অকবির কবিতা
আমি কবি নই, কবিতা পড়ি না,
কবিতা লিখিও না কখনো।
মানুষ, প্রেম, প্রকৃতি, ভালোবাসা;
সবই আমার কাছে দূরাশা।
কারণ আমি কবি নই!
নিরব পাহাড়ের গভীরে লুকায়িত নিস্তব্ধ যন্ত্রনা,
উত্তাল সমুদ্রের নিনাদ, ঝরনার অবিরাম কান্না;
জানোয়ারের পদতলে পিষ্ঠ মানবতা;
এ সব অনুষঙ্গ নেই আমার কলমে।
কারণ আমি কবি নই, আমি অকবি!
রাজমাতার সব অনাচারের আমি করি স্তুতি;
বিত্তবানের অন্যায় অত্যাচারকে জানাই প্রণতি।
অন্তরাত্মা ভুলে গেছে দ্রোহ, প্রতিবাদের ভাষা,
কারণ আমি কবি নই, আমি রাজ অকবি, বোবা!
ডিজিটাল আইনে বন্দি হওয়া কবির আর্তনাদ,
নিপীড়িতের কান্না, ধর্ষিতার চিৎকার;
চিকিৎসা সেবা না পাওয়া মুমূর্ষের গোঙানি,
নির্যাতিত নারী ও শিশুর আহাজারি;
এ সব কিছুই হয় না আমার কর্ণগোচর।
কারণ আমি কবি নই, আমি বধির, আমি নিশাচর!
খাস জমি বরাদ্দ, রাজ-অনুদান, পদক-পদবি, যশঃ খ্যাতি, সম্মাননায় আমি লালায়িত।
আমি কবির ভাষা ভুলে যাওয়া কা-কা ডাকা কাক,
কাকের মতো রাজউচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে আছি জীবনভর।
কারণ আমি কবি নই,
আমি প্রতিনিধি দলের বিদেশ সফর সঙ্গী, আমি স্বার্থপর!
আমি ধুরন্ধর, ধান্ধাবাজ, চাটুকার চতুর পেশাজীবী;
তোষামদি, মিথ্যাবাদী; কপট ছলনায় সর্ব পটিয়সী।
আলোকিত না করে সমাজকে করি কুলষিত।
আমি পরান্নভোজী, পরজীবী
ক্ষমতার বলয়ে জেগে রই অবিরত।
কারণ আমি কবি নই, আমি ভেকধারী কবিবেশী সভাকবি ক্ষমতার পূজারী!
রাজা যায় রাজা আসে,
তাম্রলিপি পড়ে খসে,
এতে কী-বা যায় আসে।
অকবির পান্ডুলিপি শেষে,
নতুন চেতনার ফলক ঘষে,
কবি বেশে নতুন আশে,
চলে অবিরাম আপন মানসে।