গদ্য কবিতায় কবি জীবনের এক শাশ্বত চিরন্তন বাস্তবতা উন্মোচন করেছেন। সময় ও অসময়, সুখ দুঃখ নিয়ে জীবনবোধের ভারি চমৎকার লেখা। একজন মানুষের জীবন কখনো সুসময় আবার কখনো বা দুঃসময়ে জীবন অতিবাহিত হয়। সুসময় যখন আসে প্রাপ্তিযোগে জীবন তখন ধন ধান্যে পূর্ণতায় ভরে ওঠে। অতিশষ্যে উচ্ছ্বাস আনন্দে জীবন তখন বাঁধন ছাড়া বল্গাবিহীন হয়ে ওঠে বেশির ভাগ মানুষেরই। ভোগে ডুবে যেতে মন উত্তাল হয়ে ওঠে। শতকরা নিরানব্বই শতাংশ মানুষই এমন একটি সময়, এমন একটি জীবনের স্বপ্ন দেখে থাকেন এবং জীবনের একসময় বেশির ভাগ মানুষের জীবনেই এমন সুসময় ধরা দিয়ে থাকে।
কিন্তু সুসময় কি চিরস্থায়ী হতে পারে! না, তা কোনো প্রকারেই সম্ভব নয়। দিনের পর যেমন রাত আসবেই ঠিক তেমনই সুখ আর দুঃখ মানুষের জীবনে চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে। সুখ দুঃখ, উত্থান পতন জীবনের শাশ্বত নিয়ম বা রীতি। এমন দুঃখের কাল বা সময়কেই মানুষ অসময় বলে থাকে। একশো শতাংশ মানুষ এই অসময় কে কোনোভাবেই পছন্দ করে না। সময় কে দোষারোপ করে থাকে। তারা ভুলে যায় যে মানুষের জীবনে সুখ আর দুঃখ, এ এক অমোঘ সত্য।
কবি খুবই সুন্দর একটি ঘটনার উল্লেখ করে ব্যপারটি সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে দুঃখের মেঘ একটু একটু করে আকাশে জমা হতে থাকে। একসময় তা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টির আকারে ঝরে পরে। বৃষ্টির জলে নদী নালা খাল বিল ভরে যায়। আনন্দে উৎফুল্লতায় আপ্লুত হয়ে খাতে তরঙ্গায়িত নেচে নেচে জল প্রবাহিত হতে থাকে। তবে পুনরায় সেই বিপরীত প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সূর্যের প্রখর তাপে নদী নালা খাল বিল থেকে জল বাষ্পীভূত হতে হতে নদী নালা খাল বিল পুনরায় প্রায় জলহীন রুক্ষ রুগ্ন হয়ে পরে। তবে সে কাল ও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। দুঃখের সেই জলীয় বাষ্প আকাশে ঘনীভূত হয়ে পুনরায় বৃষ্টির আকারে ঝরে পরে সেগুলি পুনরায় ভরাট করে দেয়।
এখানে লক্ষণীয় যে উভয় প্রক্রিয়া কিন্তু কোনো সময়েই স্থির বা স্থবির হয় না। একটি পরিণত হলেই বিপরীত ক্রিয়াটি শুরু হয়ে যায়।
মানুষের জীবনটা এমনই। সুখ যখন পরিণত ঠিক সেই মুহূর্তেই খুবই মন্থর গতিতে দুঃখের জলীয় বাস্পের উত্থাপনের শুরু। সুখের দিনে আনন্দ উল্লাস আর প্রয়োজনাতীত ভোগ আর বিলাসে মানুষ মত্ত হয়ে ওঠে। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই দুঃখের কালো মেঘ দানা বাঁধতে শুরু করে। অনেক মানুষই এমন সময় মদ মদিরা ও নারীসঙ্গে ডুবে যায়। বিলাস বাহুল্য সর্বস্ব জীবনের অভ্যন্তরে চোরা স্রোতের মতই অসময়ের কালো ছায়া অত্যন্ত ধীর গতিতে বিস্তার করতে শুরু করে।
কিন্তু ওই যে জীবনের অমোঘ সত্য সুখের দিন অতিক্রান্তে দুঃখ সে তো আসবেই আসবে। সুসময় অন্তে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একদিন অসময় গ্রাস করে নেয় প্রাণসত্তা। কেউ রোগে ভোগে, কেউ ব্যাঙ্কের বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। কেউ কেউ আবার নানান জালিয়াতিতে ফেঁসে জেল হাজতে যায়। কারণ অতিরিক্ত ধন অর্জনের জন্য সে সময় অনেকেই নানান বেআইনি ব্যাবসা বা কর্মে লিপ্ত হয়। আরো চাই আরো চাই বাসনায় সুসময় ক্ষয় হতে হতে এক সময় তা শেষ হয়ে যায়। অসময় গ্রাস করে ব্যক্তিসত্তাকে।
অনেকেই এই সময় ভেঙে পরে আর ভেঙে পরলে দুঃখ বাড়ে বই কমে যায় না। কবি তাই তার লেখা কবিতায় জীবনের এই অমোঘ সত্য কে মেনে নিয়ে তার মোকাবিলা করতে উৎসাহী করতে চেয়েছেন মানুষ জন কে। সুখ দুঃখ চক্রাকারে আবর্তিত হয় সেকথা সকলকে মাথায় রেখে সুখের দিনে সকলকে অনন্দের আতিশয্যে ডুবে যেতে যেমন নিষেধ করেছেন তেমনই দুঃখের সময় কে হাসিমুখে বরণ করে নিতে বলেছেন। সেভাবে সুখ দুঃখ নিয়ে চলতে পারলেই জীবন আনন্দময় হয়ে ওঠে।
আলোচনায় দুঃখের কাল সম্বন্ধে আমার উপলব্ধি দুকথায় তুলে ধরতে চাই। রাত যত নিশুতি বা গভীর ঊষা বা ভোর ততই সন্নিকটে । অর্থাৎ দুঃখ যত গভীর থেকে গভীরতম হয় জানবেন সুখের দিন সন্নিকটে।
ভারি চমৎকার বিষয়ের অবতারণায় কবির লেখা কবিতাটি শিক্ষণীয় একটি সুন্দর কবিতা। এমন সুন্দর কবিতা লেখবার জন্য কবির প্রতি রইল আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।