"সখী কবিতা কাহারে কয়" নামে আসরে একটা কবিতা লিখেছিলাম। কারো কারো পছন্দ হয়েছে, কারো বা হয়নি হয়তো। অনেকে পড়েইনি, তাই তাদের ভালো লাগা মন্দ লাগার প্রশ্ন নেই।
যাই হোক বিভিন্ন প্রশ্নের আদলে লেখা সেই কবিতা প'ড়ে এই আসরের বিশিষ্ট কবি, অনেকের প্রিয় কবি শিমুল শুভ্র বলেছিল, কবিতায় দারুণ ভিন্নতা, মুগ্ধ হলাম। সেই সাথে কবিতায় উত্থিত প্রশ্নগুলির উত্তর আড্ডার ছলে দিতে অনুরোধ ক’রেছিল। আমি ব’লেছিলাম-
ব্যাখ্যা করো যে যার মতো,
আমায় কেন বাঁধছ অত?
এছাড়া আমার ব্যাখ্যা সবাই মানবে, এমন কথা তো নেই। তবুও শিমুল ব’লেছিল, আপনি মানিয়ে লিখুন, অনুরোধ রইল। এমনিতেই বড় অফিসের বড় চেয়ারের প্রবল কাজের চাপে সময়ের বড় অভাব, তাই নেশায় প’ড়ে মাঝে মাঝে কবিতা দু’চারটে লিখলেও আড্ডায় যোগ দেবার সময় মেলে না, এমন কি সবার কবিতা পড়ারও সময় মেলে না। তাতে কারো কারো অভিমানও প্রকাশ পায়। যা-ই হোক কবিতার প্রশ্নগুলি ছিল অনেকটা এই রকম যে-
বহু ঘাম ছাড়া
গাদ্যিক খাড়া
গিরিকে নড়ানো যায় কি!
দমে লিখলেই
কারো শিরে সেই
শিরোপা চড়ানো যায় কি!
বাণী উঁচু নিচু
মিললেই কিছু
বক্ষে জড়ানো যায় কি!
না খুঁজে সে ভাষা
তাল মিল খাসা
বলো, তা পড়ানো যায় কি !
এই প্রসঙ্গে মহাকবি কালিদাসের কথা বলি, যিনি শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠতি অগ্রে না বলে বলেছিলেন, নীরস তরুবর পুরত ভাতি। আমি দেখছি এখনকার বেশির ভাগ কবিতাই শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠতি অগ্রে গোছের হয়ে যাচ্ছে। খুব কম কবিতাই নীরস তরুবর পুরত ভাতি ধরণের লেখা হচ্ছে। কারণ অনেক থাকতে পারে। কিন্তু এটা মানতেই হবে ইচ্ছে হলেই একটা দারুণ কবিতা লিখে দেওয়া যায় না। এতে অনেকটা জন্মগত প্রতিভা থাকা দরকার আর দরকার ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও প্রচুর পড়াশুনা। লেখার সখ জাগতেই পারে কিন্তু প্রতিদিনই দুএকটা ক’রে সুন্দর কবিতা লেখার ক্ষমতা সবার থাকে না। অনেক চিন্তা ভাবনা ক’রে হয়তো বা একআধটা ভালো কবিতা লেখা যেতে পারে। তাই বোধ হয় একবার লিখেছিলাম-
কেন এত কবি আর গুরুভার কবিতা!
পড়লে কি অনুরাগে, লাগে ভালো সবই তা?
খুশি মতো অবিরত লিখে কত চলেছে,
না ভেবেই এত বেশি লিখতে কে বলেছে?
এছাড়া এই কবিতার আসরে প্রকাশিত কবিতাগুলি কি সাধারণ পাঠকেরা পড়ে নাকি শুধু আসরের সদস্যরাই পড়ে! ঠিক জানি না। এখানে কজন পড়ল বা কজন মন্তব্য করল তা দিয়ে কবিতার মান বিচার করা যাবে কিনা তাতেও সংশয় আছে। সাধারণ পাঠকেরা হয়তো ভালো লাগবে না, ধ’রে নিয়েই আসরে প্রকাশিত আমাদের কবিতা পড়ে না। তাই এখানে কারুর কারুর কবিতা ২০০, ৩০০ বার পাঠ হলেও বিখ্যাত কবিদের কবিতার অনেকগুলিই ১৫০০০, ২০০০০ বার পর্যন্তও পড়া হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে। সেটা নিশ্চয়ই কবি রূপে আসরের সদস্য না হওয়া সাধারণ পাঠকেরাই পড়ছে। ভালো লিখতে গেলে কষ্ট করতে হবে, নিঁখুত ছন্দ বোধ তৈরি করতে হবে, সর্বোপরি সংখ্যায় কম লিখতে হবে।
মজা ক’রে বলি, রবি ঠাকুরের শেষের কবিতায় এক জায়গায় বলা হচ্ছিল, ভালো জিনিস যত বেশি হয় ততই ভালো। অমিত রায় ফস ক’রে বলে উঠল, ঠিক তার উল্টো, ভালো জিনিস কম ব’লেই ভালো, বেশি হলে ভিড়ের মধ্যে মাঝারি হয়ে যেত। ভালোবাসার কবিতা তো সবাই লিখছি, কজন রবি ঠাকুরের মতো ক’রে লিখতে পারছি “ ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো, তোমার মনের মন্দিরে।”
যা-ই হোক শিমুলের উসকানিতে বা অনুরোধের খাতিরে অনেক আজে বাজে বকবকানি আড্ডায় শুনিয়ে ফেললাম হয়তো। সবার যে তা ভালো লাগবে না, নিশ্চিত জানি। তাই লেখার শিরোনাম দিয়েছিলাম- “তোমরা যা বলো তাই বলো”