না ফেরা বীর সন্তানেরা!
-সিফাত আহমেদ
চারিদিকে আজ বিজয়ের উল্লাস!
সোনার বাংলা আজ সেজে উঠেছে লাল সবুজে!
চারিদিকে সুরযন্ত্রে, বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছনায়
বাতাসে বিজয় উন্মাদনার আলোড়ন তুলে বেজে চলেছে বিজয়ের গান!
দরদভরা কণ্ঠে, চেতনায় ভরপুর কবিতা আবৃত্তি করছে শহীদ পরিবারের সুসন্তান!
স্বাধীন বাংলায় স্বাধীনতার সৌভাগ্য নিয়ে জন্ম নেয়া উত্তরসূরীরা
আজ প্রতীকী আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে মুখরিত করে রেখেছে বাংলার রাজপথ!
বিজয়ের বর্ষপূর্তীতে বিজয়ীর বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধীর রক্তধারণকারীরা!
দিনভর কর্মসূচীর চাপে ব্যস্ত স্বাধীন বাংলার জননেতা
সময় পাচ্ছেনা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মাকে দু'মুঠো ভিক্ষা দিতে!
বিজয়ের দিনটি যে আজও অনেকের জন্য অশ্রুভেজা দিন!
ইতিহাসের সে গৌরবোজ্জ্বল দিনে বিজয় কেতন উড়িয়ে;
জীর্ণ- শীর্ণ, নির্ঘুম- ক্লান্ত শরীরে ইতিহাসের পাতায়
এক মহাকাব্য রচনা করে ফিরেছিলো বহু বীর সন্তান!
জন্মদাত্রী মাকে রেখে মাতৃভূমি মায়ের জন্য জীবন বাজি রাখা দামাল ছেলেদের
অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটানো বৃদ্ধা মায়েরা
তাদের সন্তানদের সেদিন বুকে জড়িয়ে আনন্দশ্রু বিসর্জন দিয়েছিল!
ছল ছল চোখে স্ত্রী, প্রিয় স্বামীকে ফিরে পেয়ে খুঁজে পেয়েছিলো বেঁচে থাকার অবলম্বন!
সন্তানেরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় অস্ফুষ্ট স্বরে ডেকেছিল "বাবা!"
সেদিন ইতিহাসের পান্ডুলীপিতে বাংলার অনেক বীর সৈনিকের
অজস্র বীর গাঁথা রচিত হলেও
বহু সৈনিকের আত্নত্যাগের করুণ কাহিনী লিখা হয়নি কোন ছিন্ন পাতায়!
বিজয়ের ঘোষণা এলে গাঁয়ে
আশায় বুক বাঁধতে থাকে মুক্তিসেনার পরিবার!
এতগুলো মাস অপেক্ষায় থাকা মায়ের ভ্রম হয়!
এই বুঝি খোকা এলো!
দুপুরে কর্মক্লান্ত কৃষকের বাড়ি ফেরার ডাকের মতো শব্দ শোনা যায়!
এই বুঝি ডাক দিলো সখিনার বাপ!
খবর শুনে না বুঝে ছোট্ট মনু ছুট লাগালো বাবাকে খুঁজে আনতে!
না! না।
ফিরে আসেনি বহু শহীদ তার দুঃখিনী মায়ের বুকে!
অসহায় স্ত্রী ফিরে পায়নি তার প্রিয় স্বামীকে!
অবুঝ সন্তানেরা পিতার আদর থেকে হয়ে যায় চিরবঞ্চিত!
বুকের উষ্ন রক্তিম কালিতে তারা লিখে গিয়েছিল স্বাধীনতার সার্বভৌম জন্মগাঁথা!
দিন কেটে যায়, মাস পেরিয়ে যায়, বছর বিদায় নিয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়..
যুদ্ধের বিনিদ্র রজনীগুলোতে দেশের জন্য ঝাপিয়ে পড়া,
প্রাণভয় উৎসর্গকারী দুঃসাহসী মুক্তিসেনাদের
ঘরে ফেরার আশাও ফুরিয়ে যায়!
শহীদ জননীর চোখের অশ্রু শুকিয়ে যায়!
সন্তানশূণ্য বুক নিয়ে বৃদ্ধা দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যায়!
শহীদের স্ত্রীর সংসার চালানোর সামর্থ্যটুকু হারিয়ে যায়!
পিতৃহারা সন্তানদের দুরন্ত শৈশব মুছে যায়!
আবার কিছু বীর মুক্তিসেনা ঠিকই ফিরে আসে!
কিন্তু জীবন্ত বোঝা হয়ে!
এ স্বাধীন দেশ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারেনি!
ভিক্ষার ঝুলি ও চরম অবহেলা দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ত্যাগের প্রতিদান দিয়েছে!
মানবেতর জীবন কাটিয়ে কত মুক্তিযোদ্ধা আফসোস করে তার বেঁচে থাকার উপর!
স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধ শতাব্দি পূর্ণ হবার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে
বিজয়ের চেতনায় উজ্জীবিত হবার কথা উচ্চারিত হয় আজ সবার মুখে মুখে!
কিন্তু প্রিয়জন হারানো সেসব পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি তো কেউ কোনদিন!
আবেগ জড়ানো বুলি আর দুর্বার বিজয় উল্লাসের আড়ালে চাপা পড়ে মিশে যায়
আজও প্রিয়জন হারানো হাজারো স্বজনের অব্যক্ত বেদনার সুর!