শিফা, আজ ঈদ!
উৎসব এলে কষ্ট আসে, আমার ইচ্ছে ঘুরি আকাশ খুঁজে,
ডানা মেলে উড়তে চায় আকাশের সবচেয়ে উচুতে,
অতীত ঘুরে, নতুন করে, সব ভোলানোর গল্প নিয়ে,
আজ আবার একটা ঈদ এসেছে দুর্ভিক্ষের দুয়ার ঠেলে।
সারা রাত কবিতার টেবিলে নির্ঘুম রাত্রি,
তুমি বলতে, আর কতো? এবার ঘুমোও গিয়ে,
নামাজে যেতে হবে না? আদর করে, ভালোবেসে,
পিছন থেকে গলা জড়িয়ে,
এবার ঘুমোও সকাল হলে কত পরিশ্রম হবে তোমার
বেশী রাত করে ঘুমালে, শরীর খারাপ করবে তো।
নির্ঘুম রাত্রি এখন আমার শয্যা সঙ্গী , আমার পাশেই শোয়,
ঘুমুতে দেয়না আমাকে, বুভুক্ষু অতীত কিলবিলে নখে
বিলি কাটে মগজের গভীরে, শিফা, অসুস্থ হই আমি এখনও,
জ্বরের ঘোরে, তোমার বাহু খুঁজি, স্পর্শ খুঁজি তোমার নরম
তুলতুলে হাতের, দেয়ালে তোমার ছবিটা এখন নেই, রাখনি তুমি।
কিন্তু সেখানে যে দাগটা ছিলো, তেমনি আছে,
সেই আমার ঘোর কাটায়, তুমি নেই বুঝিয়ে দেয়।
শিফা জানো, আজ ঈদ! কোরবানির ঈদ!
আমি তো অনেক আগেই কোরবানি হয়ে গেছি,
তোমার কসাই স্মৃতিরা আমার চামড়া ছারায় তীক্ষ্ণ নখে।
স্বপ্ন গুলো ভিখারির রক্ত মাখা থালার মতো প্রতীক্ষায় থাকে
দু-এক টুকরো গোস্তের প্রতীক্ষায়;
সময় আসে সময় যায়, এর শেষ কোথায়, ফেরিওয়ালা দরজায়
করা নেরে ক্লান্ত, চলে যায়, শেষ বিকেলের আলো;
শিফা, তোমাকে যে পাগলের গল্প বলেছিলাম, মনে আছে তোমার?
পাগল, সে ঠিক পাগল নয়, প্রেমিক সে!
কোনো এক বালিকার ছন্দময় ছলনায়, না না ছলনা নয়, প্রত্যাখ্যান,
কেরে নিয়েছে তার নির্মল বসন্ত, ছিপ ছিপে শরীরে যুগান্তরের দুর্গন্ধ,
শতাব্দীর জমানো শ্যাওলা পড়া দাঁত, কিন্তু হাসি টা কেরে নিতে ভুলে গেছে
হয়তো; আজকাল আমিও পাগল হয়ে যাচ্ছি একটু একটু করে;
ছবি আঁকতে আঁকতে, কবিতা লিখতে লিখতে, ভুলে যাই দিন না রাত্রি।
মনে আছে শিফা তোমার? আমাদের কাটানো সেই সতেজ স্বপ্নময় দিনগুলির কথা?
প্রতিদিন তোমার সদ্য ভেজা চুলে আমার কপালে তোমার চুম্বন রেখা,
ভেজা চুলের গন্ধে, ঘুম ভাঙ্গতো আমার, একটা চুম্বনের বিনিময়ে
হাজার চুম্বন ফিরিয়ে দিতাম তোমার সদ্য ভেজা শরীরের ভাঁজে ভাঁজে,
ভেজা এলো চুলে আয়নাকে তোমার দর্শন দেয়া, তোমার সাদা পিঠে
আমার উন্মত্ত চুম্বন, তোমার শিউরে ওঠা, সকলই আজ ঝাপসা অতীত।
কতদিন আয়না দেখা হয়না, দেখা হয়না নিজেকে,
আমি জানি শিফা, তোমার ঈদের আনন্দ আজও দুরন্ত শৈশব,
আমার সময়ের শরীরে অগুনিত অসুখ পোকার বাস,
ক্ষুধা আমায় খাচ্ছে নিয়মিত, ব্যবহারের অপেক্ষায়, রান্নাঘর,
শুন্য গর্ভ ফ্রিজ, শুন্য প্লেট, গ্লাস করুন চেয়ে থাকে,
শিফা জানি তুমি এমুখো হবেনা কখনো,
হয়তো আমার কবিতার টেবিলে বা ইজেলের সামনে
অনেক দিনের গলে যাওয়া, পোঁচে যাওয়া লাশের গন্ধ তুমি পাবেনা,
কারণ আমার বাড়িতে দখিনা বাতাস বয় তুমি থাকো উত্তরে,
যদি তোমার কার্নিশে কাঁক ডাকে, মধ্যরাতে গলির মোরের কুকুরগুলো
কান্না করে, তাহলে বুঝে নিও, আমার শরীরের মাঝে তুমি নেই,
আনন্দে হলেও এক ফোটা চোখের জল আমাকে দিও।
আবার যখন ঈদ আসবে সব ভোলানোর বার্তা নিয়ে,
ভুলেই যেও, আলতো পায়ে পাশ কাটিয়ে চলেই যেও,
যেভাবে গিয়েছো পাঁচ বছর আগের এক ঈদের দিনে!