ঐ যে দেখ কুমোরটুলিতে হাটের মেলা বসেছে।
চাঁদের আলোর জ্যোৎস্নাতে এটার স্বরূপ মেতেছে।
অনেক অনেক বাহারি সামগ্রী আর নতুন কিছুর আকর্ষণ।
রঙবেরঙের জিনিসপত্র সবকিছু মেলার সর্বস্থল।
মাটির পাত্র, হাড়ি-কলসি আর কত কী,
এসব যেন ফিকে লাগছে মেলার মূল কেন্দ্রের সামনে যেটি।
হঠাৎ সামনে একটা বৃদ্ধ লোক আসন পেতে ডাকছে,
ছোট একটা জায়গা, নেই বেশী দ্রব্যাদি,
                    সবাই যেন এড়িয়ে চলছে।
আমি কিন্তু এড়িয়ে যায়নি।
একটা বৃদ্ধ লোক মাটির পুতুল বিক্রয় করছে।
ইনি সেই লোকটি যার জন্য মেলাতে অপেক্ষা করে থাকতাম
সেই স্বল্প পাকা চুল, অমলিন হাসি-
তবে চামড়া কিছুটা কুচকে গেছে
গুটি গুটি পায়ে উনার কাছে গিয়ে আলতো সুরে বললাম -
এটা কী ?
উনি আমাকে প্রথমে চিনতে পারেনি।
আমিই ধরা দিয়েছি।
অস্পষ্ট ধোঁয়াশায়, বুকে সংশয়ে লোকটি বলল -
এটা মাটির পুতুল।
আমার হৃদয়ে যেন খুশীর জোয়ার এল,
অতীতের স্মৃতিচারণায় আমার মন ভরে গেল।
আমার ছোট্টবেলার সঙ্গী ছিল এই মাটির পুতুল।
কতনা সঙ্গ দিয়েছি তার সাথে।
বিছানায় তাকে সঙ্গী করে কতনা মনের কথা বলেছি।
জানি এটি নিষ্প্রাণ, জড়।
তার অস্তিত্ব বেশী দিনের না,
কারণ এটি মাটির তৈরী, ক্ষণভঙ্গুর।
বাল্যকালের সখা ছিল যে
                           জানি সে কয়েকদিনের স্মৃতি,
এখন অতীতের আবেগ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থনে আছি
                           জানি আর করব কী।
এখন বয়সের ধাপ পেরিয়ে এগুলিকে দিয়ে যেন ভরে না।
কিন্তু মেলায় দেখা হওয়ার পর আর না নিয়ে পারলাম না।
অতীতের স্মৃতি যেন পুনরায় মোর দোরগোরায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আহারে আমার শৈশব, আহারে মোর ছোট্টবেলা।
মেলার মূল দিকটা ছিল এটাই।
আমাকে নিয়ে হল এটা শুরু।
আর কেউ নেই।
কত স্বপ্ন ছিল উনার বুকে,
কিন্তু আমি ছাড়া কেউ ধরেনি।
আমি পয়সা দিতে চেয়েছিলাম-
কিন্তু তিনি একটুকুও পয়সা নিলেননা।
ভালোবাসা ও সমাদরের অনন্য নজির রাখলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে ব্যর্থ তিনি।
মেলার জমকও শেষ হওয়ার পথে।
অবশেষে এক নিরাশাভরা রাত্রি নিয়ে বৃদ্ধ লোকটি নিজের আখের গোছালো।