ক্ষুধার জ্বালা যে কতবড় জ্বালা যে বা যিনি তেমন অবস্থার সম্মু্ক্ষীণ হন কেবল সে বা তিনিই তা জানে বা জেনে থাকেন। একজন মানুষের বেঁচে থাকবার প্রথম আর প্রধান শর্ত হলো খাদ্য। খাদ্যের অভাবে শরীর শীর্ণ হতে হতে একসময় শরীরের সকল জৈবিক ক্রিয়াকলাপ ই কাজ করবার শক্তি হারিয়ে ফেলে। খাদ্যের অভাবে একসময় মৃত্যু ঘটে তার। শুধু মানুষ নয় এই সংসারের প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকবার জন্য খাদ্যই হলো প্রধান ও অন্যতম শর্ত।
পৃথিবীতে মানুষ ভিন্ন আর সমস্ত জীবকূলে মানুষের মত এত সামাজিক রীতি নীতি নেই। প্রায় সমস্ত প্রাণী কীট পতঙ্গ একত্রে বসবাস করলেও ও কিছু রীতি নীতি তারা নিজেদের মধ্যে মেনে চললেও খাদ্য আহরণ ই তাদের প্রথম আর প্রধান শর্ত হয়ে থাকে। মানুষ সহ এ জগতে সকল জীবেরই খাদ্য খাদক সম্পর্ক হয়ে থাকে। আর এতে করেই বাস্তুতন্ত্র বা ইকোলজি নিয়ন্ত্রিত হয়। মহান স্রষ্টার এ এক মহান প্রহেলিকা। বাস্ততন্ত্র বা ইকোলজি কী তা সামান্য কথায় সেরে নি।
বাস্তুতন্ত্র (ইংরেজি: Ecosystem) হচ্ছে জৈব, অজৈব পদার্থ ও বিভিন্ন জীবসমন্বিত এমন প্রাকৃতিক একক যেখানে বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সাথে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব ও অজৈব উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জীবনধারা গড়ে তোলে।
এই পৃথিবীতে একমাত্র উদ্ভিদ ব্যতীত আর কেহই নিজের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে পারে না। একমাত্র উদ্ভিদই সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পাতার ক্লোরোফিলের সাহায্যে দুটি দশার মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত জল আর বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে শর্করা বা কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।
বাকি সমস্ত প্রাণীকূল খাদ্যের জন্য একমাত্র উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। কিভাবে!! তৃণভোজী প্রাণীরা গাছ লতা পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। মাংসাশী প্রাণীরা এই তৃণভোজী প্রাণীদের ভক্ষণ করে আর যারা সর্বভূক যেমন মানুষ তারা উদ্ভিদ প্রাণী উভয় কেই খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
বন্যরা বনে বিচরণ করে আর একে অন্যকে শিকার করে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে আর সেখানে নিয়ম নীতির বালাই নেই। এটাই বন্য রীতি ও নীতি। এভাবেই খাদ্য খাদক সম্পর্ক নিয়েই পৃথিবীর সকল প্রাণীকূল তাদের সারাটা জীবন অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু মানুষ সে তো অনেক অনেক বুদ্ধিমান। বিধাতা একমাত্র মানুষকেই ভাব বিনিময় করবার জন্য কন্ঠ দান করেছেন আর বুদ্ধিমান মানুষ লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ইতিহাসে ভাষার প্রচলন করা থেকে শুরু করে নানান নিয়ম শৃঙ্খলা সমন্বিত একটি সুন্দর সমাজ গঠন করেছে। সমাজ গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সকল মানুষই যেন সুষমভাবে খাদ্য থেকে শুরু করে তার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কোনও প্রকার হানাহানি হিংসা ছাড়াই সহজে পেতে পারে আর কোনও প্রকার হিংসা ব্যতীত সমাজের প্রত্যেকেই সুখ শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে সক্ষম হতে পারে।
কিন্তু আদতেই কী আজ আমরা এমন একটি সমাজে বাস করে থাকি। উত্তর সবারই জানা আর তাই এসব কথা লিখে অযতা লেখাটি দীর্ঘায়িত করলাম না। আজ আধুনাতে সমাজ তার নীতি আদর্শ থেকে শত যোজন দূরে অবস্থান করে।
খাদ্য খাদকের সম্পর্ক নিজেদের মধ্যে না থাকলেও শোষক আর শোষিতের সম্পর্ক সমাজে আজ বিরাজ করে। অসহায় নিপীড়িত কাঙাল দরিদ্র সীমার নীচে লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। খাদ্যের অন্বেষণ ই তাদের প্রধান লক্ষ্য। খাদ্যই যেখানে উপলব্ধ নয় শিক্ষার আলো সেখানে কী করে প্রবেশ করতে পারে!! আবার বিপরীতে বেঁচে থাকবার প্রধান শর্তই হলো খাদ্য।
কবি তার লেখার শেষে প্রেক্ষাপটে লিখেছেন সোনালি নামের দরিদ্র মহিলাটি ২০২২ সালে অভাবের তাড়নায় তার ছোট ছেলেটিকে অল্প টাকার বিনিময়ে বাজারে বিক্রি করে দেন, সাংবাদিক ও মিডিয়াতে বিষয়টি জানাজানির পর সে ভাষ্য দেন যে, তিনি সন্তান বিক্রি করেননি দত্তক দিয়েছিলেন।
কতটা অসহায় হলে একজন মা তার হৃদয়ের টুকরো শিশু সন্তানকে বিক্রি বা দত্তক সে যাই হোক, করতে পারে তা অনুভব করবার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈ কী। ভাবতেই দু-চোখ সজল হয়। টানা দুবছর লকডাউনে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের যেখানে নাভিশ্বাস অবস্থা সেখানে গরিব অসহায় মানুষজনের কী হাল হতে পারে তা কল্পনাতীত। যদিও এর বিপরীতে অনেকে ভিন্ন মত পোষণ করতে পারেন তাও বলবো তাদের মধ্যেও অনেকেই অনাহার অর্ধাহারে জীবন অতিক্রম করেছেন অনেক বহু বহু মানুষই। ক্ষিদার জ্বালায় সমবেত ভাবে সুইসাইড করবার মত ঘটনাও সামনে এসেছে অনেক।
একজন মা অভাবের তাড়ণায় তার প্রাণাধিক শিশু সন্তানকে অন্য কাউকে দত্তক দিয়ে দিলেন কল্পনা করতেই চোখে জল আসে।
তবে অনেকের মত অভাবের তারণায় শিশু সন্তাণ সহ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চাইতে এ আমার অনেক ভাল লেগেছে। কাউকে দত্তক দিলে আর যাই হোক শিশুটি তো খেয়ে পড়ে শিক্ষা দীক্ষা পেয়ে সমাজে আর দশটা মানুষের মত মানুষ হতে পারবে। শোকাহত একজন মায়ের কাছে এর চেয়ে বড় আর কোনো শান্তনা হতে পারে না।
যাই হোক কবি তার লেখা কবিতায় এমন ঘটনার সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয়ের আর এক চিত্র অঙ্কন করতে চেয়েছেন তার লেখা কবিতায় যেটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট আর অবশ্যই অত্যন্ত অমানবিক কুরুচিপূর্ণ। দেখতে হলে সে প্রসঙ্গ লেখাটিতে দেখে নিতে পারেন যে কেহই তবে আমার মত অনুযায়ী এমন একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার সঙ্গে এমন বিষয় লেখাটিতে উত্থাপন না করলেই অনেক ভালো হতো।
মানবিক হৃদ ও মননে লেখা কবিতাটির জন্য প্রিয় কবির প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন, প্রীতি ও শুভেচ্ছা।