আসিল রে, বৃষ্টি আসিল,
   ফোঁটায় ফোঁটায় টনক নড়িল।
গাত্র ভরিয়া শ্রাবণ ঝরিয়া তনু ভরিবে কীসে?
গড়িয়া গড়িয়া পত্র কুচকিয়া ফোঁটা পড়িবে নীচে।
ধারণ করিবে সেই যাহা, তাহার যে অধিকার
বিন্দু বিন্দু অঝোর ধারে সাগর ভরিবে যেথা।
ভিজিবে শস্য ভিজিবে মাঠ ভিজিবে জনবসতি
ওহে তাহার নীচে গান গাহিয়া যায় পাখিরা কুঞ্জায়ে।
খড়খড়ে টিনের শুকনো পাত তপ্ত উষ্ণ রত
নামিবে বর্ষণ ঝমঝমিয়ে জ্বলিবে ঘরের চার দেওয়াল যত।
পড়িয়া পড়িয়া সন্তরিয়া সন্তরিয়া ভিজিবে এ মরু
গরম দাওয়ায় বাষ্প হইয়া উবে যাবে দরুন।
ভেজা ভেজা মাটি সোদা সোদা গন্ধ ধরিবে আবরণ
শামুক-ঝিনুক, নুড়ি কাকর খুলিবে খোলস।
টপটপ গমগম ছোট্ট ফোঁটা কী করিবে নীচে?
পাথরের বুকে শুষে গিয়া নিমিষে মিশিবে পিঠে।
পড়িবে ফোঁটা একলা হয়ে গড়িয়া কী করিবে ভাই?
সবুজ ঘাসে মাথা গুজে না বেরোবার যে ঠাই।
পড়িল রে! পড়িল রে!
একটি ফোঁটা ছোট্ট প্রাণ কতটুকু তাহার আয়ু
এই বৃহত্ বসুন্ধরায় অপেক্ষা করিতেছে,
     তাহার মতো শীর্ণ শীর্ণ পিছু।
নামিবে শিলা জমিবে তুষার প্রকৃতির দেহাবরন
শুনিবে মজ্জা দেহ সজ্জা রইবে চিরন্তন।
ধন্য কী সেই মহান আগ্নেয়গিরি!
যার নাহি মস্তক , নাহি পুচ্ছ,
মুখ দিয়া বাহির করে তাহার উর্জা অনবরত।
গোগ্রাসে গিলিবে লালা উপরিবে গরম তপ্ত উদরে
একটি ফোঁটা বড্ড একা পড়িতেই মারা পড়িবে।
গিলে খাবে! গিলে খাবে! আস্ত ঝর্ণাধারা
হবে ইহাতে প্রতিফলন,
টন টন জলের বোঝা পড়িবে অঝোরধারা।
বলিবে ফোঁটা পাতাকে মিনতি,
"আমার ভারে তুমি কেহ দাও সাড়া? আমার চাপে কেন হও নত"?
অবুঝ সবুজ নাই কোনো বোধ। খায় শুধু সবুজ।
নড়ে যায় অববরত।
গভীর মহাসাগর ফোঁটাকে করিয়া প্রশ্ন,
"আমি কেন এত বৃহত?
জলের উচু উচু ঢেউ আছড়ে পড়ে মোতে,
তবুও কেন আমি শান্ত"?
বেচারা ফোঁটা জ্বলিয়া উঠে চকচক করিয়া
বলে, "তোমার বিশালতার চাবি
আমার ফোঁটা ফোঁটা কায়াকাঠি"।
আমার গর্ভে তোমার রূপ বাঁধা,
তোমাতে আমি সঞ্চয় করেছি আমার রস;
  তুমি সঞ্চারী, আমি দিশারী।