মানব সভ্যতা আজ চরম উৎকর্ষ সাধিত উন্নতিতে আকাশ ছোঁয়া। বিজ্ঞানের চুরান্ত অগ্রগতির ফলে দূর আজ আর দূর নেই। ল্যাপটপেই সারা দুনিয়া। চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রভূত উন্নতি সাধনে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধিই আজ নিরাময় যোগ্য আর সে কারণে মানুষের গড় আয়ু ও অনেক বেড়ে গিয়েছে। জল স্থল নভোমন্ডল কোথায় না বিস্তার নেই আজ মানব সভ্যতার। পৃথিবী ছেড়ে চাঁদ মঙ্গল আজ বিজ্ঞানীরা মানুষের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলবার প্রচেষ্টায় নিরত। মানব জীবন আজ অনেক বেশি জাঁকজমক পূর্ণ। মুঠোফোনে দুর্দান্ত জীবন। শুধু নগর শহর নয় গ্রাম মফস্বলেও আজ বিলাস বাহুল্যের ছড়াছড়ি। শুধুই কী এসব!! বিজ্ঞানীরা আজ প্রায় মানুষের সমকক্ষ বা তার চেয়েও অধিক সক্ষমতা সম্পন্ন রোবোটিক হিউম্যান বানিয়ে ফেলেছেন। ফোটন রকেট বানাবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন হালে তারা। বিজ্ঞানের আজ জয় জয়াকার। অদূর ভবিষ্যতে না জানি আরও কত কিছু আবিস্কার হবে এই দুনিয়ায়।
কতই না ভালো লাগে এসব শুনতে বা দেখতে, গর্ব হয় কিন্তু, কিন্তু সভ্যতা যত উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে , জীবন যতই সরল তরল চাকচিক্যপূর্ণ হয়ে উঠছে সভ্যতা যতই অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে মানুষে মানুষে দূরত্ব ঠিক তেমন ওই ক্রমশই দূর থেকে দূর হতে হতে আজ তলানীতে এসে ঠেকেছে। মানুষ আজ আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর হয়ে উঠেছে। ভালোবাসা প্রেম প্রীতির বন্ধন ছুটে গেছে প্রায় প্রতিটি মানুষের মন আর মনন হতে। মাঝে মধ্যেই সোসাল মিডিয়ায় তা প্রতিফলিত হয়ে থাকে। দূর্থটনাগ্রস্থ মানুষটিকে চটজলদি হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে তাকে ঘিরে থাকা মানুষজন ভিডিও করতেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। মাস ছয়েক আগে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখে আমি নিজেই মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। সে অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েক মাস লেগেছিল আমার। মানে সে ভিডিও ক্লিপের ছবি যতদিন না ফিকে হয়েছিল আমার মন থেকে। প্রচন্ড অবসাদে ভুগেছিলাম আমি। আজও চিন্তা করলে আত্মা কেঁপে ওঠে আমার। কী ছিল সেই ভিডিও ক্লিপস আর কেনই বা তা উত্থাপন করলাম এ লেখায় তা বলছি।
একটি আট থেকে নয় বছরের মেয়েকে হাত পা বেঁধে উল্টা করে ঝুলিয়ে কে জানিনা ঘরের মধ্যে বেল্ট দিয়ে বেদম প্রহার করছে। মেয়েটি চরম যন্ত্রণায় চিৎকার করছে আর কুঁকড়ে কুঁকড়ে উঠছে। এমন চলতে চলতে মেয়েটি একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জ্ঞান হারালো কী মরে গেল জানি না।
এবার আসি সে প্রসঙ্গে কেন আমি আমার এ লেখায় উত্থাপন করলাম। সেই ভিডিও ক্লিপস সজল চোখে দেখতে দেখতেই আমি ভাবছিলাম মানুষ কতই না ভয়ঙ্কর!! একজন যে বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারতো সে তা না করে অতক্ষণ ধরে কিনা তার ভিডিও করে গেল আর ভাইরাল করতে সোসাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিতে পারলো। কতটা বর্বরতা কতটা অমানুষিকতা থাকলে একজন মানুষ সেই কাজ করতে পারে!! আজ মানুষ কতটা অমানবিক আর স্বার্থান্বেষী হয়ে উঠেছে তা বোঝাবার কারণেই এ ঘটনার উত্থাপন। (চলবে)