হে বিবেক! তুমি জাগ্রত হও,
কি করে তুমি আজো ঘুমন্ত রও!
রক্তের দুর্গন্ধে বাতাসে দূষিত অক্সিজেন,
নাফ নদীতে খণ্ডিত লাশের গড়াগড়ি,
রক্তের রঙে রঞ্জিত জলকেলি,
বিমর্ষ-বিকৃত অসুস্থ চিন্তার ফসল হেন।
মানবতার আজ চরম বিপর্যয়,
কি করে সে দৃশ্য মানুষেরা সয়!
হে বিবেক! তুমি জাগ্রত হও, জাগ্রত হও,
হে লাঞ্ছিত মানবতা! তুমি সোচ্চার হও, সোচ্চার হও।
                  *         *           *       *
নির্মমতা কি? নিষ্ঠুরতা কি? বর্বরতা কি?
আমি পৃথিবীর বুকে কখনো তা দেখিনি।
শুধু দেখেছি-
কোলজোড়ানো দুগ্ধ শিশুকে দ্বি-খণ্ডিত করার সহাস্য উল্লাস,
শুধু দেখেছি-
ক্ষত-বিক্ষত, টুকরা টুকরা ধর্ষিতা নারীর লাশ।
শুধু দেখেছি-
জ্যান্ত মানুষ জবাই করার কদর্প বাস্তবতা,
আগুনের লেলিহান শিখায় জ্যান্ত মানব পুড়ানোর ভয়াবহতা।
দেখেছি-
বাবা-মাকে কতল পরে অবুঝ বোনের কাঁধে অনুজের দায় ঝুলানো,
দেখেছি-
স্বজন হারানোর চাপা কষ্ট আর হাহাকার মিশে বক্ষ ছিদ্রে লাভা-রুপে শোণিতের ধারা ঝরানো।
আমি দেখেছি-
রক্তস্নাত অবুঝ শিশুর ক্ষুধাতুর করুণ চোখ,
কচিমুখে কপোল স্নাত নয়নের জলে ভাসছে প্রিয়জন হারানোর কদাকার রুপ।

অপাঙক্তেয় এ দৃশ্য দেখে দেখে-
চোখের জলে মনের ভুলে কখন বেদনার অশ্রুতে ছেয়েছে বুক,
ভাবার সময় পাইনি, শুধু অপলক নেত্রে দেখছি চেয়ে-
একের পর এক নিগৃহীত  কচি কচি করুণ মুখ।

নিষ্ঠুরতা কি? নির্মমতা কি? নিষ্পেষণ কি?
আমি পৃথিবীর বুকে কখনো তা দেখিনি।
আমি শুধু দেখেছি-
চাকু দিয়ে কষিয়ে কষিয়ে মানুষের চর্ম উঠানোর বিকৃত মনুষ্যত্বের চেহারা,
দেখেছি শুধু-
পোয়াতি মাকে খণ্ড খণ্ড করে হোলি খেলার ফোয়ারা।
দেখেছি শুধু-
জোয়ান কিংবা বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে গহীন জঙ্গলে ক্রমে ক্রমে অঙ্গ ছেদনে  জানোয়ারের সুখ,
আমি দেখেছি শুধু-
কুমারী মেয়ের সতীত্ব হরণের প্রকম্পিত আর্তনাদের শিহরিত সম্ভোগ।

অসভ্যতা কি? নির্যাতন কি? অত্যাচার কি?
আমি পৃথিবীর বুকে কখনো এরুপ দেখিনি।
আমি দেখেছি-
শূলে চড়িয়ে খোঁচিয়ে খোঁচিয়ে মানুষ হত্যার দৃশ্য,
আমি দেখেছি-
আস্ত মানব পুড়িয়ে শিক কাবাব বানানোর প্রকৃষ্ট।
আমি আরো দেখেছি-
হিংস্র দানবের মতো জ্যান্ত মানুষের হাত, পা, কব্জি, পায়ের গোড়ালি, গলা কাটা এমনকি নাড়িভুঁড়ি বের করার কাণ্ড,
আমি দেখেছি-
রুপ কথার রাক্ষুসের মতো ভয়ানক পিপাসা কাতর হয়ে কুড়িয়ে কুড়িয়ে মস্তিষ্ক ছিনিয়ে ফেলে দেওয়া মানব মুণ্ড।
আমি দেখেছি-
বন-বাদাড়ে কঙ্কাল ও লাশের স্তুপ আর নাফ নদীতে লাশের কুণ্ড,
মৃতের গন্ধে বার্মার চারপাশ উদভ্রান্ত আর ওদের বাড়ি-ঘর অগ্নিতে দুস্যুরা করেছে লণ্ডভণ্ড।

অরাজকতা কি? চরমপন্থা কি? উগ্রবাদ কি?
আমি পৃথিবীর বুকে কখনো তা স্বচক্ষে দেখিনি।
আমি দেখেছি শুধু-
লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু নিরাশ্রিত স্বদেশ ত্যাগে নিরুদ্দেশ পানে ভাসাচ্ছে বুক,
আমি দেখেছি শুধু-
কাপুরুষের শক্তিব্যয়ের নিকৃষ্ট অভিশপ্ত সুখ,
আমি দেখেছি শুধু-
রাক্ষুসের পৈশাচিকতার চরম স্বার্থের ভোগ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি? মুক্তিযুদ্ধ কি?
আমি পৃথিবীর বুকে কখনো তা স্বচক্ষে দেখিনি।
শুধু দেখেছি-
সিঁড়ি গড়িয়ে উপচে আসা রোহিঙ্গাদের তাজা খুনের বেগবান স্রোতের ধারা,
শুধু দেখেছি-
মৃত মায়ের স্তন চোষা দুগ্ধ শিশুর হৃদয় বিদারক অবুঝ নাড়াচাড়া।
শুধু দেখেছি-
মা ও শিশুর এক সাথে দগ্ধ হয়ে আঙ্গার হওয়ার সকরুণ বাস্তবতা,
শুধু দেখেছি-
যুবকদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার বর্বরতা।

ওহ! দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ আজ আমার দু'চোখ,
হে প্রভু! জাগ্রত করো ঐ দানবদের বিবেক বোধ।

হে বিশ্ব বিবেক! তবুও তুমি জাগ্রত হলে না?
তবুও কি তোমার ঘুম ভাঙবে না? ভাঙবে না?
আখিঁপুট মেলে একবার দেখো,
বিশ্বের মনুষ্যত্ববোধ কোথায় হারালো?
দেখো আপন অবয়ব একবার,
তোমার অস্তিত্ব ক্রমশঃ হয়ে যাচ্ছে ভাগাড়।

হে সুবোধ বিবেক! এখনও তুমি জাগ্রত হও, জাগ্রত হও,
চিরকাল বিশ্ব মানবের মুকুটরুপে রও,
নতুবা বিশ্ব মানবতাকে নিষ্কৃতি দাও;
হে বিবেক! অবেলায় ডাকি, তবুও তুমি জাগ্রত হও, জাগ্রত হও।
                @@@
রচনাকালঃ ৩০/০৯/২০১৭ইং, শনিবার, নিজবাড়ী।