"কবিতা লেখা শেখার ক্লাস", বড় অদ্ভুত কথা। কবিতা লেখা কী কেউ শিখতে পারে, এটাই সবাই প্রশ্ন করবে। তাহলে সবাই জানে কবিতা লেখার বা যারা কবি হয় তা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। তারা এটাই মানে আর অঙ্কের হিসাবে তা প্রমাণিত।
কিন্তু আমি বলছি, কবিতা লেখা শেখা যায় কারন প্রতিটি মানুষেরই মনে আবেগ রয়েছে, রয়েছে রাগ ক্রোধ ঘৃণা সহানুভূতি আর স্নেহ মমতা যেগুলি কবিতা লেখবার রসদ। প্রয়োজন শুধু তা কবিতা বা কথার ছন্দে বেঁধে ফেলা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে ছন্দ কী!
ছন্দ ইংরাজিতে বলে হৃদম তা হলো তাল। একটা ছোট্ট উদাহরণ দি ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যারা গান করে দেখবেন গান করতে করতে তারা হাত পা দেহ বিভিন্ন ভঙ্গিতে নাড়াতে থাকে বা নেচে নেচে গান করে। গানটি গাইবার সময় সে বা তারা এতটাই মগ্ন হয়ে যায় সে তাল, লয়ে তারা সে অঙ্গহেলন করে থাকে। কবিতা লেখবার সময় আমারও অঙ্গহেলন হয়, গাইতে পারি না অথচ চড়া আর খাদে মন উঁচু নিচু হতে থাকে। গাইতে গাইতেই লেখে ফেলি।
আমি কোনও পুঁথিগত বিদ্যা জাহির করছি না। তা আমি পারবোও না কারণ তা'তে আমি পারদর্শী নই। হায়ার সেকেন্ডারি অবধি বাংলা বলে একটা সাবজেক্ট পাঠ করেছিলাম। তারপর বাংলা বলে কোনও সাবজেক্ট আমার ছিল না বা বাংলাতে পড়াশোনা করি নাই। তবে কলেজে একদিন মজা করে একটি বাংলার ক্লাসে ঢুকে গিয়েছিলাম সেখানে একটি ভাব সম্প্রসারণ করতে দিয়েছিল প্রফেসর। সবার আগে আমার খাতাটাই জমা পরেছিল। সে লেখাটি পাঠ করে তিনি আমাকে ডায়াসে ডেকে নেন আর বলেন সেটা সবাইকে পাঠ করে শোনাতে। আর তার উক্তি ছিল। খুব সুন্দর লিখেছে। যদিও বাংলা পড়ি নাই তবুও বাংলা আমারে রক্তে মিশে আছে আর এমন কোনও বাংলা শব্দ বা প্রতিশব্দ নেই যা আমি জানি না।
যাই হোক, যেটা বলছিলাম, তাল বা লয়। এটা এমনই যা তৈরি হয় শব্দ বা কথার বাঁধনে কিন্ত শব্দ কথার বাঁধন অতিক্রম করে তা তরঙ্গাকারে মন মস্তিস্কে প্রবাহিত হতে থাকে। এটাকেই বলা হয় ছন্দ আর তা পদ্যতেও হতে পারে বা গদ্যতেও। যে লেখাটি পাঠ করে মন মোহাবিষ্ট হয়ে যায় , আনন্দে মন উদ্দ্বেল হয়ে ওঠে বা দুঃখে চোখের কোণায় জল জম হয় সেটাই ছন্দ আর কবিতা।
আর বেশি লিখছিনা। কবিতা লেখা শেখার ২য় ক্লাসে আমি 'এলিমিনেশন থিওরি" , বলে একটি কথা লিখেছিলাম তা আমি এর পরের সংখ্যাতে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সে থিওরি মনেপ্রাণে কেউ শিখে নিলে কবিতা সৃষ্টি করা খুবই সহজ হয়ে যাবে।
এতক্ষণ যা লিখলাম তাই যদি দুচার লাইনে কবিতায় প্রকাশ দিতে চাই এরকম হবেঃ
নাই রে পূঁথি নাই সে জ্ঞান লিখতে আমি ভালো,
তবুও জগৎ চষতে পারি, জ্বালতে
জ্ঞানের আলো।
সেই গরিমা দিলেন দ্বাতা জন্ম দিলেন যিনি,
তাই তো ডানা আকাশ মিলি
লিখতে সঞ্জীবনী।
"নাই রে পুঁথি নাই রে জ্ঞান" এ কলিটি দিয়ে আপনারা ইচ্চে হলে কিছু চেষ্টা করে দেখতে পারেন আর সেখানেই না হয় একটু একটু করে আমার লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
আন্তরিক শুভকামনা সহ আপনাদের প্রিয় সঞ্জয় কর্মকার।