শূন্যতার ভার অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বিকশিত লেখাটিতে। মুগ্ধ আমি। সত্যই তো এমন আপনজন যদি তার প্রেম প্রীতি সোহাগ মাখা হাতটি সরিয়ে নেয় বক্ষ হতে কতটা শূন্যতা হৃদয় গ্রাস করতে পারে বলি হওয়া ব্যক্তিটি ব্যতীত আর কেই বা তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হতে পারে! খাদ্য বাসস্থান ব্যতীত একজন মানুষ সে নর বা নারী ই হোক না কেন, স্নেহ মায়া ভালোবাসার বন্ধনে কোনো একটি মমতা মাখা বাহুডোরে জীবনটা সুখ শান্তিতে অতিবাহিত করতে চায়।
আর এ কারণেই মানব সৃষ্ট সমাজে বিবাহ বা নিকাহ নামক দুটি হাত এক করবার নিয়ম নীতি সুস্থ বোধে সমাজ বিধায় প্রাচীন কাল হতে আজও প্রবাহমান। পুরানো যুগে বিবাহ পূর্বক প্রেম মোহাব্বত তৎপচ্চাৎ বিবাহ বা নিকাহের ঘটনা কদাচিৎ ঘটতো না তা নয় তবে আজকের যুগে খুল্লামখুল্লা আবহে বিবাহ পূর্বক প্রেম পরিণয় প্রায় প্রত্যেক প্রাণের সাথেই ঘটে থাকে। সে প্রেম পূর্বক বিবাহই হোক বা সম্বন্ধ পূর্বক, আলোচনা এ নিয়ে নয়। আলোচনা হলো বিচ্ছেদে একটি পরিবারের বিয়োগাত্মক প্রভাব পরিণতি নিয়ে।
স্ত্রী বা স্বামী দুজনের একজন কেহ যদি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই জীবন থেকে পৃথক অবস্থানে চলে যায়, প্রেম ভালোবাসার যদি অন্তর্ধান হয়ে যায় সেই পরিস্থিতিতে একজন মানুষের মন ও হৃদয়ে তার কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েই কবির লেখা কবিতাটি আর আলোচনা। ব্যথিত ভাবে কবি তার লেখা কবিতায় লিখেছেন-
আমার কাছে জমা রাখা
তোমার হাতটি নিলে কেড়ে,
'একার সাথে লড়াই করে
আমি উঠছি না আর পেরে।
আমার মনটা বেজায় বেজার
শূন্য মনই বুঝরে পারে
শূন্যের এত ভার।
স্বামী স্ত্রী কলহ সে তো এক স্বাভাবিক ব্যপার। শতকরা নিরানব্বই শতাংশ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ বিদ্যমান। তবে এর ভিতরই বয়ে চলে প্রেমের ফল্গুধারা। একের সামান্য অসুস্থতায় আর এক অস্থির হয়ে উঠে থাকে। ডাক্তার বৈদ্য থেকে শুরু করে অধিক অসুস্থতায় স্বামী জমি জমা বিক্রি করে হলেও চিকিৎসা করে থাকেন স্ত্রীর।
প্রেম যেন কত শত দম্পত্য কলহ অতিক্রম করে চোরা স্রোতে প্রবাহিত হয় স্বাভাবিক প্রত্যেকটি স্বামী স্ত্রীর মন ও হৃদয়ে।
একের বিপদে আর এক অস্থির হয়ে ওঠেন ও বিপদ কাটাতে উভয়ে উভয় কে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না।অর্থাভাব হলে সাধের মূল্যবান অলঙ্কার বিক্রি করে বা বন্ধকিতে রেখে স্ত্রী স্বামীর চিকিৎসায় সে অর্থ ব্যায় করেন বিনা বাক্য ব্যায়ে।
এখানে লক্ষণীয় বিপদ একসময় কেটে গেলে পুনরায় কিন্তু উভয়ে উভয়ের সাথে মতভেদে কলহে ডুবে যান। আগে বা পরে একটুও তারতম্য ঘটে না পরিস্থিতির।কখনো কখনো রাগ অভিমানে দু-জনে পুনরায় বিপরীত মুখে সজ্জায় অবস্থান করে থাকেন। এটাই বাস্তবিক স্বামী স্ত্রীর প্রেম ভালোবাসা মোহাব্বত। কিন্তু একজন স্থায়ী ভাবে যদি আর একজনের থেকে সত্যই পৃথক হয়ে যায় তখন আর একজনের মনে শূন্যতা গ্রাস করে, বিষাদগ্রস্থ হয়ে ওঠে মন। এই শূন্যতার ভার যে কতটা সেটি বোঝাতে কবি লিখেছেন-
এখন আমার নিত্য হাহাকার
মন ভর্তি নীরবতা,
জীবন এখন মেঘলা গগন
নেতিয়ে পড়া লতা।
বেসুরো বয়ান শোনায়
মরচে পরা তার।
এমন একটি মানুষ যদি হটাও করে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাহলে আর একটি মানুষের মনের অবস্থা কতটা শোচনীয় হতে পারে তা নিয়েই কবিতাটির অবতারণা। সময় যেন আর কাটতেই চায় না সেসময়। পূর্বের ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ মনের ভিতর ভিড় জমায়। ভুল বোঝাবুঝির মুহুর্তগুলি হৃদয় কে ক্ষত বিক্ষত করে তোলে। নিজেই নিজের ভুলগুলি চিহ্নিত করতে পারে মানুষ এ সময়। অসহনীয় হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গতা।
নিজের ভুলগুলি বুঝতে পারলেও হাত কামড়ানো ছাড়া কিছুই আর করবার থাকে না। কালক্ষেপণ করাই বোঝা হয়ে ওঠে সেই সময়।
কবি লিখেছেন-
স্মৃতির ভাগাড়ে একনাগাড়ে
বেঁচে থাকা যে দায়,
টানা দুখ-মৌসুমে নোনা চুমে
বিষন্নতার অধ্যায়।
একঘেয়ে সময় এখন
নীরস সাতটি বার।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন মানসিক আঘাত সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মঘাতী প্রর্যন্ত হয়ে থাকে। লেখাটিতে সে ঘটনার উল্লেখ না থাকলেও এমন বিষাদগ্রস্ত পরিস্থিতিতে অনেকেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন আর দেখে থাকি।
লেখাটিতে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেই পরিস্থিতিতে মনের কতটা সকরুণ অবস্থা হতে পারে সেটি তুলে ধরে এমন একটি সুন্দর কবিতা উপহার দেবার জন্য লেখক কবির প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।