে পেরে তোমার কাছে ফোন দেই। ধন্যবাদ দেওয়ার চাইতে সোজাসুজি প্রেম প্রস্তাব দেওয়া অনেক ভাল। তুমি চাইলে আমাকে জীবন সঙ্গীনি করতে পারো। আমার কোন দিমত নাই।
E-mail: smjahidulislamjahid9@gmail.com