কবিগান বা কবির তর্জ্জা বা কবির লড়াই বাংলা সাহিত্য ও লোকসংগীতের একটি সুপ্রাচিন ধারা। পরিবেশনকারীদের কবিদের বলা হয় কবিয়াল। একজন লেখক ও সুরকার মুখে মুখে গান বেঁধে অপর গীতিকার-সুরকারকে আক্রমণ করেন এবং তিনিও তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তর প্রস্তুত করে গানের মাধ্যমে সেই আক্রমণের প্রত্যুত্তর দেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে, এমনকি সপ্তদশ শতাব্দীতেও কবিগানের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু কবিওয়ালাদের প্রকৃত বিকাশকাল হল ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যবর্তী সময়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে পরবর্তী অর্ধশতাব্দীকাল নব্য কবিগান এবং পাঁচালি গান কলকাতা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে সাহিত্যের অন্যান্য ধারাগুলির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। পরবর্তীকালে কলকাতায় কবিগানের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেও গ্রামবাংলায় এর জনপ্রিয়তা কিছুমাত্র কমেনি।
কবির তর্জ্জা বা লড়াই বাংলা সাহিত্যের একটি সুপ্রাচিন ধারা এবং আজও তা চলে আসছে।
চারণকবি মুকুন্দ দাস প্রকৃতপক্ষে ছিলেন একজন কবিয়াল। বালিকা বধূ নামে এক বাংলা চলচ্চিত্রে তার চরিত্রটি চিত্রিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুকুন্দ দাসের গান কিভাবে জনসাধারণকে প্রভাবিত করেছিল, তাও এই চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।
কবিয়াল কবিগণ মুখে মুখে কবিতা বলেছেন ঠিকই; কিন্তু কখনোই এগুলো লিখে রাখেননি। লক্ষ্যণীয় যে, ঐসময় কোন ছাপাখানাও ছিল না। তাছাড়াও তাদের সমর্থক কিংবা পৃষ্ঠপোষকগণও কখনো কবিগান সংগ্রহ করার কথা ভাবেননি বা চিন্তা করেননি। তৎকালীন সমাজ জীবনে উৎসব-আনন্দের প্রয়োজনে কবিগানের আসর বসতো। এবং এ আসর বসার মাঝেই ছিল কবিগানের সার্থকতা ও সফলতা।
পরবর্তীতে পত্রিকার পাতায় এই সব কবির তর্জ্জা বা লড়াই প্রকাশ করতে শুরু করে।
বাংলা কবিতার আসর বাংলা সাহিত্য ও কৃষ্টির একটি সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম। এখানেও উত্তর প্রত্যুত্তরে কবিদের নিজস্ব স্বভাবের কারণে বিভিন্ন সময় তৎক্ষণাৎ ভাবে কবিগণের মধ্যে তর্জা তৈরি হয়ে যায় যা অত্যন্ত হাস্য রসাত্মক ও মনোগ্রাহী হয়ে থাকে।
বাংলা সাহিত্যে ও কৃষ্টির এই সমৃদ্ধ ধারাটি এই আসরে প্রাধান্য দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করি।
যেহেতু একটি লেখার পত্যুত্তরে আর একটি বা ক্রমান্বয়ে অনেকগুলি সাহিত্য উত্তর প্রত্যুত্তরে সৃষ্টি হয়ে থাকে সেই হেতু একটি লেখা ছাড়া আর একটি লেখা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে তাই দুটো বা ততোধিক লেখা একসাথে কবিগণের নাম উল্লেখ করে লিখলে একটি হাস্য রসাত্মক অতি সুন্দর রচনা পাওয়া যেতে পারে।
বাংলা সাহিত্য কৃষ্টির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাব জড়িত এই ধারাটির স্বীকৃতি কামনা করে মাননীয় এডমিন মহাশয়গণ কে আবেদন করতে চাই যে, বিভিন্ন ধারা যেমন জীবনবোধের কবিতা, প্রেমের বা বিরহের কবিতা , পরে সংযোজিত অনুবাদ কবিতা তেমনই "যুগল বা কবিয়াল কবিতা", কবিতার আসরে অনুমোদন দেওয়া হোক আর এভাবেই বাংলা কবিতার আসর সমৃদ্ধ্ থেকে সমৃদ্ধতর হোক।