স্রষ্টা তার সৃষ্টির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাব জড়িত। এই ভূমন্ডল জর আর জীব উভয়ই তার সৃষ্টি। এই আকাশ এই বাতাস পাহাড় নদী নালা সাগর ফুল ফল গুল্ম লতা বৃক্ষ সবই তাহার মহান সৃষ্টি। স্রষ্টা মানুষ গড়েছেন , তাকে একটি সুন্দর হৃদয় মন মনন দিয়ে তারই স্বরূপ গড়তে চেয়েছিলেন। মানুষকে তাই মান আর হুঁশ-জ্ঞান দান করেছেন তিনি। সর্বত্রই তার সুচারু সৃজন, এই পার্থিব জগৎকে তিনি মনমোহিনী রূপে গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু মানুষ, মানুষ কী তার সেই মহান দানগুলি , মান ও হুঁশ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে!! এ প্রশ্নের উত্তর আজ বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সকলেরই জানা রয়েছে। তবুও আলোচনার খাতিরে কিছু বলতেই লাগে তাই বলছি। জল , বায়ু, আকাশ পাহাড় পর্বত, অরণ্য , বাস্তুতন্ত্র সমেত মান আর হুঁশ কিছুই মানুষেরা সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারে না বা পারে নাই।
শিল্পী অনেক গুলি সরস্বতী ঠাকুর যিনি কী না বিদ্যা বা জ্ঞানের দেবী বানিয়ে সেগুলিকে ভেঙে চুরমার করে দিলেন সে কী না স্কুলের হেডমাস্টার কোন এক দেবীর চোখ তিনি
নাকি ট্যারা দেখতে পেয়েছেন। বিদ্যা বা জ্ঞানের দেবী তিনি আর স্কুলের হেডমাস্টার যিনি তার সন্তান রূপী, তিনি কী না তার মা-এর চোখ ট্যারা দেখতে পাচ্ছেন! রূপকের আশ্রয় নিয়ে কবি খুবই সুন্দর ভাবে বর্তমান সমাজের শিক্ষার নামে যে প্রহশণ চলছে তা বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন।
পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে যে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না তা আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আজ বর্তমান সমাজে যে মা বাবা, তাদের সন্তান সকলের জন্য তাদের সর্বস্ব দান করেন, সমর্থের বাহির গিয়ে তারা তাদের শিক্ষিত করতে, একটু ভালো করে রাখতে সারা জীবনের রোজগার বা তার ও অধিক অর্থ ব্যয় করে থাকেন, সেই বাবা আর মা বৃদ্ধ বয়সে যখন অক্ষমতা গ্রাস করে তাদের শরীর সেই সময় সন্তানেরা সব কিছু ভুলে গিয়ে তাদের বাবা বা মা'কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে কত না কষ্ট দিয়ে থাকে তাদেরকে। যে জন্মদাত্রী জননী দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে তাকে ভুমিষ্ট করেছেন তাকে লালন পালন করেছেন পরম স্নেহে তাকেই আজ ভুলে যায় অপত্যেরা। শিল্পী বলেছেন ,"যার চোখ আপনি ট্যারা দেখতে পেয়েছেন তিনি আমার মা", কবিতায় শিল্পী হতাশ হয়ে মদ খেতে খেতে খেদোক্তি করে বলেছেন আজকাল সব সন্তানের কাছেই তাদের মায়েয়ের চোখ একটু ট্যারা লাগে।আর শিক্ষার এ করুণ হাল বুঝতে পেরে তিনি তার তৈরি সব কটি মূর্তি ভেঙে ফেলে দিলেন। শিল্পী বুঝতে পেরেছেন কেন আজ এই সমাজ অপদার্থে ভরে গেছে।
তারপরই শিল্পী মানসচক্ষে দেখলেন, ট্যারা চোখে তাকে দেখছে আকাশ, স্রষ্টার সৃষ্টিতে বিষ, উঠে আসছে ধূসর গোধূলি লগ্ন। খেয়াল করবেন কবি কৌশলে, "ধূসর" শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আপনারা অবশ্যই বুঝে গিয়েছেন কবি ঠিক কী বলতে চেয়েছেন এ শব্দটি ব্যবহার করে। তাও আলোচনার খাতিরে না হয় আমিই বলি। আজ জল, আকাশ , বায়ু সবই প্রদূশিত হয়ে পড়েছে মানুষে্র অবিমৃশ্যকারীতার কারণে। সন্ধ্যায় আজ কুয়াসার বদলে ধোঁয়াসা তৈরি হয়। প্রাণবায়ু ভরে গিয়েছে অপ্রাণবায়ু কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ক্লোরিন আর ক্লোরোফ্লুরো কার্বনে। এ সবই কবি যেন তার মানসচোখে দেখতে পাচ্ছেন অর্থাৎ তিনি আমাকে আপনাকে আমাদের এই অবিমৃষ্যকারী ব্যবহারের পরিণাম আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন।।
আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে লেখাটি নিয়ে তবে কবি কবিতায় যেটুকু বর্ণনা করতে চেয়েছেন সেটুকু কে নিয়ে একটু নাড়াঘাটা করে থেমে গেলাম।
এত সুন্দর এটি মানবতাবাদী কবিতা উপহার দেবার জন্য কবিকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।