"হাসি কান্না"
লেখকঃ শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য
আমার যত দুঃখই হোকনা কেন,
মুখে হাসি লেগে থাকে।
আমার যত আনন্দই হোকনা কেন
চোখ দুটিকে অশ্রু ঢেকে রাখে।
দুঃখ আমায় আশ্বাস দেয়,
সুখের দিন আসছে সামনে।
সুখ আমায় বুঝিয়ে দেয়,
এ সংসার দুঃখময়, তাকাও দুঃখীর পানে।
জীবন পরিবর্তনশীল। ঋতু চক্রের মতই ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে তার রস, রঙ , রূপ। দিন রাত্রির মত চক্রাকারে আসতে থাকে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বিষাদ ইত্যাদি। কখনো বা হতাসাতে ভরে যায় মন, কখনও প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথা, কর্মে ব্যর্থতা, আশানুরূপ ফল না পাওয়া আরও কত না কিছু।
মানুষ তার মন আর হৃদয় দ্বারা পরিশীলিত হয়। স্বাভাবিক কারণেই দুঃখে মন ভেঙে যায়, খান খান হয়ে যায় হৃদয় আত্মা। অনেক ক্ষেত্রেই বিয়োগান্তক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চরম দুঃখ হতাসায় কেউ কেউ আত্ম হননের পথ বেছে নেন। দরিদ্র কৃষকেদের আত্মহননের ঘটনা কে বা না জানে।
আবার খুশির পলে মানুষ মদ মত্তে আরাম আয়েস অতিশর্য্যে ডুবে যায়। বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে থাকে। হাতে অনেক টাকা এলে সে সময় সে বা তারা খরচের বাহার বাড়িয়ে বাহুল্যে জীবন কাটায়। ভুলে যায় দুঃখের সে পল, যা কী না ঘুরে ফিরে আবার আসবেই।
যারা সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষ তারা কিন্তু এ সত্য টি ভালো করেই জানেন। তাই সুখ দুঃখে তারা নির্বিকার থাকেন। দুঃখে যেমন অতিশয় দুখী হয়ে তাদের হৃদয় ভেঙে পরে না তেমনি সুখের দিনে তারা বাহুল্যে আনন্দের অতিশর্যে ডুবে যান না। তাদের কে স্থিতধী বলা হয়ে থাকে।
কবি তার কবিতাটিতে একথাই ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন যে দুঃখ যতই গভীর হোক না কেন, তার মুখে হাসি লেগে থাকে কারণ তিনি জানেন যে দুঃখের পর সুখ আসবেই। তাকে আসতে হবেই। এটাই নিয়ম। আর দুঃখ যতই তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে বুঝতে হবে সুখের আগমন আর বেশি দূরে নেই কারণ রাত্রি যতই তিমির হয় ভোর ততই সামনে আসতে থাকে।
আবার তিনি এই কথাটিও বলেছেন সুখ আসলেও তার চোখে অশ্রু লেগে থাকে। এখানে তিনি মানবিক আর তাই তিনি বলেছেন যে তার সুখ এলেও তিনি জানেন তার চারপাশে অনেক অনেক দুখী লোক দুঃখের বোঝা বয়ে বেরাচ্ছেন। তার সুখের পলে তাই তিনি সেই সব দুখী মানুষ জনের পাশে দাড়াবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
অত্যন্ত সংবেদনশীল মানবতা বোধ সম্পন্ন লেখাটি কবি নিপুণতার সঙ্গে সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করেছে্ন এজন্য তার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন। কবিতার জয় হোক।