৮+৮+৬
আপনার বাসভূমে বন্দী, বৈষম্যের বেড়াজালে বাংলার বাঙালী,
মাতৃভাষা কেড়ে নিয়ে রোধিল মায়ের কণ্ঠ, দিল ভিন্ন বুলি।
বুকের শোনিত ঢেলে রুখিল সে জননীর ভাষার হরণ,
স্বাধীনতার অঙ্কুর বিকশিত হলো মনে, জাগে স্পন্দন।
মৃত্যু, জেল, মিথ্যা মামলা, খেদান্বিত বাংলাদেশ, রোষে ফোঁসে ছাত্র,
ঊনসত্তর উদ্বেলিত, মিছিলে পূর্ণ রাজপথ -- ওরা নয় মিত্র।
একাত্তরে কালোরাতে পিশাচ হানিল দেশ, ক্রুর অভিলাষে,
বুলেট ঝরিল  বুকে, বয়ে গেল রক্তগঙ্গা, দেশ রক্তে ভাসে।
নিলো বোনের সম্ভ্রম, নারীর সিঁথির চিহ্ন, লক্ষ লক্ষ প্রাণ,
দাউদাউ করে জ্বলে, ঘরবাড়ি গ্রামগ্রামান্তর হয়েছে শ্মশান।
নৃশংস তাণ্ডবে দহে তরুণের অন্তরাত্মা, দ্রোহের আনলে,
অনন্ত শপথ নিলো, প্রতিশোধ নিতে হবে, মিলে মুক্তিদলে।
মায়ের চরণ চুমি, কহিল, আসিব ফিরে তোমার চরণে,
কঠোর কঠিন তপে, যোদ্ধা বেশ ধরে গেল, যুদ্ধের ময়দানে।
ঝড় ঝঞ্ঝা বৃষ্টি শৈত্য, শত্রুর পাপ শিবির পদানত করে
বুলেটের স্রোত বেয়ে অনন্ত চলেছে ঝড়ে, শক্ত হাল ধরে।
যেথায় রয়েছে মুক্তি, মৃত্যু পরাধীনতার, সুখের আধার,
আগামীদের জীবন ঋজু নিষ্কণ্টক চাই, এই পণ তার।
ক্লান্তিহীন অভিযাত্রী, বন্ধু প্রিয়জন ভুলি জীবন  সপিয়া,
শোষণ জঞ্জাল ছিঁড়ে মানুষের তরে মুক্তি আনিবে বহিয়া।
গভীর নিশীথে এক, সম্মুখ সমরে গুলি তারে বিঁধে যায়,
অনন্ত বলে, থেমোনা!!! স্বাধীনতা আশে কাঁদে কোটি অসহায়।  
ফিরে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ীর দর্প নিয়ে পুষ্প সম্ভাষণে,
ফিরে না বীর অনন্ত, মায়ের অপেক্ষা বাড়ে তৃষিত নয়নে।
হাজারো প্রহর কাটে, প্রত্যাশা মায়ের মনে ফিরিবে অনন্ত,
জড়িয়ে মায়ের গলে বলিবে এসেছি ফিরে, হবে দুঃখ অন্ত।
পোহালো বছর যুগ, না ফেরার বেদনায়, শোকে মুহ্যমান
মায়ের নিভিল প্রাণ,জানিলনা কেহ এই, ব্যথার আখ্যান।