প্রিয় কবি এম. মাহবুব মুকুল মহাশয়ের লেখাটি পাঠ করে এলাম। বড়ই মর্মন্তুদ কবিতার শব্ধ ধ্বনি। মনে পড়ে গেল সেনাবাহিনীর সেই সিপাইটির ফেসবুকে পোষ্ট করা সেই ভিডিও টির কথা যিনি অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে পোষ্টিং ছিলেন আর নিম্নমানের খাবার নিয়ে প্রমাণসহ পোষ্ট টি দিয়েছিলেন। মন গ্লানি আর দুঃখে ভরে গেল।
যে সৈনিক দেশত্মাবোধকতায় উন্মত্ততায় নিজের জীবন বলিদান করে থাকে যে সৈনিক তার সন্তান সন্তনাদি পরিবার বন্ধু বান্ধব বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র দেশমাতৃকার সেবার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে থাকে তার সে দানকে শুধুমাত্র অঙ্কের হিসাবে মেটানো খুবই কঠিন। অভ্যন্তরে থেকে উপলব্ধি করা আর বাহির থেকে শুধুমাত্র আবেগপ্রবণতার বশে কিছু উপলব্ধি- আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে তাতে।
আজ প্রবল প্রতিযোগিতার যুগে এম এ, বি এ পাশ করা ছেলেরাও সেনাবাহিনীতে একটা পিওনের পোষ্ট পাবার জন্য ব্যাকুল। লাইন দেয়, জিম দৌড় ইত্যাদিতে কঠোর সাধনা করে থাকে শরীরকে সেনাবাহিনীর অনুকূল করবার জন্য কারণ এসবে পারঙ্গম হলে সেনাবাহিনীর চাকরি মেধা কম থাকলেও হতেই পারে বলে তারা বিশ্বাস করে থাকে। কেউ কেউ অনেক শিক্ষা নিয়ে সর্বসাকুল্যে হয়তো বা একটা তৃতীয় শ্রেণীর চাকরি যোগাতে সক্ষম ও হয়।
সৈনিক মাত্রই আর দশজন সাধারণ লোকের কাছে অনেক অনেক সম্মানের তা সে নেহাত পিয়ন ই হোক বা সুবেদার। তাদের বেশভূষাটাই যথেষ্ট তাদের জন্য। নিয়ম ডিসিপ্লিন সে তো সেনাবাহিনীর অঙ্গ তা সে দুধের বাচ্চাও জানে। সিনিয়ার এর অর্ডার মানেই স্বয়ং ভগবানের নির্দেশ আর সেই নির্দেশে তারা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে রনাঙ্গণে অবতীর্ণ হতে এক মুহূর্ত দ্বিধাবোধ করে না বা পিছপা হয় না।
মনে চলে এলো সেই গানটির কথা-
এ মেরা বতন কী লোগো/
আখো মে ভর লো পানি/
যো শহীদ হুয়ি হ্যায় উনকি/
জরা ইয়াদ করো কুরবানী।
ভাবতে পারেন যে যুবকটি দেশমাতৃকার এমন আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক চেষ্টা চরিত্র করে হাজারটা ডিগ্রী সত্ত্বেও একটি তৃতীয় শ্রেণীর চাকরিতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন আর তার অভ্যন্তরে গিয়ে তিনি কী উপলব্ধি করতে পারলেন!! যা তিনি সেনাবাহিনীর অন্দরে দেখতে পেয়েছেন তা বিষোদ্গারে উগরে দিয়েছেন তার লেখা কবিতায়।
আসলেই কবি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের যে চিত্র তিনি সমাজ সকলে উপহার দিয়েছেন তার লেখা কবিতার মাধ্যমে তা সর্বৈব সত্য। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারেরা তাদের নিম্ন পদাধারী দের মানুষ বলে জ্ঞান করেন না সেখানে তৃতীয় শ্রেণীর একজনের প্রতি তাদের কিরূপ আচরণ হতে পারে কল্পনা করতে পারেন। সেই সব পদস্থ অফিসারেরা তাদের নিজস্ব ফরমায়েশি, তাদের পার্সোনাল বাড়ির কাজ যা নৈতিকতা বিরুদ্ধ নির্বিচারে তাদের দিয়ে করিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে কোনও কারণে সুইপার না এলে আদেশ মোতাফেক তাদের ল্যাট্রিন ও তাদের দিয়ে পরিস্কার করাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না। এমন অনেক তৃতীয় শ্রেণীর সেনা কর্মীকে আমি ঘাস কাটার কাজে কতই না দেখেছি আর সেসময় আমার মনেও এমনই বিরূপতা জন্মেছিল সেনাবাহিনীর প্রতি।
আসলেই আমি এমজন সেনা অফিসারের ছেলে হবার সুবাদে অনেক কাছ থেকে এসব প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলাম। অনেক না বাড়িয়ে শুধুমাত্র দুটি ঘটনার মাধ্যমে আমার বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
এক, তখন আমার বাবা মিজোরামে পোষ্টিং আমি ক্লাস ট্রেনে পড়ি। মা দিদি আর ছোট ভাই কে নিয়ে আমি শিলিগুড়ি থেকে ত্রিপুরা গারোহিলসে পৌঁছাই যেখান থেকে বাবার আমাদের পিক আপ করবার কথা ছিল কিন্তু বাবা আসতে পারে নাই। যাই হোক নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন কোনও অসুবিধা হয় নাই। থাকবার সুবন্ধোবস্ত হয়ে গেল নিমেষেই। অবাক হলাম পরদিন সকালে যখন সেনা পোষাক পরহিত কেউ আমার জুতাটা পালিস করে দিয়ে গেল আমার অনেক আপত্তি সত্ত্বেও। এম টি ও সাহেবের ছেলে বলে কথা। সেই ঘটনাটি এখনও আমার বুকে কাটার মত বিঁধে আছে।
দুই- দিন কয়েক পর ক্যাপ্টেন সাহেবের পার্টিতে বাবা মা-কে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কী হয়েছিল আমার জানা নেই তবে আমার রক্ষণশীলা মা ওখান থেকে ফিরে বাবার উপর অনেক অভিমান করেছিলেন। কেন কী কারণে আমি আজ কিছুটা অনুভব করতে পারি।
আরও অনেক কথা লেখবার ছিল তবে এখন আর পারছি না এখন তাই লেখাটির শেষে একটি কথাই বলবো লেখক কবি অনেক হতাশা নিয়ে এমন চাকরি ছেড়ে এসে কবিতার মাধ্যমে এই সরকার বা সেনাবাহিনীকে হয়তো বা একটি হুঁশিয়ার বার্তা দিতে চেয়েছেন আর দেশ আর দশের কল্যাণে সেনাবাহিনী আরও বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে মানবিক হতে আহ্বান জানিয়েছেন তার লেখা কবিতার মাধ্যমে।
সকলকে আমার শুভ বিজয়ার শুভকামনা রইল। (সম্পাদনা অন্যদিন করে দেব, বানান ভূল থাকতে পারে চেক করবার মত অবস্থায় নাই।)