তরুণ ! তুমি চাইলে পুরোনো প্রোজ্জ্বল ইতিহাসের কৃষ্ণ হরফের হলদে পাতা,
শুনতে চাইলে রক্তঝরা দিনগুলোর অসহায়ত্ব আর বীরত্বের গল্লকথা,
চাইলে স্বাধীন জন্মভূমির গর্বিত ফসলে তোমার উত্তরাধিকার।
আমি আমার পুরু কাপড়ের সার্টের নীচে
বুকের অলিন্দে লাগোয়া হুলিয়ার বিপ্লবীর মতো সংগোপনে রেখেছি আমার বাবার কালো ফ্রেমের চশমা, বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া রক্তমাখা সার্ট,
সম্ভ্রম হারানোর অন্তদহনে স্বেচ্ছামৃত বোনের সোনালী নোলক,
হত্যা লুন্ঠন ধর্ষণ আর বৈষম্য রোধে সংক্ষুব্ধ যোদ্ধা, মিছিলে মিছিলে রাজপথ কাঁপানো সুন্দর সকালের স্বপ্নচারী
দাদার দেওয়া তার ফায়ার করা বুলেটের খোসা,
যা দিয়ে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলো হানাদার ও দোসরের বুকের পাঁজর
আর তার বীরত্বের গৌরবগাথার ঝকঝকে ধাতব স্মারক।
আমি অমূল্য গুপ্তধনের মতো লালন করেছি এসব
হাজারো বিরুদ্ধ বাতাসে
--একদিন গর্বিত বুকের ফুসফুস ফুলিয়ে তোমাকে দেখাবো বলে।
তোমায় আরো দেখাতে পারি
আমার ছেঁড়া সুইটকেসে ফাইলবন্দী খণ্ডিত পেপার কাটিংএ আছে,
দাদার দর্পিত স্বপ্ন সম্ভার কিরূপে শত্রুর দখলে যাওয়া যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদের দেহে শকুনের ভোজন উৎসবের মতো লণ্ডভণ্ড করে দিল।
কামার কুমার কিষাণ জেলে--যারা সহযোদ্ধা হয়ে খাদ্য আশ্রয় আর দিয়েছিলো পথের দিশা---
তাদের অনন্ত সংকটের বেদনাহত উপাখ্যান।
কালো টাকায় গড়ে ওঠা বৈষম্যের
সুউচ্চ ইমারতের সমান্তরালে স্রোতস্বিনী ফারাক-নদী কারা টেনে দিল মানুষে মানুষে, মনে মনে।
বিপন্ন নষ্টপ্রহরে হাতে হাত রেখে করা অঙ্গিকার কিভাবে
নির্বাসনে দিলো লোভাতুর শেয়ালের পাল।
হাজার বছরের বাংলায় দুর্ভাগ্যের শৃঙ্খল ছিঁড়তে আমলার মারপ্যাঁচে উপ্ত করতে নাদেওয়া, নিবিষ্ট গবেষণায় লব্ধ বীজও রেখেছি তোমার জন্যে।
ইদানিংকার নিয়ন আলোর ঔজ্জ্বল্যে এসব তোমার প্রত্যাশার যুতসই উপজীব্য কিনা জানিনা।
তুমি চাইলে নিতে পারো আমার এই প্রিয় সংগ্রহ হার্দিক মমতায় বা ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারো পুঁতিগন্ধময় ডাস্টবিনে ঘৃণাভরা তাচ্ছিল্যে।