আলোচ্য কবিতা, "গণতন্ত্র", কবি জাহিদ হাসান (জাহিদ)
গণতন্ত্র! কোথায় তুমি?
এথেন্স কি'বা গ্রেট ব্রিটেনে?
নাকি দাফন হয়েছো
লিংকনের গোরস্থানে?
সাম্য! তুমি কী লেলিনের
সমাধীতে স্তব্ধ?
নাকি রুশোর চিতার নির্মম
অগ্নিতে হয়েছো দগ্ধ?
ন্যায় বিচার বিলীণ হয়ছে
তনুর হাড়ের মতো।
সাগর , রুণি পায়নি বিচার
শুকায়নি তো খাদিজার ক্ষত।
সুসাসন! সেতো রাষ্ট্রজ্ঞানের নথ
ভারি করা কালো অক্ষরের বুনট মাত্র
গুমের ভ্রুম , মানুষ খুন হচ্ছে যত্রতত্র।
সুনীতি! সতো রাজনীতির হাতিয়ার
নীতির আয়না সামনে ধরে নিজের স্বর্থই পার।
অধিকার! সেতো পাবে এলিট সমাজ
নিক তারা লুটে।
রাঘব বোয়াল পকেটে তাদের
সব কিনেছে নোটে।
গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনও সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। "গণতন্ত্র" পরিভাষাটি সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় জনগন তো নির্বাচিত করে তাদের প্রতিনিধি তবে সে তো সুখ সাগরে ভেসে বেড়ানো একজন পক্ষি। যখন যেদিকে পাল্লা ভারি সেদিকেই উড়ান ভরে সে। নিজের আখের গুটাতেই ব্যাস্ত থাকে অনুক্ষণ। ভুলে যায় জনগণের কথা, জনগণকে দেওয়া সমস্ত রকম প্রতিশ্রুতি সকল।
কবি তাই শ্লেষাত্মক ভাষায় বলেছে্ন :-
গণতন্ত্র! কোথায় তুমি?
এথেন্স কি'বা গ্রেট ব্রিটেনে?
নাকি দাফন হয়েছো
লিংকনের গোরস্থানে?
পেরিক্লেস অ্যাথেন্সে গণতান্ত্রিক সরকার বা শাসনব্যবস্থার প্রচলন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৪র্থ শতকে অ্যাথেন্সে যে যুগান্তকারী সাংস্কৃতিক অর্জন সম্পাদিত হয়, তার ভিত্তিতে নগরীটিকে প্রায়শই পশ্চিমা সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে গণ্য করা হয়।
গ্রেট ব্রিটেনে শাসন ব্যাবস্থা ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র চর্চার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বর্তমানে ব্রিটেনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের নিম্ন কক্ষের দায়িত্ব, যে কক্ষের নাম হাউজ অভ কমন্স। হাউজ অভ কমন্সের প্রতিনিধিরা উন্মুক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীকে তারা নির্বাচিত করেন। প্রধানমন্ত্রী আবার হাউজ অভ কমন্সের মধ্য থেকে তার মন্ত্রিসভার জন্য সদস্য বাছাই করেন।
দুটি দেশই আমাদের দেশ হতে বহু বহু দূরে অবস্থিত তাই ব্যঙ্গাত্মক শব্দে দারুন সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছেন এদেশের গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার হাল হকিকত বোঝাতে। স্বাভাবিক ভাবেই ইউনাইটেড স্টেটস এর ১৬ তম প্রেসিডেন্টের নাম নিয়েছেন কবিতায়।
একইভাবে সাম্যতার হাল বোঝাতে দারুন সুন্দর ভাবে কবি মহান লেলিন এবং রুশোর সমাধী এবং চিতার অগ্নিকে টেনে এনেছেন কাব্য কথায়।
ন্যায় বিচার তনুর হাড়ের ন্যায়। না হেসে পারি নাই। আলতো টোকাতেই যেন ভেঙে পরে। তার সাথে কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতির পট ভাবনায় সুদৃঢ় ভাবে তার কথার প্রমাণ স্বরুপ টেনে এনেছেন।
সুনীতির কথায় রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্রী স্বরূপ বোঝাতে আরশির ছলনা করেছেন দারুন সুন্দর ভাবে। আর অধিকার!
সে তো এলিট সমাজের জন্য। টাকা দিয়ে তারা ন্যায় নীতি আচার বিচার সবই কিনে নেন। সে পয়সা তারা সমাজকে শোষণ করে তুলে থাকেন। গরিব বা যারা মধ্যবিত্ত তারা আজ তাদের অধিকার কোথায় পায় এদেশে। তাদের কর্মে অধিকার নাই, ভালোভাবে বেঁচে থাকবার অধিকার নাই, বিচার বা নিজের হক আদায় করবার অধিকার আজ দেশে আর নাই।
পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে কবি তার কাব্য গাথায় দেশের বর্তমান কালের চিত্র অঙ্কন করেছেন।
দারুন সুন্দর কবিতা উপহার দেবার জন্য প্রিয় কবির জন্য রইলো আন্তরিক অভিনন্দন।