লেখক এস আই তানভী মহাশয়ের পৃথিবী রূপায়ণে লেখাটি শ্রমজীবী সম্প্রদায় ও সমাজে তাদের অবস্থান নিয়ে লেখা। মহান স্রষ্টা কিন্তু অগণিত ছায়ামণ্ডল নীহারিকা সৃষ্টি করে আর তার মাঝে কিছু কিছু গ্রহে জীবজগৎ আর আপনার প্রতিভূ কিছু কিছু বুদ্ধিমান জীব যেমন পৃথিবীতে মানুষ সম্প্রদায় সৃষ্টি করেই খান্ত হয়েছিলেন। জীবন ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ, খাদ্য ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ করে আরও বহু বহুর সঙ্গে সুন্দর এই বসুন্ধরা সৃষ্টি করেছিলেন। আর জীবন উন্নত থেকে উন্নততর করে গড়ে তুলতে বাকিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের বুদ্ধিবল তার দেওয়া উপাদান সমূহ ব্যবহার করে বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারে তাদেরই সৃষ্টি করে নিতে।
ধীরে ধীরে মানুষ যত উন্নত হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানের ব্যাবহারিক প্রয়োগে মানুষ প্রজাতি নানান নানান আবিষ্কার করে জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে নিয়েছে। এক সময়কার ডিঙি নৌকা যা নদীপথে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল আজ তা বিশাল সুসজ্জিত কম ঝুঁকিপূর্ণ বিলাস বহুল জাহাজে রূপান্তরিত হয়েছে। কাঠ ও শনের কুটির টিনের আবিস্কারে টিনের চালা, তা থেকে স্টিল কংক্রিটে তৈরি আকাশচুম্বি অট্টালিকায় প্রসারিত।
বেতার, টেলিগ্রাম, টেলিগ্রাফ বিকশিত টিভি, স্ম্রাট ফোন, থ্রি জি, ফোর জি, ফাইভ জিতে।
এসব রূপান্তরের কথা লিখতে গেলে পাতার পর পাতা লিখতে হবে।
তবে সভ্যতা যতই অগ্রসর হয়েছে তার সাথে সাথে সামাজিক বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছে তার চেয়েও অনেক গুন বেশি। মধ্য যুগ থেকে শুরু করে আজ আধুনিক যুগে তা ক্রমশঃ আরোহনের পথে। সমাজ ব্যবস্থা চালু হবার পর থেকেই সমাজে এক শ্রেণী যারা ধন আর বলে বলিয়ান আর এক শ্রেণী যাদের কাছে ধন তো দূরের কথা, পরিবারের অন্নের সংস্থান করতে দিন রাত তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় নানান কল কারখানা ও বিলাস বহুল অট্টালিকা তৈরি করেতে। প্রচণ্ড রোদের তাপে দিনভর পিচঢালা রাস্তা তৈরি করে অনেকে অন্নের সংস্থান করে থাকে। তাদের কেউ বা কৃষক, কেউ মিস্ত্রি, কুলি মজুর মুটে বা সুইপার বা সাফাই কর্মী।
এরা হলো শ্রমিক সম্প্রদায়।
সত্যি কথা বলতে কাজের বিনিময়ে অল্প কিছু পয়সা রোজগার (অনেক ক্ষেত্রেই তা ন্যাজ্য মজুরির কম) হলেও সমাজে এদের স্থান অত্যন্ত নিম্ন। এরা সকল সময়ই সমাজের বঞ্চিত সম্প্রদায়। এরা অনেকেই বস্তিতে দূষিত পরিবেশে ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতে বাধ্য হয়। তথাকথিত ধনী লোকেদের সমাজ এদের নিকৃষ্ট জীব বলেই মনে করে থাকে। তারা যেমন কাজের বিনিময়ে তাদেরকে ন্যায্য মজুরি দেয় না তেমনই অতি বর্বর ভাষায় গালাগালি করতেও ছাড়ে না। তাদের সুখ দুঃখের প্রতি তারা চরম উদাসীন ভাব প্রকাশ করে থাকে। এক কথায় তারা তাদেরকে মানুষ বলে ভাবতেই পারে না।
কবি তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে এই শ্রমিক সম্প্রদায়ের শরীরে যে লোহিত রক্ত প্রবাহিত ধনী সম্প্রদায়ের প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে সেই একই রক্ত প্রবাহিত হয়। কবি অতিশয় খেদের সাথে তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, যেই গরিব শ্রমিক সম্প্রদায় কে তারা তুচ্ছতার চোখে দেখে থাকে, তাদের অবজ্ঞা করে থাকে প্রতিনিয়তই, সেই মানুষ গুলির কল্যাণেই কিন্তু প্রসাদপম অট্টালিকা তৈরি হয়ে থাকে। রোদ জল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারাই কিন্তু সকল নির্মাণ কার্য সম্পন্ন করে থাকে। এই পৃথিবীতে এমন কোনো নির্মান নেই যাএসব লোকের রক্তঝরা শ্রম রহিত। শুধুমাত্র সামান্য অর্থই এর পরিপূরক কখনোই হতে পারে না।
কবি তার লেখা কবিতায় হুঁশিয়ারি দিয়ে তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে এই শ্রমিক সম্প্রদায় ব্যাতিত এই পৃথিবীতে কিছুই সম্ভব নয়। কৃষক শ্রমিক সবাই যদি তাদের এই শ্রম দান থেকে বিরত থাকেন তবে এইসব লোকদের বিলাস বাহুল্যের অতিশয্য দুদিনেই চুপসে যাবে। এমন চলতে থাকলে একসময় এই পৃথিবী হয়ে উঠবে মহাকাশের বুকে ভ্রাম্যমান প্রাণশূণ্য এক গ্রহ মাত্র। সেই কারণেই এই বঞ্চিত শোষিত মানুষগুলির সঠিক সামাজিক মূল্যায়ণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
অব্যাক্ত কণ্ঠে তিনি এই সকল শ্রমিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের সহানুভূতিশীল হতে যেমন আহ্বান করেছেন তেমনি তাদের সুখ দুঃখের প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল আর মানবিক হতে তাদের অনুরোধ করছেন।
লেখাটি একবার পাঠ করেই খুবই ভালো লাগলো, লিখতে মন হলো। মানবতাবাদী সুন্দর ভাবনার কবিতা লেখবার জন্য প্রিয় কবির জন্য রইলো আমার আন্তরিক ভালোবাসা আর অভিনন্দন।