কবিতা আর জল! এর তফাৎ কোথায় , বলতে পারেন প্রিয় কবি। কবিতা তাহাই যা ইচ্ছে হলেই সাধারণে লিখতে পারে না। আর কয়েকটা কঠিন বাক্যি লিখেই আর কিছু রহস্য তৈরি করেই আজকাল যে কোনও ক্ষণে যে কেউ কবি হয়ে ওঠে আর এইটাই আসল কারণ বাংলা সাহিত্যে গত একশত বছরের উব্ধে নোবেল না আসার।
কারণ বাংলা কবিতাতে এখন ধাঁধা সৃষ্টি করে যে কেউ পলকেই লিখে দিতে পারে। কবিতার চেয়ে তারা বাংলা কবিতাকে হীনমনতার চোখেই দেখে থাকে। আসব লিখবো আর বাহবা পাব।
আর সে ধাঁধার উত্তরও তাদের কাছে থাকে না। পন্ডিত আছে এই সভায় অনেক, তাদের দায় সে লেখাকে মহান করে তুলবার। আর বিশ্বব্যাপী এ প্রচার, সবাই জানে। বাংলা কবিতা সে সুর আর ঝঙ্কার সে তো জীবনানন্দের কালেই হারিয়ে ফেলেছে।
দুঃখ লাগে প্রাণে। বাংলা ভাষা অনেক অনেক ভাষার চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ অথচ, "মম", কথাটি যদি আজ কবিতায় লিখি, "আমাকে" বোঝাতে; অনেকেই আমাকে চর্চা করতে দ্বিধা করে না।
কবি এখন প্রতিভাতে হয় না, ধাঁধায় আর গাধায় হয় আর তাই নোবেল আর একবার দূর অস্ত। অনেক কিছু বলে ফেললাম প্রিয় কবি তার জন্যে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
তবে ইংরেজ রা এখনও কবিতার ভাষাই ব্যবহার করে। তারা তুমি বলতে thee , তোমাকে বলতে thy আর এটা হয় বলতে, কবিতায় tis ব্যবহার করে থাকে। দুঃখ বলতে sorrow না বলে কবিতার ভাষায় grief বলে থাকে , কান্নাকে cry না বলে কবিতার ভাষায় moaning বলে থাকে, এমন হাজারো রয়েছে, কই তারা তো সে সব পুরানা বিসর্জন দেন নি আধুনিকতার উল্লাসে মেতে। আর এ জন্যেই তারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আর সারা বিশ্ব তাদের তাবেদারি করে। কারণ তারা সৎ সত্য স্বীকার করেন। মানী দিগকে মান দিতে জানেন আর আর মাতৃভূমির নিজের প্রতি আত্মবিচার, প্রয়োজনে ক্ষুদিরাম বা প্রফুল্ল চাকির মত সহিংস হতে জানেন। পারেন পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করতে বা অন্য দেশে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিকে খতম করবার প্রয়াসে সে দেশে ঢুকে তাকে শেষ করতে। দ্বিতীয় এই নীতির পথ ধরে আধুনা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী অবধি সমাদৃত।
আর পাঠক সমাজ , সে তো কবেই বয়কট করেছে তেমন লেখা অথচ কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, একটি মূর্খ বাঙালি লোকও যদি জেনে না থাকে তবে আমি আমার ভূ সম্পত্তি বাজি রাখতে রাজি।
যাই হোক বুঝে শুনে লিখবেন আর লেখা যত সহজ হবে তা সাধারণের কাছে অতি সহজে পৌছে যাবে। লেখাকে অযথা কঠিন করবেন না। হেঁয়ালিতে কুয়াসায় ভরবেন না। জেনে রাখেন সাধারণ জনগনের কাছে না পৌছতে পারলে আপনার কাব্য সাধনা মিছে, যতই উপাধি আপনাকে দিক না কেন কবিসমাজ।
যেমন কবি জীবনানন্দ। তিনি শুধুমাত্র আধুনিক কবি সমাজেই সমাদৃত। ১০০ শো টা সাধারণ জন সাধারণের মধ্যে ৯৯ জনই তাকে চেনে না।
আর তাদের কাছে পৌছুতেই আমি এখন অনেক ছড়া কবিতা লিখে থাকি। বিশ্ব বরেন্য রবি ঠাকুর আমার মনে ওই কুমোড় পাড়ার গরুর গাড়িতেই আছেন বা "বিপ্র কহেন রমনী মোর আছিল যেই ঘরে, নিশীথে সেথায় পশিল চোর ধর্মনাশ তরে, বেঁধেছি তারে এখন কহ কী তারে দিব সাজা, মৃত্যু দাও কহিল শুধু রতন গড়ের রাজা। ছুটিয়া আসি কহিল দ্যুত চোর সে যুবরাজ, বিপ্র তারে ধরেছে রাতে কাটিলো প্রতে আজ, ব্রাহ্মণেরে এনেছি ধরে , কহ এখন কী দিব তারে সাজা, মুক্তি দাও কহিলো শুধু রতন গড়ের রাজা", কী অপূর্ব। একটা কঠিন শব্দ নেই অথচ সেই ১০ ম শ্রেণীতে পড়েছি আজও খেয়াল আছে।
বা, রথ যাত্রা মহা যাত্রা মহা ধুমধাম, ভক্তরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম। রথ ভাবে আমি দেব পথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব; হাসে অন্তর্যামী।
এরপর আপনার মর্জি। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অনন্ত কালের জন্যে না শুধুমাত্র কবি সমাজেই।