না, শুধুমাত্র কম্পিটিশন প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কারণে নৈতিকতার এতবড় স্খলন এতখানি অধঃপতন কখনোই মেনে নেওয়া যেতে পারে না। দয়া মায়া মমতা স্নেহ ভালোবাসা এগুলি মানুষের সহজাত প্রকৃতি। একজন গুণ্ডা বদমাশ শয়তান মানুষের মনেও তার ঘর পরিবারের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি মায়া মমতা ভালোবাসা থেকে থাকে। তাহলে সুস্থ সমাজবদ্ধ মানুষের মন থেকে এইসব গুণাবলী কী করে বিলুপ্তির পথে যেতে পারে!! এতটা আত্মকেন্দ্রিকতা কিভাবে গ্রাস করতে পারে একজন মানুষের মন ও হৃদয়ে। মানুষে মানুষে এত বিভেদতা কেনই বা প্রকট হয়ে উঠতে পারে!
একসময়কার যৌথ পরিবার আজ নিতান্ত ফ্ল্যাট কালচারে পরিণত। স্থানের সঙ্কুলান হেতু তা হতেই পারে তবে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভাব ভালোবাসা, একে অন্যের সহিত অন্তরঙ্গতা তাই বলে এসবও হারিয়ে যাবে অকারণেই। আজ প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘর পরিবার নিয়েই ব্যস্ত। কেউ কাহারো খোঁজ খবর রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। সৌহার্দ্য সম্প্রীতি না থাকার কারণে একই এপার্টমেন্টের বিভিন্ন ফ্লোরে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকা লোকেরা একে অন্যের প্রতি বৈরী বা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করে থাকে। বিপদ আপদ তো দূরের কথা এ বাড়ির লোক ও বাড়ির লোককে চেনেন ই না।
একটা সময় ছিল আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী এরা একে অপরের অনেক নিকট জন ছিল। একে অন্যের সুখ দুঃখের খবর রাখত। বিপদে আপদে পাশে থাকতো। এক একটা মহল্লা যেন একটা অনেক বৃহৎ পরিবারে পরিণত ছিল। আজ আর তেমন পরিস্থিতি নেই। শুধুই কী তাই!! মানুষেরা আজ নিজ নিজ পিতা মাতার প্রতি সংবেদনশীল নয় পর্যন্ত। যে পিতা মাতা অনেক স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে সারাটা জীবন অনেক বিপদসঙ্কুল পথ পার করে, সামর্থ্যের উব্ধে উঠে তাদের সন্তান সন্তনাদিকে মানুষের মত মানুষ গড়ে তুলবার প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন, যে গর্ভধারিণী মা দশ মাস দশ দিন জঠরে রেখে তাকে জন্ম দিয়ে বাল্য থেকে শৈশব অনেক স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে তাকে বড় করে তুলেছেন, সেই সন্তানেরাই তাদের জরাকালে সেসব কথা ভুলে গিয়ে তাদের সুষ্ট ভাবে দেখভাল করবার দায়িত্ব টুকু পর্যন্ত অনুভব করে না। কেহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়, কেহ তাদের নামে থাকা বিষয় আসয় কেড়ে নেবার জন্য তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে, কেহ সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়ে থাকে। অনেক অনেক দেখেছি এমন ঘটনা।
মানুষ আজ যেন ক্রমে ক্রমে বিবেক রহিত হয়ে পড়ছে। আর এসব অনুধাবণ করেই এমন বিষয় বস্তু নিয়ে কবি কবিতাটির অবতারণা করেছেন। কবির মনে হয়েছে এ সবই যেন সমাজ সভ্যতার ধ্বংসের অশনি সংকেত। কবি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন-
অচেনা সংকেত জালে ধেয়ে চলে সময়, সম্পর্ক মূল্যহীন (চলবে)